Image description

দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় হাওর জনপদ অষ্টগ্রাম, ইটনা ও মিঠামইন উপজেলা নিয়ে গঠিত কিশোরগঞ্জ-৪ নির্বাচনি এলাকা। এ আসনটি আওয়ামী লীগের ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত। ফ্যাস্টিস্ট সরকারের পতনের পর এবারের পরিস্থিতি একেবারেই ভিন্ন। সাবেক রাষ্ট্রপতি আব্দুল হামিদ এ আসনে বেশ কয়েকবার এমপি হয়েছিলেন। তারপর তার ছেলে রেজওয়ান আহাম্মদ তৌফিক এ আসনে ২০১৪, ২০১৮ ও ২০২৪ সালের প্রহসনের নির্বাচনে বিজয়ী হন। ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর দলটির নেতাকর্মীরা আত্মগোপনে কিংবা পলাতক রয়েছেন। ১৫ বছরে নানাভাবে নির্যাতিত বিএনপি ও জামায়াতের নেতাকর্মীরা ফ্যাসিস্টমুক্ত পরিবেশে নিজেদের রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড পরিচালনা করছেন।

ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপির মনোনয়নপ্রত্যাশী ১০ জন। জামায়াতের একক প্রার্থী মাঠে গণসংযোগ করছেন। এছাড়াও অন্যান্য ইসলামি দলগুলোর প্রার্থীরাও মাঠে সরব আছেন। সম্ভাব্য প্রার্থীরা নির্বাচনি এলাকায় নিয়মিত সভা-সমাবেশ, গণসংযোগ করছেন। পাশাপাশি ধর্মীয় ও সামাজিক অনুষ্ঠানে যোগ দিয়ে নানা প্রতিশ্রুতি দিচ্ছেন। আগামী নির্বাচনে এ আসনে বিএনপির একাধিক মনোনয়নপ্রত্যাশীরা হলেন বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ফজলুর রহমান, অবসরপ্রাপ্ত জেলা প্রশাসক বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুর রহিম মোল্লা, হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিষ্টান কল্যাণ টাস্ট্রের কেন্দ্রীয় ভাইস প্রেসিডেন্ট ও সাবেক ছাত্র নেতা সুরঞ্জন ঘোষ, ড্যাব নেতা অধ্যাপক ডা. ফেরদৌস আহমেদ লাকী, জেলা আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক আমিনুল ইসলাম রতন, সাবেক উপসচিব জহির উদ্দিন ভূইয়া, কেন্দ্রীয় ছাত্রদলের সহসভাপতি হাফিজুল্লাহ হিরা, বুয়েট ছাত্রদলের সাবেক সহসভাপতি প্রকৌশলী নেছার উদ্দিন, তিনবারের নির্বাচিত অষ্টগ্রাম সদর ইউপি চেয়ারম্যান সৈয়দ ফাইয়াজ হাসান বাবু এবং মিঠামইন উপজেলা বিএনপির সভাপতি জাহিদুল আলম জাহাঙ্গীর। বিএনপির প্রার্থীরা নিজ নিজ বলয়ের নেতাকর্মীদের নিয়ে আলাদা আলাদাভাবে দলীয় কর্মসূচি পালন করার পাশাপাশি নিজেকে আগামী নির্বাচনে দলীয় প্রার্থী হিসেবে পরিচিত করতে ভোটার ও সাধারণ মানুষের মনোযোগ আকর্ষণের জন্য নানা প্রতিশ্রুতি দিচ্ছেন। নেতাদের এমন বিভক্তিতে এ আসনের বিএনপির নিবেদিতপ্রাণ কর্মী-সমর্থকরা হতাশ হচ্ছেন। তারা মনে করছেন নির্বাচনের আগে এমন বিভাজন দলের জন্য আগামী নির্বাচনে বিপর্যয় ডেকে আনতে পারে। কেননা সাম্প্রতিককালে ফজলুর রহমানের শেখ মুজিবপ্রীতি, ধর্মীয় ও রাজনৈতিক বিষয়ে আক্রমণাত্মক বক্তব্যের জন্য সাধারণ মানুষের মাঝে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। তিনি ১৯৮৬ সালে কিশোরগঞ্জ-৩ সদর আসন থেকে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হয়ে বিজয়ী হয়েছিলেন। ফজলুর রহমান জানান, বিগত সরকারের আমলে অনেক জুলুম-নির্যাতনের শিকার হয়েছি। ১৯৯৬ সালে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে নির্বাচন করে জয়লাভ করলেও আমাকে ষড়যন্ত্র করে হারিয়ে দেওয়া হয়। মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানি করা হয়। ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপি তাকে মনোনয়ন দিলে তিনি ধানের শীষ মার্কায় ৮০ শতাংশের বেশি ভোট পেয়ে জয়ী হবেন বলে দাবি করেন।

বিএনপি অন্যতম মনোনয়নপ্রত্যাশী বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুর রহিম মোল্লা বলেন, ১৯৭৯ সালে ছাত্রদল প্রতিষ্ঠাকালীন কর্মী ছিলাম আমি। তিনি দাবি করেন, কর্মজীবনে বিএনপির শীর্ষ নেতাদের এলাকায় ইউএনও ও ডিসি হিসেবে দায়িত্ব পালনের জন্য ফ্যাসিস্ট সরকার ক্ষিপ্ত হয়ে আমাকে পদোন্নতি না দিয়ে বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠায়। বর্তমান পদোন্নতি ও পদায়ন করলেও আমি তা গ্রহণ করিনি। দলের প্রতি আনুগত্য, ত্যাগের কারণে আমি এবার মনোনয়ন পাব বলে আমি বিশ্বাস করি।

বিএনপি নেতা সুরঞ্জন ঘোষ বলেন, বিগত বিএনপি আমলে তিন উপজেলায় ব্যাপক উন্নয়নমূলক কাজ করেছি। এই আসনে ৫৫ হাজার হিন্দু ভোটার রয়েছে। তিনি বলেন, ২০১৮ সালে বিএনপি আমাকে মনোনয়ন দিয়ে পরে প্রত্যাহার করে। এবার মনোনয়ন পেলে বিজয়ী হবেন বলে আশাবাদ জানান তিনি।

অন্যদিকে, কিশোরগঞ্জ-৪ আসনে দলীয় মনোনয়ন চূড়ান্ত করেছে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী। দলটি ইসলামী ছাত্রশিবিরের সাবেক কেন্দ্রীয় নেতা অ্যাডভোকেট শেখ রোকন রেজাকে মনোনয়ন দিয়েছে।

তিনি আমার দেশকে বলেন, বিগত আওয়ামী লীগ আমলে লাগামহীন নির্যাতন-নিপীড়নের মধ্যেও জামায়াতে ইসলামী রাষ্ট্র পরিচালনার জন্য সব স্তরে সৎ ও দক্ষ জনবল সৃষ্টি করেছে। আওয়ামী আমলে গত ১৫ বছর দেশের মানুষ দেখেছে চাঁদাবাজি, সন্ত্রাসী, টেন্ডারবাজি ও দখলদারিত্বের চিত্র। তাই মানুষ সৎ ও আদর্শিক দল জামায়াতে ইসলামীকে ভোট দিবে। কারণ, জামায়াতে ইসলামী পারবে সাম্য ও ন্যায়ের মাধ্যমে কল্যাণরাষ্ট্র গঠন করতে।

ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের মনোনয়ন প্রত্যাশী অ্যাডভোকেট বিল্লাল আহমেদ মজুমদার এবং দলের জেলা শাখার সহপ্রশিক্ষণ সম্পাদক হাফেজ মাওলানা মুহাম্মাদ আহসানুল্লাহ। খেলাফত মজলিসের মনোনয়নপ্রত্যাশী জেলা অর্থ সম্পাদক মাওলানা অলিউর রহমান।

এছাড়াও, স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন সমাজকর্মী ডা. শাহীন রেজা চৌধুরী। তিনি বলেন, ‘আলোকিত হাওর’ গড়তে সাধারণ মানুষের স্বপ্ন পূরণে আমি স্বতন্ত্র নির্বাচন করব। সুষ্ঠু নির্বাচন হলে আমি বিজয়ী হব।

খেলাফত মজলিসের কিশোরগঞ্জ জেলার অর্থ সম্পাদক মাওলানা অলিউর রহমান বলেন, কিশোরগঞ্জ-৪ আসনে নির্বাচনের জন্য দল আমাকে মনোনীত করেছে। আমরা কোরআন-হাদীসের আলোকে সমাজ ও রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করতে চাই।