সময় যত গড়াচ্ছে, নির্বাচনের দাবিতে সরব হচ্ছে রাজনৈতিক দলগুলো। অন্তর্বর্তী সরকার কত দিন দায়িত্ব পালন করবে, রাষ্ট্রের প্রয়োজনীয় সংস্কার কবে নাগাদ সম্পন্ন হবে, কবে নির্বাচনের মাধ্যমে দেশে রাজনৈতিক সরকার প্রতিষ্ঠা হবে—এ প্রশ্ন এখন সবার।
নির্বাচন প্রসঙ্গে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু গতকাল কালের কণ্ঠকে বলেন, নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য করতে যতটুকু সংস্কার প্রয়োজন, সেই কাজ সম্পন্ন করে নির্বাচন দিতে হবে। এই কাজ করতে বেশি সময় লাগার কথা নয়।
টুকু বলেন, দেশে এখন নানা সংকট চলছে। দ্রব্যমূল্য বাড়ছে।
গত ১১ জানুয়ারি সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে এবি পার্টির জাতীয় কাউন্সিলে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘আমরা অন্তর্বর্তী সরকারেই সমর্থন করছি।
গতকাল রাজধানীর মগবাজারে নিজ দলের কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টির (এলডিপি) প্রেসিডেন্ট ডক্টর কর্নেল (অব.) অলি আহমদ বীরবিক্রম বলেন, ‘অন্তর্বর্তী সরকার জনগণের প্রত্যাশা পূরণ করতে ব্যর্থ হয়েছে।
তিনি আরো বলেন, ‘আমরা সংস্কার চাই। তবে সংস্কারের কোনো আলামত দেখছি না। ছয় মাসে কোনো দুর্নীতিবাজ লুটেরাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে দেখিনি। আশানুরূপ সংস্কারকাজে অগ্রগতি না হওয়ায় জাতি হতাশ। জাতি অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে অনেক কিছু আশা করেছিল। আমি মনে করি, তারা অপারগ। তাদের সেই দক্ষতা, অভিজ্ঞতা ও কর্মস্পৃহা নেই। এভাবে চলতে থাকলে বর্তমান সরকার জনরোষে পড়বে। বর্তমান সরকারের উপদেষ্টারা ঠিকমতো তাঁদের দায়িত্ব পালন করছেন না। রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় নতুন রাজনৈতিক দল গঠনের চেষ্টা চলছে।’
গত ৩ জানুয়ারি নাটোর শহরের নবাব সিরাজউদ্দৌলা সরকারি কলেজ মাঠে জামায়াতের জেলা শাখা আয়োজিত কর্মী সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে জামায়াতে ইসলামীর আমির শফিকুর রহমান বলেন, ‘আমরা চাই, অতি জরুরি সংস্কারগুলো সাধন করে বর্তমান সরকার একটি সুষ্ঠু নির্বাচন দিয়ে তাঁরা যাঁর যাঁর জায়গায় চলে যান। এই নির্বাচনে জনগণ যাঁকে ভালোবাসেন, যাঁর ওপরে আস্থা রাখতে পারবেন, যাঁদের দেশের দায়িত্বটা দিলে দেশের মানুষকে সম্মান করবেন, ভালোবাসবেন, তাঁদের বেছে নেবেন। দেশের মানুষের আমানত যাঁরা শ্বশুরবাড়ির নিয়ামত মনে করবেন না, প্রতিটি আমানতের পাই পাই করে হিসাব রাখবেন, তাঁদেরই তাঁরা বেছে নেবেন।’
সরকার চাইলে চলতি বছরের মধ্যে নির্বাচন আয়োজন সম্ভব বলে মনে করেন বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক ও গণতন্ত্র মঞ্চের সমন্বয়ক সাইফুল হক। তিনি কালের কণ্ঠকে বলেন, এরই মধ্যে সরকার নির্বাচনের বিষয়ে একটি ধারণা দিয়েছেন। চলতি বছরেই নির্বাচন হচ্ছে বলে আশা করা যায়। তবে গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের জন্য রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে ঐকমত্য প্রয়োজন। সংস্কার কমিশনগুলো প্রতিবেদন দেওয়ার পর দ্রুততার সঙ্গে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনায় বসতে হবে। যেসব বিষয়ে মতবিরোধ আছে, সেগুলো বাইরে রেখে ন্যূনতম ঐকমত্যের ভিত্তিতে নির্বাচনের প্রস্তুতি নিতে হবে। এ জন্য রাজনৈতিক দলগুলোকে আস্থায় নিয়ে নির্বাচনের সুনির্দিষ্ট রোডম্যাপ ঘোষণা করতে হবে।
বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি) সাধারণ সম্পাদক ও বাম গণতান্ত্রিক জোটের অন্যতম শীর্ষ নেতা রুহিন হোসেন প্রিন্স বলেন, সংস্কার এবং সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের লক্ষ্যে সংস্কার কমিশনগুলো কাজ করছে। সংস্কার কমিশনে যাঁরা কাজ করছেন, তাঁদের সঙ্গে কতগুলো বিষয়ে ঐকমত্য আছে। নির্বাচনকালীন তদারকি সরকার, নির্বাচন কমিশনকে স্বাধীন ও শক্তিশালী হিসেবে গড়ে তোলা এবং নির্বাচনকে কালো টাকা, পেশিশক্তি ও সাম্প্রদায়িকতামুক্ত করার মতো বিষয়গুলো সংস্কার প্রস্তাবে থাকবে আশা করি। প্রস্তাবগুলো নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মতামতের ভিত্তিতে অন্তর্বর্তী সরকার দ্রুত নির্বাচনের দিকে যাবে বলে আমরা আশা করছি।
এদিকে নির্বাচনী মাঠে বরাবরই তৎপর ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ এখনো সংখ্যানুপাতিক (পিআর) পদ্ধতিতে নির্বাচনের দাবিতে অটল। গত ১১ জানুয়ারি বরিশাল মহানগর সম্মেলনে দলের আমির সৈয়দ মুহাম্মদ রেজাউল করিম বলেন, ‘আমরা একটি টেকসই সমাধান চাই, আমাদের আকাঙ্ক্ষার বাস্তবায়ন চাই। এ জন্য আগামী নির্বাচন হতে হবে সংখ্যানুপাতিক (পিআর) পদ্ধতিতে।’