
জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক নাহিদ ইসলামের ফেসবুক পোস্টের বক্তব্যের পাল্টা প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন ইসলামী ছাত্রশিবিরের কেন্দ্রীয় কমিটির প্রকাশনা সম্পাদক আবু সাদিক কায়েম। সম্প্রতি একটি বেসরকারি টিভিকে নাহিদ ইসলামের বক্তব্যের পাষ্টা প্রতিক্রীয়া ব্যাক্ত করেন সাদিক কায়েম ।
ইতিহাস বিকৃতির চেষ্টা হচ্ছে অভিযোগ করে শিবির নেতা বলেন, জুলাই আন্দোলনে আমার ভূমিকাকে খাটো করার অপচেষ্টা শুধু দুঃখজনকই নয়, বরং তা আন্দোলনের সৎ ইতিহাস রচনায় বড় অন্তরায় হয়ে দাঁড়াতে পারে।
তিনি বলেন, জুলাই বিপ্লবে আমাদের মূল সারির যারা সমন্বয়ক ছিলেন, তারা যখন ১৯ জুলাই থেকে ২ আগস্ট পর্যন্ত অনুপস্থিত ছিলেন, তখন আমি কিছু কাজ করার সুযোগ পেয়েছিলাম। সেই সত্য কিছু ঘটনা আমি মাঝেমধ্যে আমার আলাপে এনেছি।
নিজেকে কোনো পদপদবি বা নেতৃত্বের দাবিদার না করলেও সাদিক উল্লেখ করে বলেন, ইন্টারনেট বন্ধ, কারফিউ আর দমন-পীড়নের মধ্যেও আন্দোলনের ধারাবাহিকতা টিকিয়ে রাখার ক্ষেত্রে আমি ও আমার সহযোদ্ধাদের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল।
সাদিক বলেন, আমি আমার যতগুলো বক্তব্য রেখেছি, আপনারা যদি ৫ আগস্টের পর সেগুলো দেখেন, তাহলে দেখবেন আমি সব জায়গাতেই বলেছি, জুলাই বিপ্লবের যদি কোনো মাস্টারমাইন্ড থাকে, যদি কোনো নায়ক থাকে, তাহলে তারা হলেন আমাদের শহীদরা এবং আমাদের গাজীরা। তাদের আত্মত্যাগের মাধ্যমে আমরা একটি ফ্যাসিবাদমুক্ত বাংলাদেশ পেয়েছি।
জুলাই বিপ্লব আপামর জনতার স্বতঃস্ফূর্ত বিস্ফোরণ ছিল উল্লেখ করে তিনি বলেন, এখানে সব মতের মানুষ নিজেদের ব্যক্তিগত মতভেদ ভুলে গিয়ে একটি কমন লক্ষ্য— ফ্যাসিবাদমুক্ত বাংলাদেশ বিনির্মাণের জন্য একত্র হয়েছিলেন। যখন খুনি হাসিনা দেশ থেকে পালিয়ে যায়, সেই সময় সরকার গঠন এবং পরবর্তী সময়ে আমি কখনো ‘সমন্বয়ক’ পরিচয়ে কোথাও গিয়ে কোনো কিছু দখল বা আত্মসাৎ করেছি—এমন একটি সিঙ্গেল ডকুমেন্টও কেউ দেখাতে পারবে না।
শিবির নেতা বলেন, জুলাই বিপ্লবে আমাদের মূল সারির যারা সমন্বয়ক ছিলেন, তারা যখন ১৯ জুলাই থেকে ২ আগস্ট পর্যন্ত অনুপস্থিত ছিলেন। তখন আমি কিছু কাজ করার সুযোগ পেয়েছিলাম। সেই সত্য কিছু ঘটনা আমি মাঝেমধ্যে আমার আলাপে এনেছি। যখন ইন্টারনেট ব্ল্যাকআউট হয়, কারফিউ জারি হয়, তখন সবকিছু বিচ্ছিন্ন ছিল। সে সময় ৯ দফা ফরমেশন, আমাদের দ্বিতীয় সারির সমন্বয়কদের সঙ্গে যোগাযোগ, তাদের সেফ হাউসে রাখার ব্যবস্থা, পাশাপাশি সব মিডিয়া হাউসে ৯ দফা পৌঁছে দেওয়া; ১৯ জুলাই থেকে ১ আগস্ট পর্যন্ত প্রতিদিনের কর্মসূচি প্রণয়ন এবং দেশি-বিদেশি অসংখ্য অংশীজনের সঙ্গে আলোচনা— এসব করেছি।
তিনি আরও বলেন, এই ঘটনাগুলো যদি জাতির সামনে না আসে, তাহলে ঐতিহাসিক বিকৃতি তৈরি হবে।
এমন হাজারো ঘটনা রয়েছে, যার মধ্যে কয়েকটি আমরা জানি। ইতিহাসের দায় থেকে আমরা আশা করব, জাতি সবকিছু জানবে। ৫ আগস্টের পর দেখা গেছে, যারা ওই গুরুত্বপূর্ণ সময়— ১৯ জুলাই থেকে ২ আগস্ট পর্যন্ত— অনেকে ‘গুমের নাটক’ করেছে, কেউ আত্মগোপনে ছিল, আবার কেউ আন্দোলন ম্যানেজ করে ক্যাম্পাস খোলার আন্দোলন করেছিল, তারা ৫ আগস্টের পর মহাবিপ্লবী হয়ে উঠেছে।
এর আগে এনসিপির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম বলেন, ‘সাদিক কায়েম বৈষম্যেবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কোনো সমন্বয়ক ছিল না। কিন্তু ৫ আগস্ট থেকে এই পরিচয় সে ব্যবহার করেছে। অভ্যুত্থানে শিবিরের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকার কারণে সাদিক কাইয়ুমকে প্রেস ব্রিফিংয়ে বসার ব্যবস্থা করা হয়। কিন্তু সাদিক কাইয়ুমরা অভ্যুত্থান-পরবর্তী সময়ে ঢালাও প্রচারণা করেছে এই অভ্যুত্থান ঢাবি শিবিরই নেতৃত্ব দিয়েছে, আমরা সামনে শুধু পোস্টার ছিলাম।’
বৃহস্পতিবার (৩১ জুলাই) ফেসবুকে নিজের ভেরিফায়েড আইডিতে দেওয়া এক স্ট্যাটাসে এসব কথা বলেন এনসিপির শীর্ষ নেতা নাহিদ।