Image description

সংবিধানে রাষ্ট্র পরিচালনায় মূলনীতি হিসেবে ঐক‍মত্য কমিশনের প্রস্তাবিত ‘সাম‍্য, মানবিক মর্যাদা, সামাজিক সুবিচার, গণতন্ত্র, ধর্মীয় স্বাধীনতা ও সম্প্রীতি’ যুক্ত করা নিয়ে আপত্তি তুলেছে ৪টি বামপন্থী রাজনৈতিক দল সিপিবি, বাসদ, বাসদ মার্কবাদী ও বাংলাদেশ জাসদ। তবে, বিএনপি-জামায়াত, এনসিপিসহ অন‍্যান‍্য দলগুলো কমিশনের প্রস্তাবে রাজি।

 

রোববার (২৮ জুলাই) রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে রাজনৈতিক দলগুলোর সাথে দ্বিতীয় ধাপের সংলাপের ১৯তম দিনে দলগুলোর প্রতিনিধিরা তাদের আপত্তির কথা তুলে ধরেন। এই নিয়ে কমিশনের বৈঠকে কিছুটা উত্তপ্ত বাক‍্য বিনিময়ও হয়।

 

কমিশনের মধ‍্যাহৃ ভোজের বিরতিতে সিপিবির সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স বলেন, সংবিধানের মূলনীতির প্রশ্নে ঐকমত্য হওয়া সম্ভব না। কারণ এখানে বিভিন্ন আদর্শের মানুষ আছে। এই ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেবে জনগণ, রাজনৈতিক দলগুলো জনগণের কাছে যাবে, তারা সিদ্ধান্ত দেবে।

 

তিনি বলেন, মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে অর্জিত আমাদের এই সংবিধান অনেক অসম্পূর্ণতা আছে। সেজন্য আমরা আলোচনা করছি, যাতে সম্পূর্ণ করা যায়। কিন্তু মূলনীতির প্রশ্নে ছাড় দেয়া সম্ভব না।

 

বিকল্প প্রস্তাব তুলে ধরে প্রিন্স বলেন, রাষ্ট্র পরিচালনার মূলনীতি প্রসঙ্গে এইভাবে লেখা যেতে পারে। সংবিধানে রাষ্ট্রীয় পরিচালনার চার মূলনীতির সাথে (৭২ সংবিধান অনুযায়ী- জাতীয়তাবাদ, সমাজতন্ত্র, গণতন্ত্র ও ধর্মনিরপেক্ষতা) সাম্য, মানবিক মর্যাদা, সামাজিক সুবিচার এবং ধর্মীয় স্বাধীনতা ও সম্প্রীতি যুক্ত করা যেতে পারে।

 

প্রিন্সের দাবি, মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে অর্জিত বাংলাদেশের সংবিধানে যে চার মূলনীতি আছে সেটা পরিবর্তনের কোনো ইঙ্গিত জাতির সামনে প্রকাশিত করা হয়, সেটার সাথে আমরা একেবারেই নাই। এইরকম অবস্থা যদি চলতে থাকে আমাদের পক্ষে ঐকমত্য কমিশনের সাথে আলোচনা নিয়মিত করা সম্ভব হবে না। একইসাথে যে ঐকমত‍্য গঠনের জন্য দীর্ঘ সময় ধরে একমত হচ্ছি, সেইটাও বাধাগ্রস্ত হবে। কমিশনের কাছে দায়িত্বশীল আচরণ প্রত্যাশা করেন এই নেতা।

 

কমিশনের প্রস্তাবিত মূলনীতির প্রসঙ্গে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস‍্য সালাহ উদ্দিন আহমদ বলেন, কশিশনের প্রস্তাবিত রাষ্ট্রের মূলনীতি নিয়ে আমাদের কোনো আপত্তি নেই বরং এটাই আমাদের প্রস্তাব।

 

গণসংহিতর নির্বাহী সমন্বয়নকারী আবুল হাসান রুবেল বলেন, মুক্তিযুদ্ধের মূলনীতিগুলো- সাম্য, মানবিক মর্যাদা, সামাজিক ন্যায়বিচার, গণতন্ত্র ও ধর্মীয় স্বাধীনতা- সংবিধানে অন্তর্ভুক্তির প্রস্তাব করা হয়েছে। বিশেষ করে পঞ্চদশ সংশোধনী বাতিল হওয়ার সম্ভাবনার প্রেক্ষাপটে।

 

তিনি বলেন, সমাজতন্ত্র ও জাতীয়তাবাদের মতো বিতর্কিত ধারণার পরিবর্তে একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক ও ন্যায়ভিত্তিক সংবিধানের আকাঙ্ক্ষা ব্যক্ত করেছেন, যা বাংলাদেশের জনগণের স্বপ্ন পূরণ করবে।

 

বাংলাদেশ লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টির (এলডিপি) চেয়ারম্যান শাহাদাত হোসেন সেলিম বলেন, রাষ্ট্রের মূলনীতি নিয়ে আমরা গত ৪ দিন ধরে আলোচনা করছি। অধিকাংশ রাজনৈতিক দল মনে করে, বাহাত্তরের সংবিধানে ফিরে যাওয়ার কোনো প্রশ্নেই আসে না। কারণ সমাজতন্ত্র আন্তর্জাতিকভাবে একটা পরিত‍্যক্ত বিষয় হয়ে গেছে।

 

তিনি বলেন, বিগত ৪ দিনের আলোচনার পর কমিশন আজকে যে প্রস্তাব দিয়েছে- সাম‍্য, মানবিক মর্যদা... তার প্রতি আমরা সমর্থন দিয়েছি। যদিও আমাদের অনেকের মনের মধ্যে ভিন্নমত আছে, সেটা হলো আল্লার উপর অবিচল আস্থা ও বিশ্বাস এই শব্দটা যুক্ত করার প্রস্তাব দিয়েছিলাম। তারপর কমিশনের প্রস্তাবে যেহেতু ধর্মীয় স্বাধীনতা ও সম্প্রীতি কথা আছে, তাই আমরা ভিন্নমত থেকে সরে এসেছি। তবে, ভবিষ‍্যৎতে কোনো রাজনৈতিক দল যদি সংবিধান সংশোধনের প্রস্তাব করে এবং সেটা পাশ হয়, হয়তো তখন আমরা তার বিরোধিতা করবো না।

 

একই প্রসঙ্গে এনসিপির সদস‍্য সচিব আখতার হোসেন বলেন, আমাদের দলীয় অবস্থান হচ্ছে পূর্বের (মূলনীতি) সবকিছু বাতিল করা। কমিশনের দেয়া প্রস্তাবের সাথে আমরা আছি। আমরা পূর্বকার তর্কে যেতে চাই না।