
সালমান এফ রহমান, আনিসুল হক ও পলকসহ অনেক ভিআইপি আসামিদের দেখলে অন্য আসামিরা থুতু মারে বলে জানিয়েছেন ঢাকা মহানগর আদালতের সহকারী পাবলিক প্রসিকিউটর কাইয়ুম হোসেন নয়ন। বুধবার (৩০ জুলাই) কালবেলাকে এ তথ্য জানান তিনি।
কাইয়ুম হোসেন নয়ন বলেন, সালমান এফ রহমান, আনিসুল হক, জুনায়েদ আহমদ পলক, ইনু, মেননসহ বাকি আসামিদের মানুষ ঘৃণা করে। কয়েদিরা তাদের দেখলে থুতু মারে। কারণ তারা গণহত্যা চালিয়েছে। হাজার হাজার কোটি টাকা লুট করেছে।
তিনি বলেন, এসব আসামিদের প্রতি সাধারণ কয়েদিদের রোষানল ঠেকাতে কেরানীগঞ্জে বিশেষ কারাগারে তাদের রাখা হয়েছে শুনেছি। তবে রাষ্ট্র সকল আসামিকেই নিরাপত্তা দিতে বাধ্য। তবে তাদের বিচারের মাধ্যমে উপযুক্ত শাস্তি নিশ্চিত করা হবে।
কারাগারের নির্ভরযোগ্য সূত্র জানিয়েছে, গ্রেপ্তারের পর আওয়ামী লীগের মন্ত্রী, এমপি, আমলাদের কেন্দ্রীয় কারাগার ও কাশিমপুর কারাগারসহ দেশের বিভিন্ন কারাগারে রাখা হয়। এসব কারাগারে ভিআইপি আসামিদের সেল আলাদা হলেও দিনেরবেলা বের হয়ে জেলখানা প্রাঙ্গণ ও ক্যান্টিনে সাধারণ কয়েদিদের সঙ্গে থাকতেন তারা। তবে আওয়ামী লীগের সাবেক কিছু মন্ত্রী এমপিদের প্রতি তীব্র ক্ষোভ ও রোষানল দেখা যায় সাধারণ কয়েদিদের মাঝে। অনেকে তাদের গালাগালও করেন। এতে করে জেলখানায় যে কোনো সময় অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটতে পারে বলে শঙ্কা রয়েছে। এ জন্য সাধারণ কয়েদিদের মাঝে ক্ষোভ সৃষ্টি করে ঘৃণিত এমন ভিআইপি আসামিদের তালিকা করে কারা কর্তৃপক্ষ। এ তালিকায় রয়েছেন ৫৬ জন ডিভিশনপ্রাপ্ত ও ডিভিশন ছাড়া সাবেক তিন এমপি। তাদের সবাইকে আলাদা করে নিরাপত্তা দিতেই এ বিশেষ কারাগার প্রস্তুত করা হয়েছে।
এ বিষয়ে কারা অধিদপ্তরের সহকারী মহাপরিদর্শক (এআইজি উন্নয়ন ও গণমাধ্যম) জান্নাত-উল ফরহাদ কালবেলাকে বলেন, গত ২১ জুন ঢাকার কেরানীগঞ্জে কেন্দ্রীয় কারাগারে বিশেষ কারাগারটি চালু করা হয়। ওই কারাগারটি আগে নারীদের জন্য ছিল। পরে সেটি সংস্কার করা হয়। কারাগারটিতে ৫৬ জন ডিভিশনপ্রাপ্ত আসামি রাখা হয়েছে। এ ছাড়া ডিভিশন না পেলেও নিরাপত্তার স্বার্থে ৩ জন এমপিকে রাখা হয়েছে। আর কোনো সাধারণ কয়েদি এখানে নেই। বিশেষ নজরদারির জন্যই এ কারাগারটি করা হয়েছে।
তিনি বলেন, এসব আসামির প্রতি সাধারণ কয়েদিদের ক্ষোভ ও ঘৃণা রয়েছে। তাদের সঙ্গে রাখলে অপ্রীতিকর ঘটনাও ঘটতে পারে। এ জন্য তাদের একসঙ্গে রাখলে, তাদের নিরাপত্তা ও নজরদারি ব্যবস্থাপনা সহজ হয়। এ ৫৯ জনের বাইরেও ডিভিশনপ্রাপ্ত আরও আসামি বিভিন্ন কারাগারে রয়েছে। তাদের প্রতি কয়েদিদের ক্ষোভ কম। তবে প্রয়োজনে বিশেষ কারাগারে নিরাপত্তার স্বার্থে আরও আসামি বাড়তে পারে।
জান্নাত-উল ফরহাদ আরও বলেন, এসব আসামির প্রতি কড়া নজরদারির জন্য সারা দেশের জেলখানা থেকে চৌকস কারারক্ষী বাছাই করে আনা হয়েছে। যাদের বিরুদ্ধে অতীতে কোনো অনিয়মের অভিযোগ নেই, আওয়ামী সংশ্লিষ্টতা নেই ও শিক্ষিত- তাদের আনা হচ্ছে।
বিশেষ কারাগারে রাখা তালিকাভুক্ত এসব কয়েদি হলেন আওয়ামী লীগ সরকারের সাবেক বাণিজ্যবিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান, সাবেক আইনমন্ত্রী আনিসুল হক, সাবেক তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু, ওয়ার্কার্স পার্টির চেয়ারম্যান রাশেদ খান মেনন, সাবেক আইসিটি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক, সাবেক মন্ত্রী আমির হোসেন আমু, সাবেক মেয়র আতিকুল ইসলাম, সাবেক খাদ্যমন্ত্রী অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম, সাবেক কৃষিমন্ত্রী আব্দুর রাজ্জাক, সাবেক জনপ্রশাসন মন্ত্রী ফরহাদ হোসেন, সাবেক গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী জাকির হোসেন, সাবেক ডেপুটি স্পিকার শামসুল হক টুকু, উপমন্ত্রী আরিফ খান জয়, আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আহমদ হোসেন, সাবেক মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক প্রতিমন্ত্রী ক্যাপ্টেন (অব.) এ বি তাজুল ইসলাম, সাবেক হুইপ আ স ম ফিরোজ, সাবেক বিচারপতি শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক, সাবেক মন্ত্রী গোলাম দস্তগীর গাজী, আওয়ামী লীগের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক আবদুস সোবহান গোলাপ, সাবেক বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি, সাবেক খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার, সাবেক নৌমন্ত্রী শাহজাহান খান, সাবেক দুর্যোগ প্রতিমন্ত্রী ডা. এনামুর রহমান, সাবেক পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী জাহিদ ফারুক শামীম, সাবেক মন্ত্রী উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরী, সাবেক রেলমন্ত্রী নূরুল ইসলাম সুজন, সাবেক বিমান প্রতিমন্ত্রী মাহবুব আলী, সাবেক পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী শহীদুজ্জামান সরকার, সাবেক সমাজকল্যাণমন্ত্রী নুরুজ্জামান আহমেদ, পার্বত্যবিষয়ক সাবেক প্রতিমন্ত্রী দীপংকর তালুকদার, সাবেক কৃষিমন্ত্রী আব্দুস শহীদ ও সাবেক শিল্পমন্ত্রী নূরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ূন।
এ ছাড়া জনরোষে নিরাপত্তা শঙ্কায় থাকা আরও ১৮ এমপি রয়েছেন। তারা হলেন সাবেক এমপি সাদেক খান, ব্যারিস্টার সায়েদুল হক সুমন, হাজী সেলিম, মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন, সুলতান মোহাম্মদ মনসুর আহমেদ, আলী আজম মুকুল, কাজী জাফর উল্যাহ, শাহজাহান ওমর, আব্দুস সালাম মুর্শেদী, শাহে আলম তালুকদার, নাসিমুল আলম, শফিউল ইসলাম মহিউদ্দিন, কামরুল আশরাফ খান পোটন, গোলাম কিবরিয়া টিপু, আব্দুল্লাহ আল জ্যাকব, ধীরেন্দ্র দেবনাথ শম্ভু, মোরশেদ আলম ও সিরাজুল ইসলাম মোল্লা।