
১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের সময় ৮ম শ্রেণির শিক্ষার্থী ছিলেন লুৎফর রহমান খান আজাদ। তিনি যুদ্ধের দীর্ঘ ৫১ বছর পর পেলেন মুক্তিযোদ্ধা সনদ!
টাঙ্গাইলের-৩ (ঘাটাইল) আসনের সাবেক এমপি ও সাবেক প্রতিমন্ত্রী লুৎফর রহমান খান আজাদ ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের ৫১ বছর পর আওয়ামী লীগের সঙ্গে আঁতাত করে তৈরি তালিকায় মুক্তিযোদ্ধা হয়েছেন।
এ নিয়ে ঘাটাইল উপজেলাজুড়ে চলছে আলোচনা সমালোচনার ঝড়। জেলা ও উপজেলার বীর মুক্তিযোদ্ধারা বলছেন, যুদ্ধের সময় তিনি (লুৎফর রহমান খান আজাদ) ছিলেন ৮ম শ্রেণির ছাত্র। তার বাবা প্রয়াত হবিবুর রহমান ছিলেন বীর মুক্তিযোদ্ধা।
১৯৯১ ও ২০০১ সালে বিএনপির নেতৃত্বাধীন সরকারের প্রতিমন্ত্রীও ছিলেন আজাদ। সেসময় কয়েক দফায় সরকার মুক্তিযোদ্ধার তালিকা নবায়ন করলেও তিনি ওই সময় মুক্তিযোদ্ধা দাবি না করে আওয়ামী লীগ সরকারের সময় মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে তালিকাভুক্ত হন। অভিযোগ উঠেছে, ২০২২ সালের ২১ জুন মুক্তিযোদ্ধা মন্ত্রণালয় কর্তৃক প্রকাশিত গেজেটে প্রথমবারের মতো মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে গেজেটভুক্ত হন লুৎফর রহমান খান আজাদ।
টাঙ্গাইলের ঘাটাইল উপজেলার বীর মুক্তিযোদ্ধারা জানান, লুৎফর রহমান আজাদ যুদ্ধের সময় অনেক ছোট ছিলেন। তিনি কখনোই মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেননি। তার ভাতিজা একই আসনের সাবেক সংসদ সদস্য আওয়ামী লীগ নেতা আমানুর রহমান রানা ও চাচাতো ভাই টাঙ্গাইল জেলা আওয়ামী লীগ নেতা আতাউর রহমান খানের সহযোগিতায় নতুন করে মুক্তিযোদ্ধা হয়েছেন। আওয়ামী লীগের আমলে যেখানে ঘাটাইলের বিএনপির সমর্থক মুক্তিযোদ্ধাদের ভাতা বন্ধ, সনদ বাতিল করা হয়েছে সেখানে তিনি আওয়ামী লীগের সঙ্গে আঁতাত করে ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা হয়েছেন।
ঘাটাইল পৌর বিএনপির সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল বাসেত করিম জানান, বিএনপির রাজনীতি করার কারণে ২০২১ সালে তার মুক্তিযোদ্ধা সনদ বাতিল করা হয়। কিন্তু আশ্চর্যের বিষয় মুক্তিযুদ্ধে অংশ না নিলেও ২০২২ সালের জুন মাসে লুৎফর রহমান আজাদকে মুক্তিযোদ্ধা সনদ দেওয়া হয়। সাবেক এমপি আমানুর রহমান খান রানা ও তার বাবা সাবেক এমপি আতাউর রহমান খান লুৎফর রহমান আজাদকে মুক্তিযোদ্ধা সনদ পাইয়ে দেন বলে অভিযোগ করেন তিনি। লুৎফর রহমান খান আজাদ ও আতাউর রহমান চাচাতো ভাই।
তিনি আরও বলেন, আমি ১৯৭৩ সালেও মুক্তিযোদ্ধা কমান্ড কাউন্সিলের সদস্য সচিব হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছি। সেই সময় থেকে মুক্তিযুদ্ধের ভাতা পেতাম। কিন্তু রাজনৈতিক কারণে ২০২১ সালে আমার সনদই বাতিল করা হয়। কাদেরিয়া বাহিনীতে আমি নিজে খোরশেদ আলমের নেতৃত্বে মুক্তিযুদ্ধ করেছি। কই তাকে তো আমরা কোনোদিনও রণাঙ্গণে দেখিনি।
ঘাটাইল উপজেলা বিএনপির সভাপতি সিরাজুল হক ছানা বলেন, পতিত ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগের আমলে আমরা জেল-জুলুমের শিকার হয়েছি। আর লুৎফর রহমান খান আজাদ মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে আওয়ামী লীগ থেকে পুরস্কৃত হয়েছেন। আওয়ামী লীগের সঙ্গে আঁতাতের কারণেই আজাদ দুর্দিনে ঘাটাইলের বিএনপির নেতাদের কোনো খোঁজ খবর নেননি।
এ বিষয়ে লুৎফর রহমান খান আজাদ বাংলানিউজকে বলেন, আমি কোনো সময় মুক্তিযোদ্ধা সনদ প্রয়োজন মনে করিনি। এ জন্য আমি যখন মন্ত্রী ছিলাম তখন সনদ নেইনি। এরপর আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর আবেদন করেছিলাম। তারপরও চার বছর ঘুরতে হয়েছে।
তবে আওয়ামী লীগের সঙ্গে আঁতাত করে সনদ নেওয়ার বিষয়টি তিনি অস্বীকার করেন।
এ বিষয়ে মুখ খুললেন বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী। তিনি বাংলানিউজকে বলেন, লুৎফর রহমান খান আজাদ কীভাবে মুক্তিযোদ্ধা হন। তার বাবা হবিবুর রহমান ছিলেন মুক্তিযোদ্ধা। সেসময় লুৎফর রহমান খান আজাদ ছিলেন ৮ম শ্রেণির ছাত্র। তাহলে কীভাবে তিনি মুক্তিযুদ্ধ করে বা সনদ পান। তবে তিনি রাজাকার বা মুক্তিযুদ্ধের বিপক্ষে ছিলেন না।
বর্তমানে এ দেশে টাকার বিনিময়ে সবাই মুক্তিযোদ্ধা হতে পারেন বলে মন্তব্য করেন বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী।