
বাংলাদেশে ৫ই আগস্ট গণ-অভ্যুত্থানের পর শেখ হাসিনা পালিয়ে ভারতে আশ্রয় নেয়ার প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই বাংলাদেশের সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাছান মাহমুদ বেলজিয়াম চলে গিয়েছিলেন বলে শোনা গিয়েছিল। হাছান মাহমুদের বেলজিয়ামের নাগরিকত্ব রয়েছে বলে বিভিন্ন সূত্রে নিশ্চিত হওয়া গিয়েছে। এক সময়ে তিনি লন্ডন গিয়েছিলেন। সেখানে তাকে যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগের প্রতিবাদ সমাবেশে দেখা গিয়েছে। তবে কয়েকদিন আগে তিনি কলকাতায় এসেছেন। কলকাতায় থাকা অন্যান্য নেতা ও অনুগামীদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। কলকাতায় হাছান মাহমুদের বেশ কিছু ঘনিষ্ঠ জন রয়েছেন। তাদের সঙ্গেও যোগাযোগ করছেন। কলকাতায় তার উপস্থিতি তিনি নিজেই নিশ্চিত করেছেন। কলকাতায় দুই সাংবাদিককে সাক্ষাৎকার দিয়েছেন। তিনি বাংলাদেশের বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে অনেক কথা বলেছেন। হাছান মাহমুদ মনে করেন, গোয়েন্দা ব্যর্থতার জন্যই শেষ পর্যন্ত শেখ হাসিনাকে দেশ ছাড়তে হয়েছে। জটিল পরিস্থিতিতে পুলিশ-সেনার ওপর নির্ভর করে ভুল করেছিল দল। কলকাতায় বসে হাসিনাবিরোধী অভ্যুত্থানের কারণও ব্যাখ্যা করেছেন সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাছান মাহমুদ। তিনি জোরের সঙ্গে বলেন, স্বমহিমায় ফিরবে আওয়ামী লীগ।
তিনি জানিয়েছেন, দলনেত্রী দলের প্রতিটি কর্মীর সঙ্গে প্রতিনিয়ত যোগাযোগ রেখে চলেছেন। তার নির্দেশমতোই সংগঠনের কাজ চলছে। এটা ঠিক, এই মুহূর্তে বাংলাদেশে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা অনেকেই দেশের বাইরে আছেন। অনেককে একাধিক মামলায় জেলে পুরে রাখা হয়েছে। তা বলে আমরা পিছিয়ে থাকবো না। সংগঠন মজবুত করার কাজ চলছে। আমি আশাবাদী সঠিক সময়ই আমরা আবার নিজেদের স্বমহিমায় তুলে ধরতে পারবো।
প্রসঙ্গত, হাছান মাহমুদের মেয়ে নাফিসা জুমাইনা মাহমুদের নামে চারটি এবং তার স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিভিন্ন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের নামে থাকা ১২১টি ব্যাংক হিসাব অবরুদ্ধ করার আদেশ দিয়েছেন ঢাকার আদালত। গত ২৩শে জুন সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাছান মাহমুদ ও তার স্ত্রী নুরান ফাতেমার ব্যাংক হিসাবও অবরুদ্ধ করার আদেশ দিয়েছেন আদালত।
আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতা ও অঙ্গসংগঠনের শীর্ষ পদাধিকারীরাও ৫ই আগস্টের পর পরই গোপনে দেশ ছেড়েছেন। অনেকে প্রথম দিকে দেশের মধ্যে আত্মগোপনে থাকলেও পরবর্তী সময়ে দেশ ছেড়েছেন। পালিয়ে যাওয়া আওয়ামী লীগের সাবেক মন্ত্রী, সাংসদ, বিভিন্ন শহরের মেয়র ও অন্যান্য পদাধিকারীরা ভারতের কলকাতা, দিল্লি, চেন্নাইসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে গোপনে আশ্রয় নিয়েছেন। তবে কলকাতাতেই রয়েছেন অধিকাংশ সাবেক মন্ত্রী ও বিভিন্ন স্তরের পদাধিকারী ও সাংসদরা। মূলত কলকাতার নিউটাউন-রাজারহাটের পশ এলাকায় বিলাসবহুল আবাসনের ফ্ল্যাট ভাড়া নিয়ে রয়েছেন। কয়েকজন বাদে অন্যদের সঙ্গে পরিবার-পরিজন রয়েছেন। ছেলেমেয়েদের কলকাতার স্কুলে ভর্তিও করা হয়েছে বলে আওয়ামী লীগ নেতাদের ঘনিষ্ঠ সূত্রে বলা হয়েছে।
কলকাতায় অবস্থানরত আওয়ামী লীগের নেতারা কোথায় কীভাবে থাকছেন সে সম্পর্কে রাজ্য ও কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা এজেন্সিগুলো ওয়াকিবহাল বলে নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞদের সূত্রে নিশ্চিত করা হয়েছে। তাদের মতে, ভারতে বসে কোনো অসামাজিক ও অনৈতিক কাজে যুক্ত না হলে ভারতের গোয়েন্দারা কোনো পদক্ষেপ
করবেন না।
তবে সূত্র মারফত জানা গেছে, কয়েকজন মাঝারি নেতাকে বেচাল আচরণের জন্য সতর্ক করা হয়েছে। বিধাননগর পুলিশের একটি সূত্রে বলা হয়েছে তারা সকলের ওপর নজর রেখেছেন। আওয়ামী লীগের ঘনিষ্ঠ সূত্র থেকে জানা গিয়েছে, আধ ডজনের বেশি এক সময়ের দাপুটে ও প্রভাবশালী মন্ত্রী কলকাতায় রয়েছেন। এরা হলেন- সাবেক সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, সাবেক শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী (নওফেল), সাবেক মন্ত্রী মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া, সাবেক প্রতিমন্ত্রী আবদুল ওয়াদুদ দারা, সাবেক গণপূর্ত প্রতিমন্ত্রী শরিফ আহমেদ, সাবেক পাট ও বস্ত্রমন্ত্রী এবং আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক প্রমুখ।