Image description

গাজীপুরে একের পর এক বহিষ্কারের ঘটনায় নীরব ভূমিকা পালন করছেন স্থানীয় বিএনপি নেতাকর্মীরা। অধিক সংখ্যক নেতাকর্মী বহিষ্কারের আশঙ্কায় রীতিমতো আতঙ্কে আছেন বলে জানা গেছে। দলের ভাবমূর্তি রক্ষায় এতে কিছুটা সুফল মিললেও তৃণমূলে ক্ষোভও বাড়ছে।

 

বহিষ্কৃতদের অভিযোগ, কোনো অপরাধ বা দলীয় ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হয় এমন কর্মকাণ্ডে না জড়িয়েও দল থেকে বহিষ্কার হচ্ছেন কেউ কেউ। এসব বিতর্কিত বহিষ্কারের পেছনে দলীয় কোন্দলকে দায়ী করছেন তৃণমূল নেতাকর্মীরা।

 

গত ৬ জুলাই বিএনপির কেন্দ্রীয় সহ-দপ্তর সম্পাদক অ্যাডভোকেট মো. তাইফুল ইসলাম টিপু স্বাক্ষরিত নোটিশে গাজীপুর মহানগর বিএনপির সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক রাকিব উদ্দিন সরকার পাপ্পু, মহানগর স্বেচ্ছাসেবক দলের সদস্য সচিব আব্দুল হালিম মোল্লা, মহানগর বিএনপির সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জিয়াউল হাসান স্বপন এবং টঙ্গী পূর্ব থানা স্বেচ্ছাসেবক দলের সদস্য সচিব সিরাজুল ইসলাম সাথীকে বহিষ্কার করা হয়। এর দুই দিনের মাথায় ৮ জুলাই মহানগরীর বাসন থানা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মনিরুল ইসলাম মনিরকেও কেন্দ্রীয় নোটিশে বহিষ্কার করা হয়।

 

এছাড়া বিগত ১১ মাসে কেন্দ্রীয় বিএনপির সিদ্ধান্ত ছাড়াও বিএনপির জেলা, মহানগর ও থানা কমিটির পৃথক সিদ্ধান্তে আরও প্রায় অর্ধশতাধিক নেতাকর্মীকে বহিষ্কার করা হয়। সবচেয়ে বড় আকারের বহিষ্কারের ঘটনা ঘটে ২০২৩ সালে। দলীয় সিদ্ধান্ত উপেক্ষা করে গাজীপুর সিটি করপোরেশনের নির্বাচনে অংশ নেওয়ায় ২৯ নেতাকর্মীকে একযোগে বহিষ্কার করা হয়। বহিষ্কৃতদের প্রায় সবাই বিগত ফ্যাসিবাদবিরোধী আন্দোলন সংগ্রামে সক্রিয় ভূমিকায় ছিলেন এবং একাধিক রাজনৈতিক মামলায় কারাভোগ করেন।

 

দলে ফিরিয়ে নেওয়ার আশায় তারা এখনো দলীয় কর্মকাণ্ডে নিয়মিত অংশগ্রহণ করে আসছেন। তাদের মধ্যে দুই-তিনজনের বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার করা হলেও বাকিদের এখনো বহাল তবিয়তে আছে

অন্যদিকে সাম্প্রতিক কয়েকটি বহিষ্কারের ঘটনায় বেশ বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে। কারণ ব্যবস্থা নেওয়ার আগে কোনো শোকজ বা আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ ও প্রয়োজনীয় তদন্ত করা হচ্ছে না। এতে দলের স্থানীয় অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্বের জেরে নিরপরাধ ও ত্যাগী নেতাকর্মীরাও বহিষ্কারের শিকার হচ্ছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।

 

ক্ষতিগ্রস্তরা বলছেন, দুর্দিনে তাদের ভূমিকা মূল্যায়ন করা হচ্ছে না। বিতর্কিত কর্মকাণ্ডে না জড়িয়েও বহিষ্কার হওয়ায় তাদের রাজনৈতিক জীবন বিপন্ন হতে চলেছে। সামাজিকভাবেও তারা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ না দেওয়ায় অনেকে জানেনও না কী কারণে বহিষ্কার হয়েছেন। এখন মান-সম্মান ফিরিয়ে আনতে তারা দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয় থেকে শুরু করে সিনিয়র নেতাদের দ্বারে দ্বারে ঘুরছেন।

 

গাজীপুর মহানগর স্বেচ্ছাসেবক দলের সদস্যসচিব হালিম মোল্লা জানান, তিনি ষড়যন্ত্র ও অপপ্রচারের শিকার। গত ২৮ জুন গাজীপুরে একটি সংঘর্ষকে কেন্দ্র করে হয়তো তাকে বহিষ্কার করা হতে পারে। অথচ ওই সংঘর্ষের দিন তিনি দলের কর্মসূচিতে ব্রাহ্মণবাড়িয়া ছিলেন। ওই ঘটনার সঙ্গে তিনি কোনোভাবেই জড়িত ছিলেন না। এর কোনো প্রমাণ কেউ দেখাতে পারবে না বলে দাবি করেন তিনি

গাজীপুর মহানগর বিএনপির সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক রাকিব উদ্দিন সরকার পাপ্পু জানানআওয়ামী লীগের রাজনৈতিক প্রতিহিংসার শিকার হয়ে সম্পূর্ণ মিথ্যা অভিযোগে তিনি একটানা ১২ বছর তিন মাস জেল খেটেছেন। দুর্দিনে অসহায় নেতাকর্মীদের পাশে ছিলেন। গত ৬ জুলাই সিঙ্গাপুরে চিকিৎসাধীন থাকাবস্থায় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে জানতে পারেন তাকে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। কী কারণে বহিষ্কার করা হয়েছে তা জানতে পারেননি। এর আগে আত্মপক্ষ সমর্থনেরও কোনো সুযোগ দেওয়া হয়নি

 

এলাকার নেতাকর্মীরা জানান, পারিবারিকভাবে পাপ্পু সরকার ধনাঢ্য ও প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ী। তিনি ঝামেলা ও চাঁদাবাজি থেকে মুক্ত। অথচ তাকে চাঁদাবাজের তকমা লাগিয়ে বহিষ্কার করা হয়েছে।

 

সদ্য বহিষ্কৃত গাজীপুর মহানগর বিএনপি নেতা জিয়াউল হাসান এবং টঙ্গী পূর্ব থানা স্বেচ্ছাসেবক দলের সদস্য সচিব সিরাজুল ইসলাম সাথী বর্তমানে কারাগারে থাকায় তাদের বক্তব্য জানা যায়নি।

এসব বিষয়ে বক্তব্য জানতে চাইলে গাজীপুর মহানগর বিএনপির সভাপতি মো. শওকত হোসেন সরকার বলেন, সব বহিষ্কার বিনা কারণে হয়েছে তা ঠিক নয়। তবে কিছু কিছু ক্ষেত্রে ভুল বোঝাবুঝির কারণে কিংবা সংবাদমাধ্যমের অসত্য তথ্যের ভিত্তিতে তাৎক্ষণিকভাবে ব্যবস্থা নেওয়ায় ক্ষেত্র বিশেষে নিরপরাধ নেতাকর্মীরাও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। দলের নীতি-নির্ধারণী মহল থেকে এসব নেতাকর্মীর বিষয়ে খোঁজখবর নেওয়া হচ্ছে। তদন্তে নির্দোষ প্রমাণ হলে তাদের বিরুদ্ধে নেওয়া সাংগঠনিক ব্যবস্থা তুলে নেওয়া হবে।