
প্রবীণ আইনজীবী ও গণফোরামের প্রতিষ্ঠাতা ড. কামাল হোসেনের নাম বিক্রি করে মঞ্চ ৭১ নামের সংগঠনটির নেতারা জাতির সঙ্গে প্রতারণা করছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। ড. কামাল হোসেনের পরিবারের দাবি তার সঙ্গে কথা না বলেই মুক্তিযোদ্ধাদের নামে হঠাৎ গজিয়ে ওঠা এ সংগঠনটি তাকে জড়িয়ে একের পর এক বিতর্কিত কর্মকাণ্ড করে চলছে। তাদের এমন কর্মকাণ্ডের সঙ্গে ড. কামাল হোসেনের দূরতম সম্পর্কও নেই। আর গণফোরাম জানিয়েছে, মঞ্চ ৭১ নামে যে সংগঠনটি ড. কামাল হোসেনের নাম ব্যবহার করে জনমতে বিভ্রান্তি ছড়িয়েছে তার সাথে ড. কামাল হোসেন বা গণফোরামের কোনো সম্পৃক্ততা নেই।
মঞ্চ ৭১, হঠাৎ গজিয়ে ওঠা এক সংগঠন
মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মান রক্ষার দাবি নিয়ে গত ৫ আগস্ট ‘মঞ্চ ৭১’ নাম দিয়ে একটি সংগঠনের জন্ম দেন সুপ্রিমকোর্টের আইনজীবী জহিরুল ইসলাম (জেড আই) খান পান্না ও অধ্যাপক আবদুল্লাহ আল মাহমুদ। ওইদিন এক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে এ সংগঠনের আত্মপ্রকাশের কথা জানান তারা।
গত ১৫ আগস্ট ড. কামাল হোসেনের নাম জড়িয়ে ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে ফুল দেওয়ার কর্মসূচি পালনের ঘোষণা দেন অ্যাডভোকেট পান্না। ওইদিনের কর্মসূচিতে ড. কামাল হোসেন যাননি। এ বিষয়টি নিয়ে তার পরিবারের সঙ্গে কথা বলে আমার দেশ। ড. কামাল হোসেনের ব্যক্তগত সহকারী আমার দেশকে জানান, ১৫ আগস্টের কর্মসূচি তো দূরের কথা কোনো অনুষ্ঠানেই স্যার এখন যাওয়ার মতো অবস্থায় নেই। তিনি গুরুতর অসুস্থ। তাছাড়া কেউ তাকে এমন কোনো অনুষ্ঠানে যাওয়ার জন্য আমন্ত্রণ জানায়নি। তিনিও কাউকে এমন কোনো অনুষ্ঠানে যাবেন বলে প্রতিশ্রুতি দেননি।
১৫ আগস্টের কর্মসূচি নিয়ে জেডআই খান পান্না তিনবার ফেসবুকে লিখেন। প্রথমে তিনি নিজেকে গৃহবন্দি হিসেবে প্রচার করেন। তাৎক্ষণিকভাবে পুলিশ প্রশাসনের পক্ষ থেকে তার এমন দাবিকে মিথ্যা ও গুজব হিসেবে জানানো হলে তিনি দ্বিতীয় দফায় ফেসবুকে পোস্ট দিয়ে বলেন, আমাকে পুলিশ বা অন্য কেউ বন্দি করেনি। আমাকে আমার ছেলে-মেয়েরা ঘর থেকে বের হতে দিচ্ছে না।
ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির অনুষ্ঠান নিয়ে বিতর্ক
২৮ আগস্ট বৃহস্পতিবার ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি মিলনায়তনে ‘সংবিধান ও মুক্তিযোদ্ধা’দের সম্মান ক্ষুন্ন হচ্ছে এমন দাবি তুলে সভার আয়োজান করে মঞ্চ ৭১। এতে ড. কামাল হোসেন প্রধান অতিথি হিসেবে থাকবেন বলে ঘোষণা দেওয়া হয়। অনুষ্ঠানের ব্যানারেও প্রধান অতিথি হিসেবে ড. কামাল হোসেনের নাম উল্লেখ করা হয়। তবে অনুষ্ঠানের আয়োজন করে আয়োজক জেডআই খান পান্না নিজেই আসেননি।
হাসিনার কাছে অস্ত্র চেয়েছিলেন তারা
ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মুখে গত বছর ৫ আগস্ট দেশ ছেড়ে পালিয়ে ভারতে গিয়ে আশ্রয় নেন ফ্যাসিস্ট হাসিনা। এর দুদিন আগে ৩ আগস্ট রাজধানীর মোহাম্মদপুরে মুক্তিযোদ্ধাদের ব্যানারে সমাবেশ করে ছাত্র-জনতাকে দমাতে হাসিনার কাছে অস্ত্র চেয়েছিলেন এসব ব্যক্তি। ওইদিনের সংবাদমাধ্যমে এমন খবর গুরুত্বের সঙ্গে প্রকাশ করে। এরাই এখন মঞ্চ ৭১ নামের সংগঠনের পেছনের কারিগর।
ওইদিনের সমাবেশে তারা বলেছিলেন, ‘মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আমাদের হাতে অস্ত্র দিন। আমরা আবারও ১৯৭১ সালের মতো যুদ্ধে নামতে চাই। দেশের প্রতিটি থানা, ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে মুক্তিযোদ্ধা এবং মুক্তিযোদ্ধার সন্তানরা আওয়ামী লীগের সঙ্গে মাঠে থাকবে।’
সমাবেশ থেকে হাসিনার পাশে থাকার ঘোষণা দিয়ে তারা আরো বলেছিলেন, ‘আমরা ১৯৭১ সালে যুদ্ধ করে বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে দেশকে স্বাধীন করেছি। সেই সময় আবার এসে গেছে। আবারো এই দেশে হাসিনার পাশে দাঁড়াতে মুক্তিযোদ্ধাদের প্রয়োজন হয়েছে।’
মুক্তিযোদ্ধাদের ওই সমাবেশে বক্তব্য রেখেছিলেন সাবেক সেনা প্রধান ও বীর মুক্তিযোদ্ধা জেনারেল (অব.) হারুনুর রশীদ (বীর প্রতীক), যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা ও মুক্তিযোদ্ধা টাওয়ার-এর সভাপতি বাহার উদ্দিন রেজা (বীর প্রতীক), সাধারণ সম্পাদক আবু শহীদ বিল্লাহ বকুল, শফিকুল বাহার মজুমদার টিপু, নাজির আহমেদ চৌধূরী মাকসুদ, মুক্তিযোদ্ধা সন্তান সংগঠনের সভাপতি হুমায়ন কবির, শরিফ উদ্দিন জয়, সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম নয়ন, কাওসার আহমেদ ভূইয়া।
ড. কামালের নাম ব্যবহার করায় গণফোরামের প্রতিবাদ
২৮ আগস্ট রাতে সংবাদপত্রে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, ‘মঞ্চ ৭১ নামে একটি সংগঠন তাদের ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি মিলনায়তনের সেমিনারের ব্যানারে অনুমতি ছাড়া গণফোরামের প্রতিষ্ঠাতা ও ইমেরিটাস সভাপতি ড. কামাল হোসেনের নাম ব্যবহার করায় গণফোরামের কেন্দ্রীয় সভাপতি ও সিনিয়র আইনজীবী সুব্রত চৌধুরী ও সাধারণ সম্পাদক ডা. মিজানুর রহমান প্রতিবাদ জানিয়েছেন।’
বিজ্ঞপ্তিতে আরো বলা হয়েছে, গণফোরাম নেতৃবৃন্দ ‘মঞ্চ ৭১’ নামে যে সংগঠন ড. কামাল হোসেনের নাম ব্যবহার করে জনমনে বিভ্রান্তি ছড়িয়েছে, তার সাথে ড. কামাল হোসেন বা গণফোরামের কোনো সম্পৃক্ততা নেই।
অনুমতি ছাড়া ড. কামাল হোসেনের নাম ব্যবহার করে কর্মসূচি ঘোষণার বিষয়ে জানতে ফোন করা হয় অ্যাডভোকেট পান্নার মুঠোফোনে। তিনি ফোন রিসিভ করেননি। এ বিষয়ে বক্তব্য নিতে ম্যাসেজ দিলেও তিনি জবাব দেননি।