Image description
জুলাই সনদ

জুলাই সনদ ও জুলাই ঘোষণাপত্রের সাংবিধানিক নয়, রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতির পক্ষে বিএনপি। ঘোষণাপত্র আলাদা করে সংবিধানে যোগ করা অপ্রয়োজনীয় বলেও মনে করছে দলটি। তবে রাজনৈতিক দলিল হিসেবে রাষ্ট্র্রের আর্কাইভে ২০২৪ সালের গণ-অভ্যুত্থানের ঘোষণাপত্র সংরক্ষণের পক্ষে বিএনপি। দু-একদিনের মধ্যে জুলাই সনদ এবং জুলাই ঘোষণাপত্র খসড়ার একটি কপি সরকারকে পৌঁছে দেবে দলটি। গত সোমবার রাজধানীর গুলশানে চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে বিএনপি’র সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম জাতীয় স্থায়ী কমিটির বৈঠকে নেতারা এসব মতামত দেন বলে জানা গেছে। এতে লন্ডন থেকে ভার্চ্যুয়ালি যুক্ত হয়ে সভাপতিত্ব করেন বিএনপি’র ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। 

বৈঠক সূত্র জানিয়েছে, জুলাই সনদের সাংবিধানিক স্বীকৃতি দেয়া হলে কয়েকটি দলের ‘সেকেন্ড রিপাবলিক’-এর যে দাবি, সেটা প্রতিষ্ঠিত হওয়ার মতো অবস্থা তৈরি হবে। ওই দলগুলো তখন এটাকে দ্বিতীয় স্বাধীনতা বলে প্রচার করতে থাকবে। যা ভবিষ্যতে বিতর্ক তৈরি করতে পারে। জুলাইয়ে গণ-অভ্যুত্থান হলেও এটা দ্বিতীয় স্বাধীনতা না। কারণ এটাতে নতুন করে দেশ স্বাধীন হয়নি। দীর্ঘদিন ধরে জনগণের ওপর চেপে বসা একটা স্বৈরশাসনের অবসান হয়েছে। ওদিকে জুলাই সনদে রাজনৈতিক ঐকমত্য হওয়া সংস্কার প্রস্তাব বা সুপারিশসমূহ নির্বাচিত পরবর্তী সরকার গঠনের দুই বছর মেয়াদকালের মধ্যে বাস্তবায়ন করা সম্ভব বলে মনে দলটি। 

বৈঠকে নেতারা বলেছেন, জুলাই ঘোষণাপত্র সাংবিধানিক স্বীকৃতি দেয়া হলে অতীতের নব্বইয়ে স্বৈরাচার এরশাদবিরোধী গণ-অভ্যুত্থান এবং ভবিষ্যতে এমন কোনো অভ্যুত্থান হলে সেটারও সাংবিধানিক স্বীকৃতির প্রশ্ন আসবে। এতে জটিলতা বাড়তে পারে। এ ছাড়া ২০১১ সাল পর্যন্ত একাত্তরের মহান স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র বাহাত্তরে প্রণীত সংবিধানের অন্তর্ভুক্ত ছিল না। ওই বছর সপ্তম তফসিলে তা যুক্ত করা হয়। যা চ্যালেঞ্জ করে মামলা হয়েছে। তাই জুলাই ঘোষণাপত্রও আলাদা করে সংবিধানে যোগ করা অপ্রয়োজনীয়। রাজনৈতিক দলিল হিসেবে রাষ্ট্র্রের আর্কাইভে ২০২৪ সালের গণ-অভ্যুত্থানের ঘোষণাপত্র সংরক্ষণের পক্ষে বিএনপি।

জুলাই ঘোষণাপত্র নিয়ে বিএনপি আর আলোচনা করতে চায় না বলে বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়। তবে জুলাই সনদ নিয়ে আলোচনা অব্যাহত রাখবে দলটি। নেতারা মনে করছেন, সংস্কারের ব্যাপারে তারা অত্যন্ত আন্তরিক। 

জানা গেছে, ৭ দফা জুলাই সনদের খসড়ার ৭নং দফায় বলা হয়েছে- ২০২৪ সালের বৈষম্যবিরোধী ও গণতান্ত্রিক আন্দোলন এবং গণ-অভ্যুত্থানের ঐতিহাসিক তাৎপর্যকে সংবিধানে যথাযোগ্য স্বীকৃতি দিতে অঙ্গীকারাবদ্ধ থাকবো। ৬নং দফায় বলা হয়েছে, এই সনদ গৃহীত হওয়ার পর এতে যেসব প্রস্তাব-সুপারিশ লিপিবদ্ধ রয়েছে, সেগুলো পরবর্তী জাতীয় নির্বাচনের মাধ্যমে সরকার গঠনের দু’বছর মেয়াদকালের মধ্যে বাস্তবায়ন নিশ্চিত করার প্রতিশ্রুতি দিচ্ছি। বিএনপি’র স্থায়ী কমিটি মনে করে, ঐকমত্য হওয়া সংস্কার প্রস্তাব বা সুপারিশসমূহ সরকার গঠনের দু’বছর মেয়াদকালের মধ্যে বাস্তবায়ন সম্ভব। সূত্র জানায়, বিএনপি’র স্থায়ী কমিটি ৭-নং দফা তথা সনদের সাংবিধানিক স্বীকৃতির সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করলেও খসড়ার বাকি ছয় দফা অঙ্গীকারনামার সঙ্গে একমত পোষণ করেছে। এ ছাড়া ঘোষণাপত্রের চূড়ান্ত খসড়া নিয়ে বিএনপি’র স্থায়ী কমিটিতে বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে। সেখানে ২৬শে মার্চ মহান স্বাধীনতার ঘোষণার বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত করাসহ ভাষাগত কিছু পরিবর্তন এনেছে দলটি।