Image description

জিয়াউর রহমান জিয়া। একসময় ছিলেন দাপুটে যুবলীগ নেতা। পরবর্তীতে বিএনপিতে যোগ দিলেও, উঠাবসা করতেন আওয়ামী লীগ নেতাদের সঙ্গে। গত বছরের ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকার পর ভোল পাল্টে উপজেলা বিএনপির নিয়ন্ত্রণ নিয়ে শুরু করেন দখলবাজি ও চাঁদাবাজি। জেলার এক গুরুত্বপূর্ণ নেতার মাধ্যমে বাগিয়ে নেন পাবনার ফরিদপুর উপজেলা বিএনপির সদস্য সচিবের পদও।

বিতর্কের মুখে সে কমিটি স্থগিত হলেও কমেনি জিয়ার অপকর্ম। যেন অদৃশ্য শক্তিতে অপ্রতিরোধ্য জিয়া। অপকর্মে অতিষ্ঠ হয়ে বিচার দাবি ও দলীয় ইমেজ রক্ষায় ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ও সিনিয়র নেতাদের কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন খোদ ওই উপজেলার বিএনপি নেতারা।

ফরিদপুর উপজেলা বিএনপির একাধিক নেতার সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, জিয়া ফরিদপুর উপজেলা যুবলীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক ছিলেন। ২০১৩ সালে তিনি বিএনপিতে যোগ দেন। পরে ইউপি চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন এবং বর্তমানে উপজেলা বিএনপির স্থগিত কমিটির সদস্য সচিব।

বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বরাবর পাঠানো লিখিত অভিযোগ ও স্থানীয় সূত্র জানায়, দলীয় সিদ্ধান্ত উপেক্ষা করে গত উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে অংশ নেওয়ায় তাকে দল থেকে স্থায়ী বহিষ্কার করা হয়। বিগত সময়গুলোতে আওয়ামী লীগের সঙ্গে আঁতাত করে চলেছেন তিনি। মিটিং মিছিলে আওয়ামী লীগের হয়ে অংশ নিয়েছেন। আওয়ামী লীগের সাবেক এমপি মকবুল হোসেন ও তার ছেলেদের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রক্ষা করে সেসময় আওয়ামী লীগই বনে যান তিনি।

কিন্তু ৫ আগস্টের পর হঠাৎ কট্টর বিএনপি নেতা হিসেবে নিজেকে জাহির করতে শুরু করেন জিয়া। ক্যাডার বাহিনী গড়ে সাধারণ মানুষকে হামলা মামলার ভয় দেখিয়ে শুরু করেন চাঁদাবাজি। দখলে নেন উপজেলার বিভিন্ন হাট বাজার, পুকুর ও জমি। নিয়মিত করে চলেছেন সালিশ বাণিজ্য। তার ক্যাডার বাহিনীর ভয়ে তটস্থ স্বয়ং স্থানীয় বিএনপি নেতাকর্মীরাও। ভয়ে মুখ খুলতে সাহস করেন না ভুক্তভোগীরা। 

জানা যায়, তার বিরুদ্ধে উপজেলা বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনের পক্ষ থেকে দফায় দফায় বেশ কয়েকটি অভিযোগ শীর্ষ নেতাদের পাঠানো হয়। উপজেলা বিএনপির দলীয় প্যাডে গত এপ্রিল মাসে যুবদল, কৃষকদল, স্বেচ্ছাসেবকদল, ওলামাদলসহ কয়েকটি অঙ্গ সংগঠনের নেতাদের পক্ষ থেকে অভিযোগ দেওয়া হয়। পরে গত জুন মাসে উপজেলা বিএনপি ও সব অঙ্গ সংগঠনের পক্ষ থেকে আরেকটি অভিযোগ করা হয়।

এসব অভিযোগপত্রে ওই নেতার বিরুদ্ধে অভিযোগের বিস্তারিত বিবরণসহ বিভিন্ন নথিপত্র পাঠানো হয়। দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বরাবর করা এসব আবেদনের অনুলিপি দলের মহাসচিব, সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা, রাজশাহী বিভাগের সমন্বয়কসহ বিভিন্ন নেতাদের কাছে পাঠানো হয়।

অভিযোগপত্রে উপজেলা বিএনপির সাবেক আহ্বায়ক ও সভাপতি জহুরুল ইসলাম বকুল, সাবেক সদস্যসচিব ও সাধারণ সম্পাদক আব্দুল হাকিম খান, সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক রুহুল আমিন মাস্টার, উপজেলা কৃষকদলের আহ্বায়ক নুরুল ইসলাম, সদস্যসচিব ফিরোজ ইসলাম, উপজেলা যুবদলের সদস্যসচিব আমিনুল হক, উপজেলা ছাত্রদলের সদস্যসচিব দেলোয়ার হোসেন সুজনসহ বিভিন্ন কমিটির নেতারা স্বাক্ষর করেন।

অভিযোগকারী বিএনপি নেতাকর্মীরা অসহায়ত্ব প্রকাশ করে বলেন, অদৃশ্য শক্তি রয়েছে জিয়ার। এই শক্তির বলেই এত অভিযোগ থাকার পরও গত ১০ জুন তাকে ফরিদপুর উপজেলা বিএনপির সদস্য সচিব করে কমিটি দেওয়া হয়। পরে এ সংক্রান্ত বিষয় তুলে ধরে সম্প্রতি বিএনপির জেলা ও কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে অভিযোগ দেন স্থানীয় বিএনপির নেতাকর্মীরা। ৯ দিন পর ওই কমিটি বাতিল হলেও জিয়ার বাহিনী উপজেলাজুড়ে চালিয়ে যাচ্ছে তাণ্ডব। 

ফরিদপুর উপজেলা বিএনপির সাবেক সদস্য সচিব ভিপি আব্দুল হাকিম বলেন, ‘স্বৈরাচারী শাসনের সময় তাকে কখনো দলীয় কাজে দেখা যায়নি। তখন আওয়ামী লীগের সঙ্গে চলেছে। ৫ আগস্টের পর সে বিএনপির বড় নেতা হয়ে গেছে। এরই মধ্যে তিনতলা বাড়ি করেছেন, প্রাইভেট কার কিনেছেন। ড্রাইভার রেখে গাড়ি চালায় জিয়া। ৫ আগস্টের পর এসব কোত্থেকে কীভাবে এলো?’

তিনি বলেন, ‘জিয়া লম্পট চরিত্রের লোক। তার অসামাজিক কাজের ভিডিও ফেসবুকে পাওয়া যায়। এর জন্য দল ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে, ইমেজ হারাচ্ছে।’

অভিযোগের বিষয়ে বিএনপি নেতা জিয়া বলেন, ‘সব অভিযোগ উদ্দেশ্যমূলক, মিথ্যা ও বানোয়াট। আমার ব্যবসা আছে সেখানকার আয় দিয়ে আমি চলি। উপজেলা বিএনপির কমিটিতে আমাকে সদস্য সচিব করার পর আমাকে বিতর্কিত করার জন্যই একটি পক্ষ এসব মিথ্যা অভিযোগ তুলছেন। প্রযুক্তি ব্যবহার করে এডিট করে নোংরা ছবি ও ভিডিও তৈরি করেও আমাকে ফাঁসানোর চেষ্টা চলছে।’

বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা ও জেলা বিএনপির আহ্বায়ক হাবিবুর রহমান হাবিব বলেন, ‘জিয়ার বিরুদ্ধে নারী কেলেঙ্কারি, দখলবাজি ও চাঁদাবাজির অভিযোগের বিষয়টি আমার জানা ছিল না। অবশ্যই বিষয়টি খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’