
রাজনীতির ময়দানে কখনোই নিশ্চিত কিছু নেই, কূটনীতিতেও তাই। নিজের রেকর্ড ভাঙা ও ঐতিহাসিক চীন সফরে উত্তর কোরিয়ার সর্বোচ্চ নেতা কিম জং উন এক অদ্ভুত কৌশল খেলেছেন। তিনি তার মেয়েকে সফরের সঙ্গে নিয়ে গেছেন। বিশেষজ্ঞদের মতে, এটি ইঙ্গিত দিচ্ছে যে কিম জু-এ হতে পারেন উত্তর কোরিয়ার সম্ভাব্য উত্তরসূরী।
জু-এ এর বয়স মাত্র আনুমানিক ১২ বছর। তিনি কিম জং উনের একমাত্র সন্তান, যিনি উত্তর কোরিয়ার রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যমে প্রকাশ্যে এসেছেন। গণমাধ্যম তাকে “প্রিয় কন্যা” হিসেবে উল্লেখ করে।
২০২২ সালের শেষ দিক থেকে জু-এ বাবার সঙ্গে সামরিক কুচকাওয়াজ, অস্ত্র পরীক্ষা এবং অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক অনুষ্ঠানে অংশ নিয়েছেন। দক্ষিণ কোরিয়ার বিশ্লেষকরা মনে করেন, কিম তার মেয়েকে উত্তরী হিসেবে প্রস্তুত করছেন। বিশেষ করে চীন সফরে তাকে সঙ্গে নেওয়া আন্তর্জাতিক মঞ্চে তার পরিচয় করানোর একটি বড় বার্তা।
সিউল ভিত্তিক ইউনিভার্সিটি অফ নর্থ কোরিয়ান স্টাডিজ-এর সাবেক প্রেসিডেন্ট ইয়াং মুজিন বলেন, “সম্ভবত কিম মেয়েকে চীনের নেতৃত্বের কাছে আনুষ্ঠানিকভাবে পরিচয় করিয়েছেন। কারণ চীন উত্তর কোরিয়ার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ মিত্র।”
সেজং ইনস্টিটিউটের উত্তর কোরিয়ার বিশেষজ্ঞ চং সিয়ং চ্যাং বলেন, বেইজিং রেলওয়ে স্টেশনের দৃশ্য থেকে বোঝা গেছে, জু-এ কেবল দেশে নয়, বিদেশেও উত্তর কোরিয়ার দ্বিতীয় গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। তিনি আরও বলেন, “কিম জং উন বিশ্বকে স্পষ্ট বার্তা দিচ্ছেন—এই মেয়ে হতে যাচ্ছেন তার উত্তরসূরী।”
কিম জং উনকে খুব কম বয়সে উত্তরসূরী হিসেবে মনোনীত করেছিলেন তার বাবা কিম জং ইল। তবে ২০০৮ সালে তার বাবার স্ট্রোকের আগে এই তথ্য গোপন রাখা হয়েছিল। ২০২৪ সালে দক্ষিণ কোরিয়ার জাতীয় গোয়েন্দা সংস্থা আনুষ্ঠানিকভাবে জানিয়েছে, জু-এ সম্ভবত উত্তর কোরিয়ার পরবর্তী নেতা হতে চলেছেন।
বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, রাষ্ট্রীয় গুরুত্বপূর্ণ অনুষ্ঠান ও বিদেশ সফরে সন্তানকে সঙ্গে রাখা কিম পরিবারের কৌশলগত পদক্ষেপ। এটি কিম জং ইলের পদ্ধতির ধারাবাহিকতা—যেমন, তিনি নিজের বাবা কিম ইলসুংকে উত্তরসূরী হিসেবে ১৯৮৩ সালে বেইজিং সফরে নিয়ে গিয়েছিলেন।
বিশেষজ্ঞদের মতে, জু-এ এর ক্ষেত্রেও একই ধারা চলছে, যা ভবিষ্যতে উত্তর কোরিয়ার রাজনীতিতে একটি নতুন যুগের সূচনা করতে পারে।