Image description

ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আর মাত্র ৬ মাস বাকি। ইতোমধ্যে সারাদেশের নির্বাচনী মাঠে সক্রিয় হয়েছে বিএনপি। সম্ভাব্য প্রার্থীদের দৌড়ঝাঁপও বেড়েছে। নির্বাচনকে সামনে রেখে গুরুত্ব বেড়েছে তৃণমূল পর্যায়ের নেতাকর্মীদের। আর ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন আয়োজনে প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি শেষ করতে অধিকতর তৎপর নির্বাচন কমিশনও (ইসি)।

সূত্র মতে, অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস ২০২৬ সালের ফেব্রুয়ারিতে রোজা শুরুর আগে জাতীয় সংসদ নির্বাচন হবে বলে ঘোষণা দেওয়ার পর থেকেই পুরোদমে নির্বাচনের পথে বিএনপি। নির্বাচনে বিজয়ী হতে নানামুখী কৌশল নিয়ে সক্রিয় রয়েছে দলটি। এরই অংশ হিসেবে তারা এখন সকল কর্মসূচি পালন করছে নির্বাচনকে কেন্দ্র করে।

এদিকে দলীয় সম্ভাব্য প্রার্থীরা আগের চেয়ে দৌড়ঝাঁপ বৃদ্ধি করেছে। যদিও কোন সংসদীয় আসনে কে প্রার্থী হবে তা এখনো চূড়ান্ত হয়নি। প্রতিটি সংসদীয় আসনের জন্য ৩ জন করে প্রার্থী ঠিক করে রেখেছে দলীয় হাইকমান্ড। প্রার্থী তালিকা চূড়ান্ত করবে সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর। তবে তালিকা চূড়ান্ত হওয়ার আগেই শুরু হয়ে গেছে প্রতিযোগিতা। কে কাকে পেছনে ঠেলে নিজের প্রার্থিতা নিশ্চিত করতে পারেন সেজন্যই চলছে বিরামহীন দৌড়ঝাঁপ। দেশে সিনিয়র নেতাদের সঙ্গে লবিংয়ের পাশাপাশি লন্ডনে অবস্থান করা বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সঙ্গেও বিভিন্ন মাধ্যমে নিয়মিত যোগাযোগ রাখছেন দলের সম্ভাব্য প্রার্থীরা। 
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন জনকণ্ঠকে বলেন, একটি গণতান্ত্রিক নির্বাচনমুখী দল হিসেবে বিএনপি ইতোমধ্যেই ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রস্তুতি শুরু করেছে। সম্ভাব্য প্রার্থীরাও নিজ নিজ সংসদীয় এলাকায় স্থানীয় নেতাকর্মীদের সঙ্গে নিয়ে জনসংযোগ চালিয়ে যাচ্ছে।

নির্বাচন কমিশন সচিব আখতার আহমেদ জনকণ্ঠকে বলেন, প্রধান উপদেষ্টার ঘোষণার পর ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন করতে যথাসময়ে প্রস্তুতি শেষ করার কাজ এগিয়ে চলছে। এ জন্য নির্বাচন কমিশনের সংশ্লিষ্ট সবাই অধিকতর তৎপর রয়েছে। নির্ধারিত সময়েই সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন করা হবে।

জানা যায়, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান সারাদেশের সর্বস্তরের নেতাদের কাছে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রস্তুতি জোরদার করার বার্তা দিয়েছেন দলটির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। সেই সঙ্গে তিনি বলেন, নির্বাচনকে সামনে রেখে এখন থেকে দলের কেন্দ্র যে কর্মসূচি ঘোষণা করবে দলীয় নেতাকর্মীদের ঐক্যবদ্ধভাবে তা সফল করতে হবে। ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন বিএনপির জন্য খুব সহজ নয়, তাই সবাইকে ঐক্যবদ্ধ ও সক্রিয় থেকে দলের বিজয় নিশ্চিত করতে হবে। এ বিষয়ে কেউ অবহেলা করলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।  

তারেক রহমানের কাছ থেকে এমন বার্তা পেয়ে ইতোমধ্যে সারাদেশের সর্বস্তরের নেতাকর্মীরা নির্বাচনী মাঠে অধিকতর সক্রিয় হয়েছে। বিশেষ করে সম্ভাব্য প্রার্থীরা এলাকায় শোডাউন করতে গিয়ে এলাকাবাসীর সহযোগিতা নিচ্ছেন। এর ফলে তৃণমূল পর্যায়ের নেতাকর্মীদেরও গুরুত্ব বেড়েছে।

বর্তমানে বিএনপি নির্বাচন কেন্দ্রিক যে কর্মসূচি চলমান রেখেছে তাতে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রস্তুতি জোরদার, দলীয় ৩১ দফা সংস্কার কর্মসূচির পক্ষে জনমত বৃদ্ধি, নেতাকর্মীদের মধ্যে ঐক্য ধরে রাখা, দলে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনা ও সর্বস্তরে দলকে ঢেলে সাজানোর কাজে অগ্রাধিকার দেওয়া হচ্ছে। এর মাধ্যমে সর্বস্তরে নেতাকর্মীদের চাঙ্গা করা হচ্ছে। সেই সঙ্গে প্রতিটি নির্বাচনী এলাকায় সম্ভাব্য প্রার্থীদের আমলনামাও পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে। আগে ঠিক করে রাখা প্রতি আসনের ৩ জন সম্ভাব্য প্রার্থীর পাশাপাশি এর বাইরে অধিক জনপ্রিয় কোনো প্রার্থীর সন্ধান পাওয়া যায় কি না তাও পর্যবেক্ষণ করছে দলীয় হাইকমান্ড।

এদিকে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে বিভিন্ন অপপ্রচার থেকে মুক্ত থাকতে দলীয় কৌশল ঠিক করেছে দলীয় হাইকমান্ড। এরই অংশ হিসেবে দলের যে নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে যখন যে অভিযোগ আসছে দ্রুত তদন্ত করে তার বিরুদ্ধে সাংগঠনিক শাস্তি নিশ্চিত করা হচ্ছে। অভিযোগ প্রমাণ হলে কাউকেই ছাড় দেওয়া হচ্ছে না। এর ফলে জাতীয় নির্বাচনের আগে দলের পক্ষ থেকে জনগণের কাছে এই বার্তা গেছে যে বিএনপি অনিয়ম-দুর্নীতির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কাউকে প্রশ্রয় দেয় না।

রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের মতে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর বিএনপির রাজনৈতিক অবস্থান এখন সুদৃঢ়। তাই যত দ্রুত নির্বাচন হবে বিএনপির ক্ষমতায় যাওয়ার সম্ভাবনা ততই বেশি। এ জন্যই দলটির সর্বস্তরের নেতাকর্মীরা দ্রুত জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দাবি জানাচ্ছেন। বিএনপি নেতাকর্মীরা মনে করছেন, নির্বাচন কেন্দ্রিক ন্যূনতম সংস্কার শেষ করে যত দ্রুত সম্ভব জাতীয় সংসদ  নির্বাচন আয়োজন করা জরুরি। কারণ, সংসদ নির্বাচন না হলে দেশে জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠিত হবে না। আর জনগণের সরকার না হলে অনেক সমস্যার বাস্তবসম্মত সমাধান হবে না। তাই বিএনপি নেতাকর্মীরা মনে করছেন, ২০২৬ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে নির্বাচনের যে ঘোষণা প্রধান উপদেষ্টা দিয়েছেন তা যেন ঠিক থাকে।  

দীর্ঘদিন বিএনপির সঙ্গে যুগপৎ আন্দোলন করা সমমনা বেশ ক’টি রাজনৈতিক দলও দ্রুত জাতীয় সংসদ নির্বাচন চায়। এ জন্য তারাও বিএনপির সঙ্গে মিল রেখে নির্বাচনমুখী বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করছে। তাদের মতে, গত ৩টি জাতীয় নির্বাচনে দেশের সিংহভাগ মানুষ ভোট দিতে পারেনি। তাই অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য ভোট হলে বিএনপিসহ সমনা দলগুলোকে দেশের মানুষ আগ্রহ নিয়ে ভোট দেবে। আর পূর্বঘোষণা অনুসারে বিএনপি সমমনা দলগুলোকে নিয়ে জাতীয় সরকার গঠন করবে। এ বিষয়ে ইতোমধ্যেই সমমনা দলগুলোকে ইঙ্গিত দেওয়া হয়েছে।

প্রায় ১৯ বছর ধরে ক্ষমতার বাইরে বিএনপি। ২০০৬ সালের ২৮ অক্টোবর ক্ষমতা ছাড়ার পর থেকে রাজপথে আন্দোলন সংগ্রাম করে এ পর্যন্ত এসেছে। বর্তমানে বিএনপির চেয়ারম্যান বেগম খালেদা জিয়া অসুস্থ। দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানও দীর্ঘদিন লন্ডনে অবস্থান করছেন। তবে তিনি লন্ডনে থাকলেও দলের সর্বস্তরের নেতাকর্মীদের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রেখে ও দিকনির্দেশনা দিয়ে দলকে এগিয়ে নিচ্ছেন। নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর তিনিও দেশে ফিরে এসে সরাসরি নির্বাচনের মাঠে সক্রিয় হবেন বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়।

সূত্র মতে, প্রধান উপদেষ্টার ফেব্রুয়ারিতে সংসদ নির্বাচনের ঘোষণার পর নানামুখী চাপে নির্বাচন কমিশনও এখন নির্বাচনের প্রস্তুতি জোরদার করছে। কয়েক দিনের মধ্যেই নির্বাচনের রোডম্যাপ ঘোষণা করবে নির্বাচন কমিমন, যা নির্বাচন কমিশন সচিব ইতোমধ্যেই  জানিয়েছেন।

এর আগে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এ এম এম নাসির উদ্দিন জানিয়েছেন, সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য যেসব সংস্কার দরকার সেটুকু করার উদ্যোগ তারা নিয়েছেন। সবার সহযোগিতা নিয়ে তারা এমন একটি নির্বাচনী জোয়ার সৃষ্টি করবেন যেখানে ভোট ছাড়া মানুষের আর কোনো চিন্তা থাকবে না।

সূত্র জানায়, হাইকমান্ডের নির্দেশে দলের সর্বস্তরের নেতাকর্মীরাই এখন ভোটের মাঠে সক্রিয়। দিন যত যাচ্ছে প্রস্তুতি ততই জোরদার করা হচ্ছে। তা করতে নানা কৌশলে এগিয়ে যাচ্ছে। জনগণের মন জয় করে এ নির্বাচনে সফলতা বয়ে আনতে ভোটের সময় লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড প্রত্যাশা করছে দলের সর্বস্তরের নেতাকর্মীরা। যদিও অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা আগাম জানিয়ে দিয়েছেন এবারের নির্বাচন হবে অতীতের সকল নির্বাচনের চেয়ে বেশি গ্রহণযোগ্য। তার এ কথায় আশায় বুক বেঁধেছে বিএনপি নেতাকর্মীরা। এখন অপেক্ষা কখন নির্বাচনের সুনির্দিষ্ট তারিখ ঘোষণা করা হবে। ভোটাররা নির্বিঘেœ ভোট দিতে পারলে এবার বিপুল ভোটে বিজয়ী হয়ে বিএনপি ক্ষমতায় যাবে বলে দলের নেতাকর্মীরা ইতোমধ্যেই আশাবাদী হয়ে উঠেছে বলে জানা যায়। ১৯ বছর রাষ্ট্রক্ষমতার বাইরে থাকা দল বিএনপি এখন নির্বাচন ছাড়া অন্য কিছু নিয়ে তেমন ভাবছে না। অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস ২০২৬ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে ত্রয়োদশ জাতীয় সংংসদ নির্বাচনের ঘোষণা দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে বিএনপি নেতাকর্মীরা মাঠে নির্বাচনী তৎপরতা জোরদার করে।