ফ্যাসিস্ট দোসর ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপসকে হঠাৎ হিরো বানানোর চেষ্টায় নেমেছে একটি গণমাধ্যম। মানুষের সহানুভুতি পেতে বানোয়াট কল্পকাহিনী হাজির করেছে গণমাধ্যমটি। এনিয়ে ক্ষোভ জানিয়েছে নেটিজেনরা।
ইউটিউব চ্যানেলে প্রচারিত ওই ভিডিও প্রতিবেদনটিতে দাবি করা হয়, কোটা সংস্কার আন্দোলনের উত্তাল মুহূর্তে ২ আগস্ট ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের সাবেক মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপস গণভবনে গিয়ে শেখ হাসিনার পায়ে পড়েছিলেন। তাপস মূলত ফুফু হাসিনার সাথে দুটি বিষয় নিয়ে আলোচনা করতে গণভবনে গিয়েছিলেন। নোবেল বিজয়ী ডঃ মুহাম্মদ ইউনূসকে হয়রানি না করতে এবং চলমান ছাত্র বিক্ষোভ নিয়ে পরামর্শ দেওয়ার জন্য।
গণমাধ্যমটি আরও দাবি করে, তাপস নাকি ফ্যাসিস্ট হাসিনাকে বোঝানোর চেষ্টা করেন, ড. ইউনূসের বিরুদ্ধে সরকারের পদক্ষেপ দেশের ভাবমূর্তি নষ্ট করছে এবং সরকারের উচিত প্রতিবাদী ছাত্রদের সাথে বসা এবং তাদের দাবিদাওয়া শোনা। তবে হাসিনা তার পরামর্শ গ্রহণ করেননি। কারণ সালমান এফ রহমান ও আনিসুল হক তার সম্পর্কে আগে থেকেই হাসিনাকে নেতিবাচক বার্তা দিয়ে রেখেছিল। হাসিনা কথা শুনতে না চাইলে পায়ে ধরেও নাকি অনুরোধ করেন তাপস। পরে তার অনুরোধ প্রত্যাখ্যাত হলে পরের দিন ৩ আগস্ট দেশ ছেড়ে চলে যান তিনি।
ওই প্রতিবেদনটির কড়া সমালোচনা করে পাঠকরা লিখেছেন, নাটক কম কর পিও...দালালীটা ভালোই করলা। এটা তাপসকে হুজুর বানানোর চেষ্টা ছাড়া কিছুই না। তবে নাটকটি সুন্দর হয়নি। মূলত এই নিউজ করা হয়েছে তাপসকে দিয়ে আওয়ামী লীগকে পূনর্বাসন করার জন্য। এগুলো আমরা বুঝি সাংবাদিক সাহেব। এসব সস্তা ও অপসাংবাদিকতা বাদ দেন।
আরেকজন পাঠক প্রশ্ন রেখে বলেন, যখন পা ধরেছিল আপনি কি পাশেই ছিলেন? আর এত জনদরদী হলে পদত্যাগ করে জনগণের পাশে দাঁড়াতেন। তারা তো বলেন জনগনের রাজনীতি করেন। কত টাকা খেয়ে এই রিপোর্ট করেছেন? তাপসই সুপ্রিম কোর্টে কিনা কাণ্ড-কারবার করেছিল তা সবারই জানা। সুতরাং দালালী একদমই করবেন না।
অপর একজন লিখেছেন, আ হা হা চামচামি তো ভালোই করলেন, সাং... সাহেব? এসব এখন আর খায়না বাংলার মানুষ। এত নিম্নমানের সাংবাদিকতা কেমনে করেন। জাতির সামনে নতুন তথ্য হাজির করলেন অথচ কোনো সোর্স উল্লেখ করতে পারলেন না!
উল্লেখ্য, ২০০৯ সালে পিলখানায় ৫৭ জন সেনা কর্মকর্তাকে হত্যায় তৎকালীন সংসদ সদস্য ফজলে নূর তাপস জড়িত ছিলেন বলে অভিযোগ রয়েছে। নিহত সেনা কর্মকর্তাদের পরিবার থেকে তার বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ করা হয়।
এছাড়া ক্ষমতার অপব্যবহার করে অবৈধভাবে সম্পদ অর্জনের অভিযোগে তাপসের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) এ মামলা করে। তার স্ত্রীর নামেও মামলা হয়েছে।
দুদক জানিয়েছে, শেখ ফজলে নূর তাপসের বিরুদ্ধে ক্ষমতার অপব্যবহার করে ৭৩ কোটি ১৯ লাখ ৬৭ হাজার ৩৭ টাকার সম্পদ অবৈধভাবে অর্জনের অভিযোগে মামলা করা হয়েছে। জ্ঞাত আয়ের সঙ্গে তাঁর এ সম্পদ সংগতিপূর্ণ নয়।মামলায় বলা হয়েছে, শেখ তাপসের ২৭টি ব্যাংক হিসাবে ৫৩৯ কোটি ১৬ লাখ ২৫ হাজার ২৭৮ টাকা ও ৫ লাখ ১৭ হাজার ৫২৭ ডলারের অস্বাভাবিক লেনদেনের প্রমাণ পাওয়া গেছে।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মুখে গত ৫ আগস্ট খুনি হাসিনা দেশ ছেড়ে ভারতে পালিয়ে যান। সরকার পতনের পর শেখ ফজলে নূর তাপসকে আর প্রকাশ্যে দেখা যায়নি। ধারণা করা হয়, সরকার পতনের আগেই তিনি বিদেশে চলে গেছেন।