Image description

বাংলাদেশ জাতীয় চিড়িয়াখানা সড়কসহ রাজধানীর গুরুত্বপূর্ণ অঞ্চল মিরপুরে রাস্তাঘাটের বেহাল দশা এবং পরিবেশগত অব্যবস্থাপনা দিন দিন নাগরিক ভোগান্তি চরমভাবে বাড়িয়ে তুলছে।

বিশেষ করে মিরপুরের জাতীয় চিড়িয়াখানা সড়কসহ আশপাশের রাস্তাগুলোর অবস্থা অত্যন্ত করুণ। মূল সড়ক ও ফুটপাতজুড়ে জমে থাকা পচা-গলা, বিটঘুটে দুর্গন্ধযুক্ত ময়লা-আবর্জনার স্তূপ এবং নিয়মিত বিদ্যুৎ বিভ্রাট যেন এখানকার নিত্যদিনের চিত্র।

এই এলাকায় অবস্থিত রয়েছে জাতীয় চিড়িয়াখানা, মিরপুর বোটানিক্যাল গার্ডেন (উদ্ভিদ উদ্যান), ঢাকা কমার্স কলেজ, বিসিআইসি স্কুল অ্যান্ড কলেজ, হযরত শাহ আলী (রঃ) মাজার, শের-ই-বাংলা ক্রিকেট স্টেডিয়াম, সরকারি বাংলা কলেজসহ বহু জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষা ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান। প্রতিদিন হাজারো শিক্ষার্থী, দর্শনার্থী ও স্থানীয় বাসিন্দাকে এসব অব্যবস্থাপনার মুখোমুখি হতে হচ্ছে।

স্থানীয়দের অভিযোগ, বারবার সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন দপ্তরকে অবহিত করা হলেও কর্তৃপক্ষের তেমন কোনো কার্যকর ব্যবস্থা চোখে পড়ছে না।

এলাকাবাসীর আরও অভিযোগ, অনেক সময় ময়লার গন্ধে চলাচলই দুঃসহ হয়ে পড়ে, বিশেষ করে বর্ষার সময়ে রাস্তাগুলো চলাচলের অযোগ্য হয়ে যায়।

২৭ জুলাই (রবিবার) সারাদিন মিরপুরের চিড়িয়াখানা সড়কসহ আশপাশের বিভিন্ন সড়ক ঘুরেফিরে দেখা গেছে, পাইকপাড়া সরকারি স্টাফ কোয়ার্টারের সামনের মূল সড়ক, মুক্তিযোদ্ধা মার্কেট, কো-অপারেটিভ মার্কেট, বাগদাদ শপিং কমপ্লেক্সের সামনে সড়ক, সনি সিনেমা হলের অদূরে চিড়িয়াখানা সড়কের ঈদগাহ মাঠের পাশের মূল সড়ক দখল করে বসানো হয়েছে অস্থায়ী কাঁচাবাজার। ফুটপাত ব্যবসায়ীরা বিভিন্ন পণ্যের পসরা সাজিয়ে বসে বেচাকেনা করছেন।

বিশেষ করে চিড়িয়াখানা রোডের ঈদগাহ মাঠের কোনার বাজারে কাঁচা মাছ, মুরগি বিক্রি করায় এর পচা দুর্গন্ধযুক্ত পানি ও ময়লা-আবর্জনা ফেলা হচ্ছে মূল সড়কে। এতে করে চরম ভোগান্তি ও জনদুর্ভোগের মাত্রা অসহনীয় পর্যায়ে পৌঁছে গিয়েছে।

এ সময় মনিরুজ্জামান মনি নামে চিড়িয়াখানা সড়ক এলাকার স্থানীয় একজন বাসিন্দা বলেন, এ অঞ্চলে আন্তর্জাতিক গুরুত্ববহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান থাকার ফলে প্রতিদিন দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে হাজার হাজার দর্শনার্থী নিয়মিত এ অঞ্চলে ভ্রমণ করেন। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের নাগরিকগণ নিয়মিত তাদের ভ্রমণে এসব সড়ক ব্যবহার করে থাকেন। ফলে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়েও এ সড়কগুলোর গুরুত্ব অপরিসীম।

আনোয়ার হোসেন নামে স্থানীয় বাসিন্দা বলেন, এতে করে এসব অঞ্চলে নিয়মিত মশা-মাছির উপদ্রব চরমভাবে বৃদ্ধিসহ নানা রোগব্যাধি ছড়াচ্ছে। বিশেষ করে শিশুরা বেশি আক্রান্ত হচ্ছে রোগব্যাধিতে। ম্যালেরিয়া, ডেঙ্গু, জ্বর, ডায়রিয়া, কলেরা আশঙ্কাজনক হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে অঞ্চলজুড়ে।

কিরণমালা ও দিশারী পরিবহনের একাধিক চালক বলেন, চিড়িয়াখানা সড়কে আমরা নিয়মিত যাত্রী পরিবহন করি। এ সড়কে নিয়মিত যানজট লেগেই থাকে। বিশেষ করে শুক্রবার দিন চিড়িয়াখানার সামনে একবার ঢুকলে সেখানে ঘণ্টার পর ঘণ্টা যানজটে পড়ে থাকতে হয়। সনি সিনেমা হলের মাত্র কয়েকশ’ গজ দূরে ঈদগাহ মাঠের আশপাশে পচা-গলা ময়লা-আবর্জনার বিটঘুটে দুর্গন্ধে নিঃশ্বাস নিতেও কষ্ট হয়।

বেস্ট শতাব্দী পরিবহনের একজন চালক বলেন, কাদাযুক্ত পিচ্ছিল সড়কে ছোটখাটো অনাকাঙ্ক্ষিত সড়ক দুর্ঘটনাও যেন নিত্যদিনের সঙ্গী।

রতন খান নামে রাইনখোলার একজন বাসিন্দা বলেন, সকালে বাচ্চাকাচ্চা নিয়ে প্রতিদিন স্কুলে যেতে হয়। কিন্তু এলাকার মূল সড়কসহ ফুটপাত দখল করে কাঁচাবাজার, মাছ বাজার বসায় রাস্তা-ঘাটগুলো চরমভাবে নোংরা হচ্ছে। শিশু সন্তানদের নিয়ে পায়ে হেঁটে চলাও দুষ্কর!

তাহমিনা আক্তার নামে একজন গার্মেন্টস কর্মী বলেন, প্রতিদিন সকালে কর্মস্থলে যাওয়ার সময় চরম ভোগান্তির শিকার হতে হয়। অনেক সময় অস্থায়ী বাজারে বসা কিছু দোকানদার আমাদেরকে ইভটিজিংসহ নানাভাবে হয়রানি করেন।

বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, রাজধানীর গুরুত্বপূর্ণ এমন এলাকায় অবকাঠামোগত উন্নয়ন না হলে জনজীবনে স্থায়ীভাবে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে এবং দেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হতে পারে।

এ বিষয়ে ডিএনসিসির অঞ্চল-২ এর একজন কর্মকর্তা বলেন, আমরা নিয়মিত অভিযান পরিচালনা করে আসছি। সুনির্দিষ্টভাবে অভিযোগ পেলে অবশ্যই আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।