Image description

তীব্র সমালোচনার পরেও দক্ষিণ কোরিয়া সরকার আয়োজিত ইনফরমেশন অ্যান্ড কমিউনিকেশন (আইসিটি) প্রশিক্ষণে যাচ্ছেন বাংলা, ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতিসহ অন্যান্য বিষয়ের শিক্ষকরা। প্রশিক্ষণটিতে আইসিটি বিষয়ের শিক্ষক রয়েছেন মাত্র একজন। আগামীকাল দুপুরে থাই এয়ারওয়েজের একটি বিমানে ১০ দিনের জন্য দক্ষিণ কোরিয়া যাবেন তারা।

জানা গেছে, মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরে (মাউশি) প্রশিক্ষণ উইংয়ের পরিচালক প্রফেসর সাঈদুর রহমান, মাধ্যমিক উইংয়ের পরিচালক প্রফেসর ড. খান মইনুদ্দিন আল মাহমুদ সোহেল এবং প্রশিক্ষণ উইংয়ের সহকারী পরিচালক ড. জাহিদা বেগমের সুপারিশে প্রশিক্ষণের প্রার্থী নির্বাচন করা হয়েছে। প্রশিক্ষণে প্রফেসর সাঈদুরের স্ত্রী-কথিত শ্যালিকা এবং ভায়রাও রয়েছে। প্রশিক্ষণের নামে ‘পারিবারিক ট্রুর’ নিয়ে তীব্র সমালোচনা তৈরি হলেও এ বিষয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয় কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। ফলে মন্ত্রণালয়ের নীরব ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।

 

এ বিষয়ে জানতে শিক্ষা উপদেষ্টা অধ্যাপক সি আর আবরার, মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের সচিব রেহানা পারভীন এবং প্রশাসন ও অর্থ বিভাগের অতিরিক্ত সচিব মো. মজিবর রহমানের ব্যবহৃত নাম্বারে একাধিকবার কল দেওয়া হলেও তারা ফোন রিসিভ করেননি।

এদিকে মাউশির প্রশিক্ষণ উইংয়ের পরিচালক এবং তার স্ত্রী ঢাকা কলেজের সহযোগী অধ্যাপকের কয়েকটি ছবি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে আলোচনায় এসেছে। ছবিতে পতিত সরকারের সাবেক শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনির সঙ্গে পরিচালক প্রফেসর মো. সাঈদুর রহমান, তার স্ত্রী সহযোগী অধ্যাপক রেবেকা সুলতানা লিপি এবং তাদের সন্তানদের কেক কাটতে দেখা গেছে।

ঢাকা কলেজ সূত্রে জানা গেছে, কার্যক্রম নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগ সরকারের সাবেক শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব নেওয়ার পর ঢাকা কলেজ শিক্ষকদের সংগঠন শিক্ষক পরিষদের প্রভাবশালী নেতা রেবেকা সুলতানা লিপির বাসায় যান। লিপির ছোট মেয়ের জন্মদিন উদযাপন করতে তিনি সেখানে গিয়েছিলেন বলে কলেজের একাধিক শিক্ষক জানিয়েছেন। এ সময় প্রফেসর সাঈদুর রহমান ও রেবেকা সুলতানার বড় মেয়েও সেখানে উপস্থিত ছিলেন।

যদিও নিজের মেয়ের জন্মদিন উদযাপনের অভিযোগ অস্বীকার করেছেন সহযোগী অধ্যাপক রেবেকা সুলতানা লিপি। তিনি দ্য ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, ‘আমার স্বামী এবং আমি দুইজনই শিক্ষা ক্যাডারের কর্মকর্তা। শিক্ষা ক্যাডারের কর্মকর্তা হিসেবে শিক্ষামন্ত্রীর সঙ্গে ছবি থাকা স্বাভাবিক ব্যাপার নয় কি? আওয়ামী লীগের আমলে আমার স্বামী নানাভাবে বঞ্চিত হয়েছেন। একটি মহল আমাদের বিতর্কিত করার জন্য ছবিগুলো ভাইরাল করেছে।’ 

অনুসন্ধানে জানা গেছে, যশোরের শ্যামপুর সরকারি মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ ছিলেন প্রফেসর সাহেদ। তিনি অধ্যক্ষ থাকাকালীন ঢাকা-৪ আসনের সাবেক এমপি অ্যাডভোকেট সানজিদা খানম এবং তার মাসলম্যানরা প্রফেসর সাহেদকে বিএনপি-জামায়াত ট্যাগ দিয়ে নানাভাবে অপমান অপদস্ত করেছেন। প্রফেসর সাহেদকে সরাতে তৎকালীন শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনির কাছে অ্যাডভোকেট সানজিদা খানম সরাসরি তদবির করেন।

নাম অপ্রকাশিত রাখার শর্তে ঢাকা কলেজের এক অধ্যাপক দ্য ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, ‘প্রফেসর সাঈদুর রহমান এবং তার স্ত্রী মোটা অংকের টাকা দিয়ে সানজিদা খানম এবং দীপু মনিকে হাত করে প্রফেসর সাহেদকে শ্যামপুর মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজ থেকে সরিয়ে দেন। পরবর্তীতে সেখানে অধ্যক্ষ হিসেবে পদায়ন পান। শ্যামপুর সরকারি মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজে পদায়নের পূর্বে তিনি উত্তরবঙ্গের একটি কলেজে কর্মরত ছিলেন। সরকারি দেবেন্দ্র কলেজে অধ্যক্ষ থাকাকালীন প্রফেসর সাঈদুরের বিরুদ্ধে অনিয়মের অভিযোগে ওঠায় তাকে উত্তরবঙ্গে শাস্তিমূলক পদায়ন দেয়া হয়েছিল। তবে গুরুদণ্ডে লঘু শাস্তি হওয়ায় তিনি একই ধরনের কার্যক্রম এখনো পরিচালনা করছেন।’

এ অভিযোগের বিষয়ে জানতে মাউশির প্রশিক্ষণ উইংয়ের পরিচালক প্রফেসর সাঈদুর রহমানের মুঠোফোনে একাধিকবার কল করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।