
রাশিয়ার এক কর্মকর্তার কথায় উত্তেজিত হয়ে সামাজিক মাধ্যমে পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহারের হুমকি দিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। এতে মনে হয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রের মতো শক্তিধর দেশের একজন প্রেসিডেন্ট দিমিত্রি মেদভেদেভের ফাঁপা হুমকিতে বিচলিত হয়ে পড়েছেন। অথচ মেদভেদেভ একসময়ের রুশ প্রেসিডেন্ট হলেও এখন তিনি মূলধারার রাজনীতি থেকে এক প্রকার বিচ্ছিন্ন।
সিএনএনের এক বিশ্লেষণে বলা হয়েছে, অনেকেই মনে করেন, এটি মূলত ট্রাম্পের রাজনৈতিক কৌশল। সরাসরি রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনকে লক্ষ্যবস্তু না করে তিনি রাশিয়ার প্রতি কঠোর মনোভাব দেখিয়েছেন। এ ছাড়া, পারমাণবিক উত্তেজনার এ রকম কথাবার্তা দেশে অন্য রাজনৈতিক সমস্যা থেকে জনগণের মনোযোগ সরাতেও কাজে লাগতে পারে।
সম্প্রতি মেদভেদেভ সামাজিক মাধ্যমে একাধিক হুমকিস্বরূপ বার্তা দিয়েছেন। তিনি ট্রাম্পের নির্ধারিত সময়সীমার সমালোচনা করেন, যেখানে ট্রাম্প রাশিয়াকে ইউক্রেনের সঙ্গে শান্তিচুক্তিতে পৌঁছানোর আলটিমেটাম দিয়েছেন। মেদভেদেভ বলেন, এ ধরনের প্রতিটি চূড়ান্ত সময়সীমা যুদ্ধের দিকে এক ধাপ এগিয়ে যাওয়া। ট্রাম্পের মনে রাখা উচিত, সোভিয়েত আমলের ‘ডেড হ্যান্ড’ পারমাণবিক প্রতিশোধ ব্যবস্থা কতটা ভয়ানক হতে পারে।
এই ব্যবস্থা শত্রুর পারমাণবিক হামলা টের পেলেই স্বয়ংক্রিয়ভাবে আন্তঃমহাদেশীয় ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়ে দিতে পারে। ট্রাম্পের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও বিষয়টিকে গুরুত্ব না দিয়ে বলেন, মেদভেদেভ এখন আর রাশিয়ার কোনো সিদ্ধান্ত গ্রহণকারী ব্যক্তি নন। এই মতামত অনেক রুশ নাগরিকেরও। তাদের কাছে মেদভেদেভ একজন প্রাসঙ্গিকতা হারানো রাজনীতিক, যার কোনো বাস্তব ক্ষমতা নেই। পারমাণবিক হামলা চালানোর তো প্রশ্নই আসে না। তাহলে প্রশ্ন ওঠে, ট্রাম্প কেন এমন একজনের কথার জবাবে এভাবে প্রতিক্রিয়া দেখালেন?
এর একটি সম্ভাব্য উত্তর হলো, এটি ট্রাম্পের জন্য রাশিয়ার প্রতি কঠোর মনোভাব প্রদর্শনের একটি সুবিধাজনক উপায় হতে পারে। তিনি এমন একজন ব্যক্তিকে নিশানা করেছেন, যাকে রাশিয়ায় গুরুত্বহীন ভাবা হয়। অথচ তিনি সরাসরি পুতিনকে কিছু বলেননি। এর মাধ্যমে তিনি সরাসরি ক্রেমলিনের সঙ্গে সংঘাতে না গিয়েই রাজনৈতিক অবস্থান নিতে পেরেছেন।
ট্রাম্প বলেছেন, তিনি রাশিয়ার কাছাকাছি পারমাণবিক সাবমেরিন মোতায়েনের নির্দেশ দিয়েছেন। কিন্তু বাস্তবে মার্কিন নৌবাহিনীর অনেক পারমাণবিক সাবমেরিন প্রতিনিয়ত মহাসাগরে টহল দেয়, যেগুলোয় শত শত পারমাণবিক অস্ত্র থাকে। এসব সাবমেরিনের ক্ষেপণাস্ত্র হাজার হাজার মাইল দূরে লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানতে সক্ষম। সুতরাং তাদের অবস্থান সামান্য পরিবর্তনে রাশিয়াকে আঘাত করার সামর্থ্যে খুব বেশি পার্থক্য তৈরি হয় না।
তবে ট্রাম্প যে সময়সীমা বেঁধে দিয়েছিলেন, তা প্রায় শেষ হয়ে এসেছে। বাস্তবতা হলো, রাশিয়া ইউক্রেনে তাদের সামরিক লক্ষ্য পূরণের আগ পর্যন্ত পিছু হটার কোনো ইঙ্গিত দেয়নি। তাই সাম্প্রতিক পারমাণবিক হুমকিতে মস্কোর কৌশল বদলে যাবে– এমনটা আশা করা যায় না।
একই সময়ে ট্রাম্প রাশিয়ার জ্বালানি তেল কেনা ভারত ও চীনের মতো দেশগুলোর ওপর দ্বিতীয় পর্যায়ের নিষেধাজ্ঞা আরোপের বিষয়ে ভাবছেন। তবে এই পদক্ষেপ মার্কিন অর্থনীতির ওপরও প্রভাব ফেলতে পারে। এ অবস্থায় পারমাণবিক প্রস্তুতির মতো আলোচনায় জনমত ও সংবাদমাধ্যমের মনোযোগ ঘুরিয়ে দেওয়াটা কার্যকর হতে পারে।
অবশ্যই, যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়ার মধ্যে পারমাণবিক উত্তেজনার যে কোনো আলোচনা বিশ্বজুড়ে গুরুত্ব পায়। কিন্তু বর্তমানে ওয়াশিংটন ও মস্কোর সম্পর্ক যতই চাপের মধ্যে থাকুক না কেন, তা এখনও সরাসরি পারমাণবিক সংঘর্ষের পথে নেই।
এদিকে রাশিয়ার দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের সোচি শহরে শনিবার রাতে ড্রোন হামলা চালিয়েছে ইউক্রেন। হামলায় একটি তেলের ডিপোতে আগুন লেগে যায়। রোববার শহরটির স্থানীয় কর্তৃপক্ষ এ তথ্য জানিয়েছে।
অন্যদিকে, ইউক্রেনে এক পার্লামেন্ট সদস্য ও কয়েকজন সরকারি কর্মকর্তাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। ড্রোনসহ বিভিন্ন যুদ্ধ সরঞ্জাম কেনার সময় বড় ধরনের ঘুষ কেলেঙ্কারিতে জড়িত থাকার অভিযোগে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়। ইউক্রেনের দুর্নীতিবিরোধী সংস্থাগুলো এ কেলেঙ্কারির তথ্য উদ্ঘাটন করেছে।