Image description

কুমিল্লার শাসনগাছা বাসস্ট্যান্ডে চাঁদাবাজিতে আওয়ামী লীগ ক্যাডারদের রাজত্ব এখনো বহাল রয়েছে। অনুসন্ধানে জানা গেছে, চাঁদাবাজির কিছু অংশ যায় বিএনপি নেতাদের পকেটে। কুমিল্লা আদর্শ সদর উপজেলার ৩নং দক্ষিণ দুর্গাপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি তাজুল ইসলামের নেতৃত্বে চলছে কোটি টাকার এই চাঁদাবাজি।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, কুমিল্লা আদর্শ সদর উপজেলার ৩নং দক্ষিণ দুর্গাপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি তাজুল ইসলাম। ১৬ বছর ধরে এই তাজুল ইসলাম কুমিল্লা মোটর অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক পদ দখল করে আছেন ।

গত বছর ৫ আগস্ট স্বৈরাচারী শেখ হাসিনা পালিয়ে গেলেও বহাল তবিয়তে আছেন কুমিল্লার দানব সদর আসনের সাবেক এমপি বাহারের একনিষ্ঠ কর্মী তাজুল ইসলাম। তার প্রভাব এখনো বিদ্যমান রয়েছে।

জানা যায়, প্রতিটি বাসস্টপেজ থেকে একটা চাঁদা আদায় করা হয়। মাসে অর্ধকোটি চাঁদা আদায় করা হয় এ খাতে। পাপিয়া, একতা , সততা, লাব্বাইক, রুপালি, সুগন্ধা, রয়েল, রয়েল মুরাদনগর, রয়েল সিলেট, রিয়েল, এশিয়াসহ সব পরিবহন থেকে টাকা আদায় করা হয়। প্রতি বাস থেকে দৈনিক দেড় থেকে দুই হাজার টাকা আদায় করা হয়। অফিসের নাম পাঁচশত টাকা জমা দিয়ে বাকি টাকা ভাগবাটোয়ারা করা হয়। এছাড়াও তাজুল ইসলামের খাস লোক সালাউদ্দিন বিপ্লব সুগন্ধা থেকে ৯০০ টাকা নিয়ে ১০০ টাকা জমা করে বাকি টাকা পকেটে নেয় বলে জানা গেছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কুমিল্লা শাসনগাছা এলাকার স্থানীয় বাসিন্দা জানান, বিএনপি নেতা রেজাউল কাইয়ুমের ছোট ভাই রাশেদের মাধ্যমে চাঁদাগুলো উঠানো হয়। দৈনিক ১ হাজার গাড়ি থেকে প্রায় ১০০ থেকে ১৫০ টাকা করে চাঁদা উঠানো হয়। এছাড়াও মাসিক মাসোয়ারা তো আছেই। এদের বিরুদ্ধে কথা বলার কেউ সাহস পাচ্ছে না।

তিনি আরো বলেন, স্বৈরাচারী শেখ হাসিনার প্রেস সচিব সাংবাদিক নাঈমুল ইসলাম খানের ভাই সাইফুল ইসলামের রয়েল কোচ আগে চলতো জাঙ্গালিয়া বাসস্ট্যান্ড থেকে। এখন বড় অঙ্কের লেনদেনের পর রয়েল কোচ শাসনগাছা বাসস্ট্যান্ড থেকে চলছে রেজাউল কাইয়ুমের ইশারায়।

তিশা প্লাস বাসের মালিক রুহুল আমিন বলেন, বাস মালিকরা অসহায় হয়ে গেছে চাঁদাবাজদের কাছে। চাঁদা না দিলে গাড়ির চাকা ঘুরে না। এসব চাঁদাবাজির মূলহোতা তাজুল ইসলাম। আর তার পেছনে আছে বিএনপির কয়েকজন নেতা।

বর্তমান কুমিল্লা মোটর অ্যাসোসিয়েশনের সদস্য রিয়েল পরিবহনের মালিক তোফায়েল আহমেদ বলেন, প্রতি গাড়ি থেকে টাকা নেয় নেতারা। তাজুল ইসলাম ১৬ বছর ধরে আওয়ামী লীগের প্রভাব খাটিয়ে এসব করেছে। আওয়ামী লীগ পালিয়ে যাবার পর এখনো সে এগুলো করছে। কোনো হিসাব দেয় না সে ।

কুমিল্লার সাতরা এলাকার মো. সাহিদুল হক বলেন, তাজুল ইসলাম আওয়ামী লীগের ক্যাডার। সে ছাত্র জনতার ওপর হামলাকারী। সে এখনো বাসস্ট্যান্ডে চাঁদাবাজি করছে। তাকে শেল্টার দিচ্ছে বিএনপির কিছু লোক।

তারা বলেন, বাসস্ট্যান্ডে কোনো চাঁদাবাজি চলবে না। সব ধরনের চাঁদাবাজি বন্ধ করতে হবে। যারা চাঁদাবাজির সাথে জড়িত তাদের আইনের আওতায় আনতে হবে। স্থানীয় বিএনপির এক বড় নেতা তাজুল ইসলামের কাছ থেকে মাসে দুই লাখ টাকা নিয়ে তাকে শেল্টার দিচ্ছে চাঁদাবাজি করার জন্য।

এই বিষয়ে জানতে চাইলে ৩নং দক্ষিণ দুর্গাপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি এবং কুমিল্লা মোটর অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক তাজুল ইসলাম বলেন, সমিতির সভাপতি আছে, ক্যাশিয়ার আছে, এগুলোর হিসাব রাখা হয়। আর সাংবাদিকদের সাথে আমার ভালো সম্পর্ক আছে। আমার চাচা রেজাউল আছে, অসুবিধা নেই ।

সাধারণ সম্পাদক তাজুল ইসলাম চাঁদাবাজি করছে, এ বিষয়ে জানতে চাইলে কুমিল্লা মোটর অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি জামিল আহমেদ খন্দকার দৈনিক আমার দেশকে বলেন, এই বিষয়ে আমার জানা নেই।

বিএনপির নাম ভাঙিয়ে চাঁদাবাজির বিষয়ে জানতে চাইলে কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক এবং আদর্শ সদর উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক রেজাউল কাইয়ুম বলেন, বাস মালিক সমিতির লোকজন ডাক এনেছে। তারা কিছু টাকা উঠিয়ে কেরানি ও স্টাফদের বেতন দেয় । কোনো চাঁদাবাজি হয় বলে আমার জানা নেই।

সুশাসনের জন্য নাগরিক সুজন কুমিল্লার সভাপতি আলমগীর হোসেন খাঁন দৈনিক আমার দেশকে বলেন, চাঁদাবাজি আগে ছিল, এখনো হচ্ছে, ভবিষ্যতেও হবে- যদি স্বচ্ছতার সঙ্গে এগুলো বন্ধ করা না হয় । রাজনৈতিক দলের পরিচয়ে এখনো চাঁদাবাজি করছে। সাধারণ মানুষের করার সুযোগ নাই। রাজনৈতিক দলের ব্যাকিং নিয়ে চাঁদাবাজি হচ্ছে । ব্যাকিং না দিলে শ্রমিকরা চাঁদাবাজি করতে পারতো না । প্রশাসন ইচ্ছা করলে এই চাঁদাবাজি বন্ধ করতে পারে। পুলিশ প্রশাসন ও জেলা প্রশাসনকে ঐক্যবদ্ধভাবে এই কাজ করতে হবে। এই চাঁদাবাজির কারণেই দশ টাকার ভাড়া বারো টাকা দিতে হচ্ছে। এটা অত্যন্ত ন্যক্কারজনক।

কুমিল্লার পুলিশ সুপার মো. নাজির আহমদ খান বলেন, চাঁদাবাজির বিরুদ্ধে আমরা জিরো টলারেন্স নীতি গ্রহণ করেছি । যেখানেই চাঁদাবাজি হোক ছাড় দেয়া হবে না। আমার কাছে অভিযোগ এলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবো।

শাসনগাছা বাসস্ট্যান্ডে চাঁদাবাজির বিষয়ে জানতে চাইলে কুমিল্লার জেলা প্রশাসক মো. আমিনুল কায়ছার বলেন, জেলা পরিষদের মাধ্যমে কুমিল্লা বাসস্ট্যান্ড ইজারা দেয়া হয়েছে। নির্ধারিত টাকার বেশি নিলে এটা চাঁদাবাজির মধ্যে পড়ে। কেউ লিখিত অভিযোগ দিলে আমরা ব্যবস্থা নেবো। পুলিশ প্রশাসন ব্যবস্থা নেবে।