Image description

ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ঘিরে ভোটের হাওয়া বইছে দক্ষিণ-পশ্চিমের সীমান্তবর্তী জেলা চুয়াডাঙ্গায়। জেলার দুটি আসনে কে হচ্ছেন কোন দলের প্রার্থী, সে আলোচনাই চলছে। জামায়াতে ইসলামী, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ ও এনসিপিসহ অন্য দলগুলো প্রার্থী চূড়ান্ত করলেও গোল বেঁধেছে, বিপত্তি দেখা দিয়েছে বিএনপিতে। বিশেষ করে চুয়াডাঙ্গা-১ আসনে বিএনপির প্রার্থীজট দেখা দিয়েছে।

যে যার মতো করে দলের হাইকমান্ডের সঙ্গে লবিংয়ে ব্যস্ত। আবার কেউ কেউ স্থানীয়ভাবেও নেতাকর্মীদের সঙ্গে নিয়ে নিজের অবস্থান জানান দিচ্ছেন। ভোটযুদ্ধের আগে মনোনয়ন যুদ্ধে নেমেছেন তাঁরা। মনোনয়ন দৌড়ে এগিয়ে রয়েছেন বিএনপির কেন্দ্রীয় ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু ও জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক শরীফুজ্জামান।
 
তবে এর উল্টোচিত্র চুয়াডাঙ্গা-২ আসনে। আসনটিতে বিএনপির একাধিক মনোনয়নপ্রত্যাশী না থাকায় অনেকটাই খোশ মেজাজে রয়েছেন জেলা বিএনপির সভাপতি ও বিজিএমইএর প্রেসিডেন্ট মাহমুদ হাসান খান বাবু। তবে এই আসনে ছাড় দিতে রাজি নন জামায়াতের প্রার্থীও। ফলে এই আসনে একসময়ের মিত্র দল বিএনপি-জামায়াতের প্রার্থীর মধ্যে হাড্ডাহাড্ডি ভোটযুদ্ধের আভাস মিলছে।

নির্বাচন চুয়াডাঙ্গা-১ : সদরের অনেকাংশ ও আলমডাঙ্গা উপজেলা নিয়ে গঠিত চুয়াডাঙ্গা-১ আসন। ১৯৭৯ থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত কখনো জয় পায়নি আওয়ামী লীগ। প্রতিটি নির্বাচনেই ধানের শীষের প্রার্থীরা হেসে-খেলে জয় তুলেছেন নিজেদের ঘরে। কিন্তু ২০০৮ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী জয়লাভ করায় বিএনপির হাতছাড়া হয় এই ঘাঁটি। ত্রয়োদশ নির্বাচন ঘিরে দুর্গ পুনরুদ্ধারে বেশ এগিয়েছে দলটি।

 
তবে বিপত্তি দেখা দিয়েছে বিএনপির একাধিক মনোনয়নপ্রত্যাশী নিয়ে। বিশেষ করে এই আসনে কেন্দ্রীয় ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু ও জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক শরীফুজ্জামানের মধ্যে মনোনয়ন বাগানোর লড়াই চলছে। শামসুজ্জামান দুদুর দীর্ঘ রাজনৈতিক অভিজ্ঞতা ও শরীফুজ্জামানের স্থানীয় সাংগঠনিক দক্ষতায় কে পাবেন দলীয় টিকিট, তা-ই এখন আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু। এর বাইরেও বিএনপি থেকে জেলা বিএনপির সাবেক আহ্বায়ক কমিটির সদস্য লে. কর্নেল (অব.) সৈয়দ কামরুজ্জামান, জেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক মীর্জা ফরিদুল ইসলাম শিপলু ও সাবেক এমপির কন্যা কৃষকদলের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য মিলিমা ইসলাম বিশ্বাস চান দলীয় মনোনয়ন। এ ছাড়া এই আসন থেকে জামায়াতের প্রার্থী জেলা জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি অ্যাডভোকেট মাসুদ পারভেজ রাসেল। তিনিও চালিয়ে যাচ্ছেন জোর প্রচারণা।

চুয়াডাঙ্গা-১ আসনের সাবেক এমপি শামসুজ্জামান দুদু বলেন, নিজ জেলা চুয়াডাঙ্গা থেকেই নির্বাচন করতে চাই। শরীফুজ্জামান বলেন, সাংগঠনিক দক্ষতায় এবারও আমি মনোনয়ন পাব বলে প্রত্যাশা করি। লে. কর্নেল (অব.) সৈয়দ কামরুজ্জামান বলেন, ২০১০ সাল থেকে এই আসনে মাঠে কাজ করছি। মীর্জা ফরিদুল ইসলাম শিপলু বলেন, দলের সুসময়-দুঃসময়ে সর্বদা বিএনপির সঙ্গে থেকেছি।

মিলিমা ইসলাম বিশ্বাস বলেন, মনোনয়ন পেয়ে নির্বাচিত হলে চুয়াডাঙ্গার মানুষের জন্য স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করব।

অন্যদিকে জামায়াতের প্রার্থী অ্যাডভোকেট মাসুদ পারভেজ রাসেল বলেন, সুন্দর বাংলাদেশ গড়তে এই আসনের ভোটাররা দাঁড়িপাল্লাকে বেছে নেবেন। এই আসন থেকে এনসিপির কেন্দ্রীয় যুগ্ম সম্পাদক মোল্লা ফারুক এহসান, এবি পার্টির কেন্দ্রীয় যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আব্দুল্লাহ আল মামুন রানা, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের মাওলানা জহুরুল ইসলাম আজিজি, খেলাফত মজলিসের মাওলানা শফিকুল ইসলাম দলীয় প্রার্থী হিসেবে চূড়ান্ত হয়েছেন। তবে এখনো তাঁদের তৎপরতা দেখা যায়নি।

চুয়াডাঙ্গা-২ : সদর উপজেলার একাংশ, দামুড়হুদা উপজেলা ও জীবননগর উপজেলা নিয়ে গঠিত এই আসনটি। এই আসন থেকে ১৯৮৮ সালে জাতীয় পার্টি, ১৯৯১ সালে জামায়াত, ১৯৯৬ থেকে ২০০১ পর্যন্ত বিএনপির প্রার্থী জেতেন। ২০০৮ সাল থেকে আওয়ামী লীগের দখলে যায় আসনটি। এই আসনে বিএনপির পাশাপাশি জামায়াতের অবস্থান শক্ত। তাদের মধ্যে হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ের আভাস মিলছে।

বিএনপি থেকে মনোনয়ন দৌড়ে অনেকটা এগিয়ে জেলা বিএনপির সভাপতি ও বিজিএমইএর প্রেসিডেন্ট মাহমুদ হাসান খান বাবু। এই আসন থেকে জেলা বিএনপির সাবেক আহ্বায়ক কমিটির সদস্য মোখলেছুর রহমান টিপু তরফদারও মনোনয়ন চাইতে পারেন বলে শোনা যাচ্ছে। তবে অনেকটাই খোশ মেজাজে রয়েছেন জেলা বিএনপির সভাপতি মাহমুদ হাসান খান বাবু। তিনি জানান, দলের দুঃসময়ে সব নেতাকর্মীর পাশে থেকেছেন তিনি। এই আসনে জামায়াতের প্রার্থী জেলা জামায়াতের আমির অ্যাডভোকেট রুহুল আমিন। তিনি নির্বাচনী এলাকা চষে বেড়াচ্ছেন। তিনি বলেন, এবারের নির্বাচনেও জামায়াত দক্ষতা ও জনপ্রিয়তার পরিচয় দেবে।

এ ছাড়া এই আসনে ইসলামী আন্দোলনের জেলা সভাপতি হাসানুজ্জামান সজিব, খেলাফত মজলিসের খন্দকার মাওলানা ফারুক হোসেন দলীয় প্রার্থী হচ্ছেন। তবে তাঁদেরও খুব বেশি প্রচারণা দেখা যায়নি।