Image description

বাংলাদেশের রাজনীতিতে ভারতীয় প্রভাব নিয়ে বহুদিন ধরেই আলোচনা চলছে। এবার জাতীয় পার্টির সাবেক আন্তর্জাতিকবিষয়ক সম্পাদক সাকিব রহমান নিজের অভিজ্ঞতার আলোকে সেই প্রশ্নকে আরও জোরালো করলেন।

সাকিব রহমান, উত্তরার প্রগতি ম্যাগাজিনের সম্পাদক ও নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের সিনিয়র লেকচারার। সাবেক রাষ্ট্রপতি হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদ এবং জাতীয় পার্টির বর্তমান চেয়ারম্যান জি. এম. কাদের তার আত্মীয়। পারিবারিক পরিবেশের কারণে তিনি ২০১৯ সালে জাতীয় পার্টির রাজনীতিতে যুক্ত হন। কাদেরের সুপারিশে এরশাদের স্বাক্ষরে তিনি আন্তর্জাতিকবিষয়ক সম্পাদক (IAS) পদে দায়িত্ব পান।

‘ভারতের হস্তক্ষেপে আমাকে সরানো হয়’

২০১৯ সালে এরশাদের মৃত্যুর পর কাদের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। দায়িত্ব পালনের সময় তিনি প্রবাসে থাকা জাতীয় পার্টির বিভিন্ন কমিটি পুনর্গঠন এবং ঢাকায় কূটনৈতিক মিশনের সঙ্গে যোগাযোগের দায়িত্বে ছিলেন।

২০২২ সালের মে মাসে পাকিস্তান হাইকমিশনারের আমন্ত্রণে একটি নৈশভোজে যোগ দেন সাকিব। সেখানকার এক ছবিকে কেন্দ্র করে ভারতের আপত্তি ওঠে। তিনি জানান, ভারতের হাইকমিশনের রাজনৈতিক সচিব আনন্দেশ (IFS) সরাসরি কাদেরকে বার্তা পাঠান, যেখানে বলা হয়—“এটি আমাদের দেশে গুরুতরভাবে নোট করা হয়েছে। বাকি সিদ্ধান্ত আপনার।”

এর পরপরই তাকে আন্তর্জাতিকবিষয়ক সম্পাদক পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া হয় এবং দলীয় ওয়েবসাইট থেকে নাম মুছে ফেলা হয়। কিন্তু কোনো আনুষ্ঠানিক কারণ জনসমক্ষে প্রকাশ করা হয়নি। সাকিবের ভাষায়—“আমার অপসারণের কাগজপত্র ভারতীয় কূটনীতিককে দেখানো হয়েছিল, অথচ আমি বা দেশের জনগণ তা দেখতে পাইনি।”

আবারও ভারতের ভেটো!

২০২৩ সালের মার্চে কাদের তাকে সংগঠনের সম্পাদক করার প্রস্তাব দিলেও ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই তা বাতিল করা হয়। কারণ—ভারতীয় হাইকমিশন এখনও তার বিরুদ্ধে আপত্তি জানায়। এ ঘটনার পর সাকিব পুরোপুরি জাতীয় পার্টি থেকে নিজেকে সরিয়ে নেন এবং গণমাধ্যমে প্রেস বিজ্ঞপ্তি দিয়ে দল ছাড়ার ঘোষণা দেন।

জাতীয় পার্টি কি স্বাধীন পরিচয়ে টিকে আছে?

সাকিব রহমানের অভিযোগ, জাতীয় পার্টি নিজস্ব রাজনৈতিক অবস্থান ধরে রাখতে ব্যর্থ হয়েছে। দলটি শুধু আওয়ামী লীগ ও দিল্লির এজেন্ডা বাস্তবায়নের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। তার ভাষায়, “কাদের একজন নিখুঁত দিল্লি-নির্ভর নেতৃত্বের ভূমিকা পালন করেছেন। আমার অপসারণ প্রমাণ করেছে, জাতীয় পার্টির নিজস্ব কোনো পরিচয় নেই।”

নিজের ‘অন্যায় অপসারণ’ নিয়ে হতাশ হলেও সাকিব মনে করেন, এ অভিজ্ঞতা প্রকাশ্যে আনা জনগণের জানার অধিকার। এখন প্রশ্ন থেকে যায়—বাংলাদেশের জনগণ জাতীয় পার্টি ও এর নেতৃত্বকে কিভাবে দেখবে?