১২ দলীয় জোটের নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন বিএনপি নেতারা। বৈঠকে বেশ কিছু ইস্যুতে সামনে কর্মসূচি দেয়ার বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। নিত্যপণ্যের মূল্য নিয়ন্ত্রণ, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ ও নির্বাচনের রোডম্যাপ ঘোষণার দাবিতে যুগপৎভাবে এই কর্মসূচি পালনের বিষয়ে আলোচনা হয়েছে।
আগামী দুই থেকে তিনদিনের মধ্যে এই কর্মসূচি ঘোষণা করা হতে পারে। তবে কি ধরনের কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে তা জানানো হয়নি।
শনিবার রাজধানীর গুলশানে চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে বিএনপি’র লিয়াজোঁ কমিটির সঙ্গে ১২ দলীয় জোটের এই বৈঠক হয়। বৈঠক শেষে জাতীয় পার্টির (জাফর) চেয়ারম্যান ও ১২ দলীয় জোটের প্রধান মোস্তফা জামাল হায়দার জানান, যুগপৎভাবে কর্মসূচি পালনের বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। দুই-তিনদিনের মধ্যে তা ঘোষণা হতে পারে।
বৈঠক সূত্র জানায়, পতিত ফ্যাসিস্টদের গ্রেপ্তার এবং আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতিসহ বিভিন্ন ইস্যুতে বিএনপিসহ যুগপৎ আন্দোলনে থাকা দল ও জোট নতুন করে কর্মসূচিতে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। সভা, সমাবেশ, মিছিল এবং মানববন্ধনসহ বিভিন্ন জনসম্পৃক্ততামূলক কর্মসূচি দেয়া হবে। বিএনপি’র স্থায়ী কমিটির বৈঠকে এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। বিএনপি’র পক্ষে বৈঠকে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান, বেগম সেলিমা রহমান এবং ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল আউয়াল মিন্টু উপস্থিত ছিলেন।
মোস্তফা জামাল হায়দার বলেন, আমরা প্রায় দীর্ঘ দুই ঘণ্টাব্যাপী দেশের বিদ্যমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি, সমস্যা এবং সংকটসহ নানা বিষয়ে আলোচনা করেছি। আমরা ঘোষণা করতে চাই, অতি শিগগিরই দুই থেকে তিনদিনের মধ্যে আমরা আমাদের পরবর্তী কর্মসূচি ঘোষণা করবো। ৫ই আগস্টে আমাদের যে বিজয়, সেই বিজয়কে বিভিন্নভাবে আজকে বিপদগ্রস্ত হতে চলেছে। আমরা সবাই লক্ষ্য করছি, জুলাই-আগস্টে ফ্যাসিবাদবিরোধী যে ঐক্য, সেই ঐক্য কিছুটা হলেও হারিয়ে যেতে বসেছে। আমাদের ঐক্যে কোথায় যেনো একটু চিড় ধরেছে। আমরা এর সমাধান করতে চাই। আগামী দুই থেকে তিনদিনের মধ্যে সর্বদলীয়ভাবে, জুলাই-আগস্টে যেভাবে আন্দোলন করেছি, ঠিক তেমনিভাবে একত্রিত থেকে পরবর্তী কর্মসূচি ঘোষণা করবো।
তিনি বলেন, ‘জনজীবনে যে বর্তমান সমস্যা, দ্রব্যমূল্যের কষাঘাত, নির্বাচন সংক্রান্ত বিষয়ে ধূম্রজাল’-এ সমস্ত কিছুর সুস্পষ্ট এবং সুনির্দিষ্ট ব্যাখ্যা আমরা আপনাদের সামনে প্রদান করবো।
এক প্রশ্নের জবাবে নজরুল ইসলাম খান বলেন, আমরা যে এক দফায় আন্দোলন করছিলাম, এটা জুলাই মাসের শেষের দিকে এসে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের পক্ষে এক দফা ঘোষণা করা হলো। আমরা শুরু করেছি অনেক আগে। এক দফার মূল কথাই ছিল যে, ফ্যাসিবাদের পতন এবং দেশে গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠা। এর একটা অংশ আমরা অর্জন করতে পেরেছি। আরেকটা অংশ হলো গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠা। গণতান্ত্রিক পুনঃপ্রতিষ্ঠা মানে হলো দেশে গণতান্ত্রিক শাসন প্রতিষ্ঠা। আর গণতান্ত্রিক শাসন প্রতিষ্ঠা হয় একটি নিরপেক্ষ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মাধ্যমে। আমরা সেটার জন্যই অপেক্ষা করছিলাম। কিন্তু অতি সম্প্রতি অনেকে অনেক কথা বলা শুরু করেছেন। অন্যান্য কিছু নির্বাচনের কথা আলোচনা হচ্ছে। এটা গোটা আকাঙ্ক্ষার সঙ্গে সংগতিপূর্ণ না।
তিনি বলেন, বিএনপিসহ দেশের অনেকগুলো রাজনৈতিক দল আমরা জোটবদ্ধভাবে আন্দোলন করেছি এবং পরবর্তী পর্যায়ে যুগপৎ আন্দোলন করেছি। যুগপৎ আন্দোলনের অন্যতম শরীক ১২ দলীয় জোটের সঙ্গে আজকে দেশের বিদ্যমান, রাজনৈতিক, সামাজিক এবং অর্থনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা ও মতবিনিময় করেছি।
মোস্তফা জামাল হায়দারের নেতৃত্বে বৈঠকে বাংলাদেশ এলডিপি’র চেয়ারম্যান শাহাদাত হোসেন সেলিম, বাংলাদেশ জাতীয় দলের চেয়ারম্যান সৈয়দ এহসানুল হুদা, জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশের মহাসচিব মুফতি গোলাম মহিউদ্দিন ইকরাম, জাতীয় পার্টির মহাসচিব আহসান হাবিব লিংকন, জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টির সহ-সভাপতি রাশেদ প্রধান, বাংলাদেশ লেবার পার্টির চেয়ারম্যান লায়ন মুহাম্মদ ফারুক রহমান প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।