Image description

শুধু আবাসিক হল নয়, পুরো ক্যাম্পাসেও গুপ্ত, লুপ্ত, সুপ্ত, বিলুপ্ত সব প্রকার দলীয় ছাত্র কিংবা শিক্ষক রাজনীতি বন্ধ করা উচিত বলে মনে করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. কামরুল হাসান মামুন। তিনি বলেছেন,শুধু দলীয় রাজনীতির কারণে সরকার শিক্ষায় বাজেট বরাদ্দ কমালেও দলীয় ছাত্ররা আনন্দ মিছিল করে।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে শনিবার (৯ আগস্ট) এক স্ট্যাটাসে এসব কথা বলেছেন ড. কামরুল হাসান মামুন। তিনি লিখেছেন, আবাসিক হল শুধু নয় পুরো ক্যাম্পাসে গুপ্ত, লুপ্ত, সুপ্ত, বিলুপ্ত সব প্রকার দলীয় ছাত্র কিংবা শিক্ষক রাজনীতি বন্ধ করা উচিত। অথচ আমরা কি দেখছি? রং এর আবরণে দলীয় শিক্ষক রাজনীতি পুরোদমে চলছে। আমরা চাই, ক্যাম্পাস হবে মুক্ত চিন্তার চারণ ভূমি। 

তিনি বলেন, ছাত্ররা যদি দলীয় রাজনীতি পরিহার করে, তার অনেক অনেক সুফল আছে। হলে টর্চার সেল থাকবে না। অন্যতম একটি সুবিধা হলো হলো পরিচালনার জন্য শিক্ষকদের প্রয়োজন হবে না। কয়েকজন কর্মকর্তার সহযোগিতায় ছাত্ররাই পার্ট-টাইম চাকরি হিসেবে আবাসিক হলগুলো পরিচালনা করতে পারে। শুধু আবাসিক হল কেন, ছাত্ররা রেজিস্ট্রার ভবন, লাইব্রেরি প্রভৃতি জায়গাতেও পার্ট-টাইম চাকরি করতে পারবে। 

এটাই সারা পৃথিবীর স্বাভাবিক ক্যাম্পাসের চিত্র উল্লেখ করে তিনি বলেন, এর মাধ্যমে ছাত্ররা দায়িত্ববোধ, নেতৃত্ব ইত্যাদি শিখবে। শিক্ষকরা কেন আবাসিক হল চালাবে? একজন শিক্ষক কি করে হোটেল ম্যানেজার হয়? এই যে রেজিস্ট্রার ভবনের নামে একটা কলংকের তিলক যে ‘লাঞ্চের পরে আসবেন’, এইটা থেকে আমরা মুক্ত হতে পারব যদি ছাত্ররা এখানে পার্টটাইম কাজ করতে পারে। গোটা পরিবেশই পাল্টে যাবে।

‘এ ছাড়া ছাত্র সংসদতো থাকবেই। এ ছাত্র সংসদই হবে নেতৃত্ব শেখার আসল জায়গা। তারা আবাসিক থেকে শুরু করে সর্বত্র শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশ বজায় রাখতে ইতিবাচক কাজ করবে, সেবামূলক নানা কর্মসূচি থেকে শুরু করে খেলাধুলা ও সাংস্কৃতিক নানা কর্মকান্ডও পরিচালনাতেও নেতৃত্ব দিবে। আবাসিক হলে দলীয় রাজনীতি থাকলে বিবদমান নানা রাজনৈতিক মতাদর্শের শিক্ষার্থীরা নানা কারণে ঝগড়া ও মারামারিতে লিপ্ত হওয়ার আশংকা সব সময়ই থাকবে’, যোগ করেন তিনি।

ড. কামরুল হাসান মামুন বলেন, ছাত্র-শিক্ষক সবাই রাজনৈতিকভাবে সজাগ থাকবে, রাজনৈতিক মতাদর্শ থাকবে। এসব নিয়ে আলোচনা অনুষ্ঠান, বিতর্ক থাকবে, কিন্তু কোন ভাবেই সরাসরি দলীয় রাজনীতি থাকা উচিত না। ২৪-এর অভ্যুথানের একটা অন্যতম চাওয়া ছিল এটাই। গতকালকের বাংলাদেশ থেকে এক ছাত্র আমেরিকায় প্রথম গিয়ে কি পার্থক্য দেখলো তা বর্ণনা করছিল। 

সে লিখেছে, আমেরিকার বিশ্ববিদ্যালয়ে এসে সবচেয়ে লক্ষণীয় যেটা দেখলো তা হলো- আবাসিক হলতো বটেই, এমনকি পুরো ক্যাম্পাসে দলীয় রাজনীতির ডামাডোল নেই। সবাই ব্যস্ত লেখাপড়া, গবেষণা এবং নানা এক্সট্রা কারিকুলার- যার মধ্যে আছে খেলাধুলা ও সাংস্কৃতিক নানা অনুষ্ঠান। 

তিনি বলেন, সেখানে হল চালায় ছাত্ররা। তারা পার্টটাইম ক্যাম্পাসের নানা জায়গায় কাজ করে উপার্জন করে। আমরা কেন পারব না? রাজনীতি করে আমরা পুরো পরিবেশকে বিষাক্ত করে ফেলছি। এতটাই বিষাক্ত যে, সেখানে লেখাপড়া ও গবেষণার কোনও পরিবেশই থাকে না। 

ড. কামরুল হাসান মামুন আরও বলেন, শুধু দলীয় রাজনীতির কারণে সরকার শিক্ষায় বাজেট বরাদ্দ কমালেও সরকার দলীয় ছাত্ররা আনন্দ মিছিল করে। কল্পনা করা যায়? সাধারণ ছাত্ররা কি দলীয় রাজনীতি চায়? দেশের সাধারণ মানুষ বা ছাত্রদের অভিবাবকরা কি দলীয় ছাত্র কিংবা শিক্ষক রাজনীতি চায়?