
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচন যত ঘনিয়ে আসছে তত বাড়ছে প্রচারণার উত্তাপ। ঢাবি ক্যাম্পাস ছাড়িয়ে উত্তাপ ছড়িয়ে পড়েছে জেলা-উপজেলায়। ঢাবি শিক্ষার্থীদের বাড়ি বাড়ি যাচ্ছেন প্রার্থীদের পক্ষের কর্মীরা। চাইছেন ভোট। ফোনে কুশল বিনিময় করে চাইছেন সমর্থন।
এবারের ডাকসু নির্বাচনে বড় ফ্যাক্টর হতে পারে আঞ্চলিকতা। শিক্ষার্থীদের বিরাট অংশ আঞ্চলিকতার কারণে ভোট দেবেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। বড় ভোট ব্যাংক রয়েছে চট্টগ্রাম, সিলেট, বগুড়া ও দক্ষিণাঞ্চলের বরিশাল বিভাগে। এসব ছাড়াও প্রার্থীদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে ভোট চাইছেন তাদের সমর্থকরা। পরীক্ষা শেষে কিংবা প্রস্তুতিমূলক ছুটিতে গ্রামের বাড়িতে থাকা শিক্ষার্থীদের কাছেও পৌঁছাচ্ছে প্রচারণা। স্থানীয় বিএনপি ও ছাত্রদল নেতারা ঢাবির শিক্ষার্থী আবিদুর রহমান খানের জন্য সক্রিয়ভাবে ভোট চাইছেন।
এদিকে প্রচারণার পাশাপাশি হুমকি-ধমকির অভিযোগও উঠেছে। এক সংবাদ সম্মেলনে এসএম ফরহাদ অভিযোগ করে বলেন, আমাদের নারী প্রার্থী (ফাতেমা তাসনিম জুমা)-এর বাড়িতে গিয়ে তার বাবা-মাকে হুমকি দিয়েছে স্থানীয় বিএনপি নেতারা। তাদের বলা হয়েছে, তোমার মেয়ে কেন ছাত্রদলের বিরুদ্ধে কথা বলে? এসব করতে থাকলে তার সরকারি চাকরি হবে না।
তৃণমূলে ডাকসুকে ঘিরে এমন উত্তেজনার বিষয়ে একাধিক এলাকার ভোটারের সঙ্গে কথা হয়েছে প্রতিবেদকের। জয়পুরহাটের শিক্ষার্থী মাহফুজুল আলম অনিক বলেন, এলাকার বৃদ্ধদের তুলনায় আমাদের সমবয়সীদের আগ্রহটা তুলনামূলক বেশি। কে কোন দল থেকে ডাকসু নির্বাচনে লড়ছে, দলীয় ট্যাগযুক্ত ছাত্র রাজনীতির চর্চা কতোটুকু যৌক্তিকতা নিয়েও প্রশ্ন আছে। অনেকে ইশতেহারের ভিত্তিতে ভিপি বেছে নিতে চান। আবার কেউ কেউ পার্লামেন্ট নির্বাচনের সঙ্গে ডাকসুর তুলনা করছেন। তাদের কথা, এই নির্বাচনের ফলাফলে হয়তো দেশের পরবর্তী শাসনক্ষমতার দিক-নির্দেশনাও বোঝা যাবে।
পাবনার মুশফিকা বিনতে কামাল বলেন, এটাকে আমি ইতিবাচকভাবেই দেখছি। কারণ নিজের বিশ্ববিদ্যালয়ের একটা নির্বাচন নিয়ে দেশের তৃণমূল পর্যন্ত এতটা আগ্রহ দেখে ভালো লাগছে। মনে হচ্ছে- ডাকসু শুধু শিক্ষার্থীদের জন্য নয়, বরং পুরো জাতির জন্য। আমার কাছে স্থানীয়ভাবে ছাত্রদল ও শিবির দুই পক্ষ থেকেই ভোট চাওয়া হয়েছে।
কুমিল্লার মেহেদি ইকবাল মাহি বলেন, ছাত্রসংগঠনগুলো যেহেতু ঢাবি থেকে রাজনীতির প্রসার ঘটায়, তাই সব ইউনিটের আগ্রহও সীমাহীন। এক যুগ পর এটাই প্রথম সুষ্ঠু নির্বাচন হতে যাচ্ছে, আর যেহেতু এটা ঢাবিতে হচ্ছে- সব রাজনৈতিক দলই নিজেদের শক্তি প্রদর্শন করতে চাইছে। আমাদের এলাকায়ও রাজনৈতিক দলের লোকজন বাড়ি পর্যন্ত এসে ভোট চাইছে। ডাকসুর প্রতি মানুষের আগ্রহ ঢাবি’র প্রতি আশা-ভরসার প্রতীক।
প্রসঙ্গত, ডাকসু ও হল সংসদ নির্বাচন ৯ই সেপ্টেম্বর অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ নির্বাচনে ৫০৯ জন প্রার্থীর মধ্যে সহ-সভাপতি (ভিপি) পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন ৪৫ জন। সর্বশেষ প্রকাশিত চূড়ান্ত ভোটার তালিকায় নাম রয়েছে ৩৯ হাজার ৬৩৯ জন শিক্ষার্থীর। এবারের ডাকসু নির্বাচনে ভোটকেন্দ্র থাকবে ৮টি এবং বুথ সংখ্যা ৭১০।