
গাজীপুরের টঙ্গী পাইলট স্কুল অ্যান্ড গার্লস কলেজের অধ্যক্ষ মো. আলাউদ্দিন মিয়া (৬০) দুর্নীতি ও জুলাই হত্যা মামলার আসামি হিসেবে কারাগারে থাকলেও সরকারি ও প্রাতিষ্ঠানিক মিলিয়ে মাসে দেড় লাখ টাকার বেশি বেতন পাচ্ছেন। আওয়ামী লীগপন্থী শিক্ষক সংগঠন ‘স্বাধীনতা শিক্ষক পরিষদ’ (স্বাশিপ) গাজীপুর জেলা শাখার সভাপতি আলাউদ্দিন মিয়া গত ২২ এপ্রিল দুপুরে র্যাবের হাতে গ্রেপ্তার হন। টঙ্গীর কলেজ রোডের স্বপ্না শপের সামনে থেকে তাকে আটক করা হয়। বর্তমানে তিনি কারাগারে থাকলেও গত দুই মাস ধরে সরকারি বেতনের পাশাপাশি কলেজ থেকেও ১ লাখ ৬৫ হাজার টাকা বেতন নিচ্ছেন।
প্রতিষ্ঠানের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ হারুন অর রশিদ জানিয়েছেন, গ্রেপ্তারের পরও কলেজ থেকে আলাউদ্দিন মিয়াকে নিয়মিত বেতন দেওয়া হচ্ছে। এই ঘটনা শিক্ষক সমাজ ও অভিভাবকদের মধ্যে ব্যাপক ক্ষোভের সৃষ্টি করেছে। তিনি বলেন, দুর্নীতির তদন্ত প্রতিবেদনসহ সব তথ্য গভর্নিং বডির সভাপতির কাছে পাঠানো হয়েছে। এখন চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে গভর্নিং বডির এখতিয়ারে।
গভর্নিং বডির সভাপতি শাহ নওয়াজ দিলরুবা জানান, এ বিষয়ে ইতোমধ্যে শিক্ষা অধিদপ্তর (ডিজি) এবং গাজীপুর জেলা শিক্ষা অফিসে চিঠি পাঠানো হয়েছে। তবে কোনো উত্তর পাওয়া যায়নি। তিনি বলেন, প্রয়োজন হলে গভর্নিং বডির সভা করে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
অভ্যন্তরীণ তদন্তে আলাউদ্দিন মিয়ার বিরুদ্ধে বড় ধরনের দুর্নীতির প্রমাণ মিলেছে। কলেজের ৫ শিক্ষক বিশিষ্ট গঠিত তদন্ত কমিটি জানিয়েছে, প্রতিষ্ঠানটির নিজস্ব দোকান ও অন্যান্য উৎস থেকে আয়কৃত অন্তত ১৪ কোটি ৮২ লাখ ৫০ হাজার টাকা আত্মসাৎ করেছেন তিনি। কমিটিতে ছিলেন গভর্নিং বডির সদস্য মোহাম্মদ মাহবুবুর রহমান, শিক্ষক প্রতিনিধি মোহাম্মদ আনিছুর রহমান, সহকারী প্রধান শিক্ষক (ইংরেজি) মোহাম্মদ ইব্রাহীম, সিনিয়র প্রভাষক লতিফা পারবিন ও প্রভাষক আজিজুল হক রাজু।
র্যাব ও গোয়েন্দা সূত্রে জানা গেছে, বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের মিছিলে হামলার ঘটনায় আলাউদ্দিন মিয়া একাধিক মামলার আসামি, যার মধ্যে জুলাই হত্যা মামলাও রয়েছে। এছাড়া তিনি গাজীপুরের পলাতক আওয়ামী লীগ নেতাদের সঙ্গে গোপন যোগাযোগ রেখে নাশকতার পরিকল্পনায় জড়িত ছিলেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। সাবেক যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী জাহিদ আহসান রাসেল ও সাবেক মেয়র জাহাঙ্গীর আলমের ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত এই শিক্ষক আওয়ামী লীগ সরকারের সময় রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে অধ্যক্ষের পদে বহাল ছিলেন।
সরকার পরিবর্তনের পর তার বিরুদ্ধে গাজীপুর জেলা প্রশাসক ও জেলা শিক্ষা অফিসে ২১টি লিখিত অভিযোগ জমা পড়ে। তদন্ত কমিটি গঠিত হলেও সেসব রিপোর্টও আজ পর্যন্ত প্রকাশ হয়নি। এদিকে স্থানীয় শিক্ষক ও অভিভাবকরা প্রশ্ন তুলেছেন, একজন দুর্নীতিবাজ হত্যা মামলায় কারাবন্দি আসামি কীভাবে নিয়মিত সরকারি বেতন ও প্রাতিষ্ঠানিক সুবিধা নিতে পারেন। তারা দ্রুত শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের হস্তক্ষেপ ও দুর্নীতির তদন্ত প্রতিবেদন প্রকাশের দাবি জানিয়েছেন।