
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) শেখ মুজিবুর রহমান হলের হলের একটি কক্ষে গাঁজা সেবনরত অবস্থায় প্রথমবর্ষের চার শিক্ষার্থীকে আটক করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। আটককৃতদের একজন ছাত্রদলের কর্মী বলে জানা গেছে। পরে স্যার এ এফ রহমান হল শাখা ছাত্রদলের নতুন কমিটির সদস্য সচিব মো. মাহদীজ্জামান জ্যোতি ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকা কর্মীকে ছাড়াতে প্রক্টর অফিসে গিয়েছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। ছাত্রদল নেতা জ্যোতি ঢাবি শাখা ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক নাহিদুজ্জামান শিপনের আপন ছোট ভাই। পরে আটককৃতদের পরিবারকেও অবহিত না করে মানবিক বিবেচনায় মুচলেকা নিয়ে ছেড়ে দেওয়া হয়।
শনিবার (১৬ আগস্ট) বিকেলে শেখ মুজিবুর রহমান হলের পুরাতন ভবনের ১০৩ নম্বর কক্ষে এই চার শিক্ষার্থীকে গাঁজা সেবনের সময় আটক করে হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান ও অন্যান্য আবাসিক শিক্ষকরা। আটককৃতরা হলেন—বিশ্বধর্ম ও সংস্কৃতি বিভাগের আরিফ ফয়সাল, ব্যাংকিং অ্যান্ড ইন্স্যুরেন্স বিভাগের মো. সোহেল রানা, ট্যুরিজম অ্যান্ড হসপিটালিটি ম্যানেজমেন্ট বিভাগের মো. রুহুল আমিন এবং ছাপচিত্র বিভাগের ইয়ালিদ বিন সাদ। তারা সবাই ২০২৪-২৫ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী।
জানা গেছে, আটককৃত চার জনের মধ্যে বিশ্বধর্ম ও সংস্কৃতি বিভাগের শিক্ষার্থী আরিফ ফয়সাল ছিলেন ছাত্রদলের একজন সক্রিয় কর্মী। তবে তিনি নিজের মুচলেকায় যোগাযোগ বৈকল্য বিভাগের একজন শিক্ষার্থী বলে পরিচয় দেয়। তার ফেসবুক একাউন্টে ঘেঁটেও ছাত্রদলের সম্পৃক্ততার প্রমাণ পাওয়া যায়। দেখা যায় নিয়মিত ছাত্রদলের নেতাদের নিয়ে পোস্ট করতেন তিনি।
অভিযোগ উঠেছে, স্যার এ এফ রহমান হলের ছাত্রদলের সদস্য সচিব মাহদীজ্জামান জ্যোতি আটক এই শিক্ষার্থীকে ছাড়িয়ে আনতেই প্রক্টর অফিসে গিয়েছিল। তখন তিনি মুখে মাক্স পরা ছিলেন। এসময় তিনি সহকারী প্রক্টরের রুমে ১০ মিনিটের মতো অবস্থান করেছিলেন। তবে মাহদীজ্জামান জ্যোতি বিষয়টি অস্বীকার করে বলেন, ‘এ ঘটনায় প্রশাসনের সাথে আমার কোনো কথা হয়নি’। এদিকে, প্রশাসনও বলছে তাদের সাথে কোন রাজনৈতিক দলের নেতার কথা হয়নি।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক প্রত্যক্ষদর্শী বলেন, ‘আমি সেখানে যাওয়ার পরে ওদের চারজন আর সম্ভবত মুজিব হলের হাউজ টিউটররা সেখান উপস্থিত ছিলেন। সহকারী প্রক্টর তখনো রুমে আসেননি। এরপরে অভিযুক্তদের কাছে তাদের সেশনের ও তাদের ইমিডিয়েট সিনিয়র সেশনের কয়েকজন ছাত্র ধীরে ধীরে উপস্থিত হতে থাকে। একসময় সহকারী প্রক্টর আসলে তার রুমে অভিযুক্ত, হাউজ টিউটর এবং ঘটনার সাথে সংশ্লিষ্ট কিছু শিক্ষার্থী থাকেন। এর কিছুক্ষণ পর স্যার এ এফ রহমান হলের ছাত্রদলের সদস্য সচিব মাহদীজ্জামান জ্যোতিকে সহকারী প্রক্টরের রুমে প্রবেশ করে ১০ মিনিটের মতো অবস্থায় করতে দেখা যায়। বের হয়ে এসে তিনি বাহিরে থাকা শিক্ষার্থীদের সাথে কিছুক্ষণ কথাবার্তা বলেন। পরবর্তীতে সহকারী প্রক্টর এবং অন্যান্য শিক্ষকরা অভিযুক্তদের সাথে আরও কিছু সময় কথাবার্তা বলেন।’
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে স্যার এ এফ রহমান হলের ছাত্রদলের সদস্য সচিব মাহদীজ্জামান জ্যোতি বলেন, ‘আমি সেন্ট্রাল লাইব্রেরি থেকে হলের দিকে যাচ্ছি। তারপর প্রক্টর অফিসের সামনে কিছু পরিচিত ছোট ভাইদের দেখতে পেয়ে তখন তাদের দিকে যাই এবং প্রক্টর অফিসের ভেতরে গিয়ে দেখি কাদের আটক করা হয়েছে। তারপর সাথে সাথেই আমি চলে আসি। এই ব্যাপার নিয়ে প্রশাসনের সাথে আমরা কোন কথাই হয়নি। প্রশাসন ও সিসিটিভি ফুটেজ চেক করে দেখলেই বুঝতে পারবেন আমি কতক্ষণ সেখানে ছিলাম।’
মুখে মাক্স পরার ব্যাপারে জানতে চাইলে ছাত্রদলের এই বলেন, ‘আমি গত কয়েক ধরে অসুস্থ ছিলাম। তাই সেই সময় মুখে মাক্স পড়া ছিলাম।’
এ ব্যাপারে ঢাবির সহকারী প্রক্টর ড. মো. মিরাজ কোবাদ চৌধুরী বলেন, ‘এ ঘটনায় অভিযোগকারী ও অভিযুক্তদের সাথে ওপেন আলোচনা হয়েছে। কেউ এখানে দলীয় পরিচয় দিয়ে সুপারিশ করতে আসেনি। কারো সাথে আমাদের আলাদা করে আলোচনায়ও হয়নি। যেহেতু তারা প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী তাই মানবিক বিবেচনায় তাদের মুচলেকা দিয়ে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। আমরা তাদেরকে নজরে রাখবো।’