
ব্যবসা বাণিজ্য একটা রাষ্ট্রের মূল পেশা ও ব্লাড সার্কুলেশন সিস্টেম। ব্যবসায়ীরাই সমাজের মূল চালিকা ও নিয়ন্ত্রক শক্তি। কোন রাজনৈতিক দলের সত্যিকার শক্তি ও প্রভাব নির্ভর করে ব্যবসায়ীদের মাঝে তাদের প্রভাব কতটুকু তার উপর। যেসব ইসলামী দল রাজনীতিতে সফল হয়েছে ও টেকসই ক্ষমতা পেয়েছে তাদের রাজনৈতিক সফলতা ও ক্ষমতা ধরে রাখতে পারার একটা বড় কারণ ব্যবসায়ী সমাজের সমর্থন অর্জন করা - যেমন ইরান ও তুরস্ক। ইরান ও তুরস্কের সিভিল সোসাইটি, এলিট ও প্রফেশনাল শ্রেণী সরকার বিরোধী। ব্যবসায়ীদের জোরালো সমর্থনই ইরানের বিপ্লব ও এরদোয়ান সরকারকে টিকিয়ে রেখেছে। ইরানের বাজারগুলো বিপ্লবকাল থেকে শুরু করে এখন পর্যন্ত ইসলামপন্থীদের মূল ঘাঁটি। তুরস্কের ব্যবসায়ীরা এরদোয়ানকে সবচেয়ে বেশি ব্যবসাবান্ধব মনে করে।
অন্যদিকে মিশরের মুসলিম ব্রাদারহুড সহ মিডলইস্টের ইসলামী দলগুলো ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, আইনজীবী, শিক্ষক ইত্যাদি প্রফেশনাল সেক্টরগুলোর সমর্থন অর্জন করলেও ব্যবসায়ীদের সমর্থন তেমন অর্জন করতে পারেনি - যার ফলে তাদের রাজনৈতিক সফলতা কম, এবং কয়েকটা দেশে ক্ষমতায় গিয়েও বেশিদিন টিকতে পারেনি। মিশরে আমি আরব বসন্তের পরবর্তী সময়ে নিজে দেখেছি যে, কায়রোর অধিকাংশ ব্যবসায়ী - হোটেল মালিক হোক বা ট্যুর অপারেটর হোক - ব্রাদারহুডের ঘোর বিরোধী। তারা মনে করে ব্রাদারহুডের লোকেরা অর্থনীতি বা ব্যবসা বাণিজ্যের কিছুই বুঝেনা, ট্যুরিজম কমিয়ে ফেলবে, যার ফলে কায়রোর অর্ধেক ব্যবসা বন্ধ হয়ে যাবে। তখনই আমি সন্দেহ করেছিলাম যে ব্রাদারহুড ক্ষমতায় আসলেও বেশিদিন টিকতে পারবে না!
বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী উঁচু নিচু বিভিন্ন প্রফেশনাল সেক্টরে মোটামুটি ভালো অঙ্গ সংগঠন তৈরী করতে পেরেছে- যেমন শিক্ষক সমিতি/পরিষদ, চাষী কল্যাণ সমিতি, শ্রমিক কল্যাণ, আইনজীবী ও ডাক্তারদের ফোরাম। কিন্তু ব্যবসায়ীদের মাঝে তেমন প্রভাব তৈরী করতে পারেনি, তেমন একটিভ ব্যবসায়ীদের কোন অঙ্গ সংগঠন জামায়াতের নাই। গত ১ বছর ছোট বড় সব ব্যবসায়ীরাই বড় বিপদের মধ্যে গেছে, জামায়াতের সুযোগ ছিল তাদের সাথে একীভূত হয়ে যাবার, কিন্তু জামায়াত এক্ষেত্রে তেমন ফোকাস করেনি। জামায়াতের কেন্দ্রীয় দায়িত্বশীলরা যেভাবে একটা ভার্সিটির এলামনাই এসোসিয়েশনের মেম্বার হবার জন্য প্রাইমারি স্কুলের ক্যাপ্টেন নির্বাচনের মতো লজ্জাজনক ছেলেমানুষি করছেন তার সিকিভাগ চেষ্টা ব্যবসায়ীদেরকে সংগঠিত করার জন্য করেছেন বলে দেখা যায়নি।
চট্রগ্রামে সম্প্রতি শিবিরের মিছিলে ব্যবসায়ী সমাজ স্বতঃস্ফূর্তভাবে যোগ দিয়েছে। জামায়াত-শিবির ব্যবসায়ীদের পাশে জোরালোভাবে দাঁড়ানোর আগে ব্যবসায়ীরাই জামায়াত-শিবিরের পাশে জোরালোভাবে দাঁড়িয়েছে- এথেকেই বোঝা যায় ব্যাসায়ী সমাজ সাহায্য সহায়তার জন্য কতটা উম্মুখ ছিল- জামায়াত একটু হাত বাড়ালেই তারা সেই হাত ধরতো! যাইহোক - আশাকরি এই ঘটনায় জামায়াতের দায়িত্বশীলদের চোখ খুলবে যে, কোন কাজকে প্রায়োরিটি দেয়া উচিত আর কখন কোথায় সময় ও শ্রম ব্যয় করা উচিত। একটা বড় সুযোগ আপনা আপনি তৈরী হয়েছে- জামায়াত এটাকে পুরোপুরি কাজে লাগানোর জন্য সর্বাত্বক চেষ্টা করা উচিত। এখন থেকে জামায়াত সংঘবদ্বভাবেই সাহসের সাথে ব্যবসায়ীদেরকে সাপোর্ট ও প্রটেকশন দেয়ার জন্য এগিয়ে আসুক। বড়, ছোট, পাইকারি, খুচরা, হকার ইত্যাদি প্রত্যেক ব্যাবসায়ীদের সাথে যোগাযোগ করুক।
জামায়াতের উচিত অতি দ্রুত ব্যবসায়ীদের অঙ্গ সংগঠন তৈরী করা এবং গ্রাম/মফস্বল/শহর/মহানগরীর প্রতিটা বাজারে/মার্কেটে/ফুটপাথে ব্যবসায়ীদের সংগঠিত করে তার কমিটি দাঁড় করানো। এই মুহূর্তে আইন নিজের হাতে তোলা বা পুলিশি ভূমিকা নেয়ার দরকার নাই- তবে সন্ত্রাস ও চাঁদাবাজির বিরুদ্বে জোরালো প্রচার অবশ্যই অব্যাহত রাখতে হবে এবং অদূর ভবিষ্যতে সরাসরি মোকাবেলার জন্য প্রস্তুতি হিসাবে ব্যবসায়ী সমাজকে সংগঠিত করতে হবে। ক্ষমতায় আসলেও ব্যবসায়ী সমাজের জোরালো সমর্থন লাগবে।