
জুলাই গণঅভ্যুত্থানের এক বছর পূর্তিতে ‘দেশ গড়তে জুলাই পদযাত্রা’ কর্মসূচি পালন করছে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)। দলটির নেতাকর্মীরা প্রতিটি জেলায় সমাবেশ করছেন। পদযাত্রায় দেশবাসীর কাছ থেকে ব্যাপক সাড়া পাচ্ছেন বলে দাবি করেন দলটির নেতারা।
তাদের এ পদযাত্রার নির্বাচনী প্রচারণার অংশ কি না, যদি তাই হয় তাহলে প্রতীক বরাদ্দের আগেই কেন প্রচারণা শুরু, তাদের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনাই বা কী— এসব বিষয় নিয়ে জাগো নিউজের সঙ্গে কথা বলেন এনসিপির যুগ্ম আহ্বায়ক মনিরা শারমিন। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন জাগো নিউজের নিজস্ব প্রতিবেদক মো. নাহিদ হাসান।
জাগো নিউজ: অভ্যুত্থানের এক বছর পূর্তিতে সারাদেশে ‘দেশ গড়তে জুলাই পদযাত্রা’ কর্মসূচি চালিয়ে যাচ্ছেন। মানুষের সাড়া পাচ্ছেন কেমন?
মনিরা শারমিন: আমরা জুলাই পদযাত্রায় যখন মানুষের দ্বারে দ্বারে যাচ্ছি তাদের যে অভূতপূর্ব সাড়া পাচ্ছি এটা আমরা কল্পনাও করিনি। বাংলাদেশের রাজনীতির ইতিহাস ও সংস্কৃতিতে রাজনীতিটা শুধু রাজনীতিবিদদের জন্য রেখে দেওয়া হয়। জনগণের কাছে না যাওয়ায় রাজনীতিবিদদের সঙ্গে আন্তরিকতার সম্পর্ক তৈরি হয় না। কিন্তু আমরা দেখছি স্কুল-কলেজের ছেলে-মেয়েরা থেকে শুরু করে বয়োজ্যেষ্ঠ মানুষ পর্যন্ত যারা বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের প্রতি ভরসা করতে চেয়েছেন কিন্তু পারেননি, তাদের অংশগ্রহণে আমরা বুঝতে পারছি তারা নতুন এ দলের প্রতি ভরসা রাখতে শুরু করেছেন। শুধু সাপোর্ট নয়, সাধারণ জনগণের অংশগ্রহণ পাচ্ছি। অভূতপূর্ব ছাড়া পাচ্ছি।
জুলাই অভ্যুত্থানের এক বছর পূর্তিতে পদযাত্রার মাধ্যমে মানুষকে মনে করিয়ে দিতে চাই কী কারণে, কোন আকাঙ্ক্ষা থেকে ‘জুলাই’ হয়েছিল। সবাই সবার জায়গা থেকে নেমে এসেছিল। আবার রাজনীতিবিদদের কাছে জনগণের অপূর্ণ আকাঙ্ক্ষাও আমরা জানতে চাচ্ছি।
জাগো নিউজ: যেহেতু সামনে জাতীয় নির্বাচন। এই পদযাত্রা নির্বাচনী প্রচারণার অংশ কি না—
মনিরা শারমিন: এনসিপি নতুন একটি রাজনৈতিক দল, এখনো ছয় মাস বয়স হয়নি। এই রাজনৈতিক দলটিকে জনগণের কাছে নিয়ে যাওয়া এবং আমাদের রাজনীতি কী হবে— সেটা বোঝানোর একটা ব্যাপার ছিল। অনেকে বুঝতেন না এনসিপি কী, গ্রামগঞ্জের অনেকে এনসিপির নাম জানতেন না। আমাদের একটা দায়বদ্ধতার জায়গা ছিল যে সাধারণ মানুষের কাছে আমাদের যেতে হবে। নির্বাচন তো অনেক পরের ব্যাপার, আমরা সাধারণ মানুষের কাছে পৌঁছাতে চেয়েছিলাম। বাংলাদেশের রাজনৈতিক সংস্কৃতিতে নির্বাচনের অনেক ধরনের ক্যালকুলেশন আছে। সেখানে টাকা-পয়সার খেলা আছে। নির্বাচনমুখী হলেও আমরা যেহেতু দলের নিবন্ধন চেয়েছি, আমরা অবশ্যই নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে চাই। জুলাই অভ্যুত্থানের এক বছর পূর্তিতে পদযাত্রার মাধ্যমে মানুষকে মনে করিয়ে দিতে চাই কী কারণে, কোন আকাঙ্ক্ষা থেকে ‘জুলাই’ হয়েছিল। সবাই সবার জায়গা থেকে নেমে এসেছিল। আবার রাজনীতিবিদদের কাছে জনগণের অপূর্ণ আকাঙ্ক্ষাও আমরা জানতে চাচ্ছি।
জাগো নিউজ: দল নিবন্ধনের আবেদনের সময় আপনারা শাপলা, কলম এবং মোবাইল প্রতীক পছন্দের বিষয়ে জানিয়েছিলেন। নির্বাচন কমিশন সিদ্ধান্ত নিয়েছে শাপলা প্রতীক রাজনৈতিক দলের প্রতীক হিসেবে বরাদ্দ দেওয়া হবে না। ইসি থেকে প্রতীক বরাদ্দের আগেই আপনারা কেন শাপলা নিয়ে প্রচারণা শুরু করলেন?
মনিরা শারমিন: ‘আপনার চোখে নতুন বাংলাদেশ’ ক্যাম্পেইনের মাধ্যমে জনগণ থেকে আমরা তিনটি পছন্দের মার্কা পেয়েছি। এই তিনটির মধ্যে শাপলা প্রতীক সর্বোচ্চ মতামতে এগিয়ে ছিল। জনগণ মনে করেন এনসিপির মার্কা শাপলা হতে পারে। শাপলা জনমানুষের সঙ্গে সম্পৃক্ত, যেহেতু সাধারণ মানুষের আগ্রহ ছিল তাই আমরা শাপলা নিয়েই প্রচারণা চালিয়েছি।
আমরা বুঝতে চাই। নির্বাচন কমিশন যে ব্যাখ্যা দিয়েছে তাতে আমরা সন্তুষ্ট নই। আমরা পরিষ্কার ব্যাখ্যা চাই যে, কী কারণে শাপলা প্রতীক হতে পারে না। কমিশন স্পষ্ট ব্যাখ্যা করেনি বরং গতানুগতিক ব্যাখ্যা দিয়েছে। জাতীয় প্রতীকের যে ইস্যু দেখানো হচ্ছে, আসলে কিন্তু শাপলা জাতীয় প্রতীক নয়। নির্বাচন কমিশন এখনই পক্ষপাতমূলক আচরণ করছে।
জাগো নিউজ: রাজনৈতিক দলের প্রতীকের মধ্যে তো শাপলা বরাদ্দ রাখা হয়নি। এখন কী করবেন?
মনিরা শারমিন: আমরা বুঝতে চাই। নির্বাচন কমিশন যে ব্যাখ্যা দিয়েছে তাতে আমরা সন্তুষ্ট নই। আমরা পরিষ্কার ব্যাখ্যা চাই যে, কী কারণে শাপলা প্রতীক হতে পারে না। কমিশন স্পষ্ট ব্যাখ্যা করেনি বরং গতানুগতিক ব্যাখ্যা দিয়েছে। জাতীয় প্রতীকের যে ইস্যু দেখানো হচ্ছে, আসলে কিন্তু শাপলা জাতীয় প্রতীক নয়। নির্বাচন কমিশন এখনই পক্ষপাতমূলক আচরণ করছে।
জাগো নিউজ: আপনারা দলীয় সিদ্ধান্তে শহীদ মিনারে জুলাই ঘোষণাপত্র পাঠের কথা বলেছিলেন। এখনো কি ওই একই সিদ্ধান্তে অনড়?
মনিরা শারমিন: আমরা ৩ আগস্ট সামনে রেখে বিভিন্ন জায়গায় প্রচার-প্রচারণা চালাচ্ছি। আমরা যেসব জেলায় পদযাত্রা করছি গণমানুষের সঙ্গে এ বিষয়ে আলোচনা হচ্ছে। জুলাই ঘোষণাপত্রের বিষয়ে সরকারের পক্ষ থেকে বিভিন্ন সময় আমরা শুনেছিলাম। কিন্তু আমরা প্রতারিত হয়েছি। এ সময়ের মধ্যে সরকারের পক্ষ থেকে কোনো সিদ্ধান্ত না এলে নিজেরাই সিদ্ধান্ত নিয়েছি জুলাই ঘোষণাপত্র পাঠ করবো। এ বিষয়ে সাধারণ মানুষের কাছ থেকেও আমরা ব্যাপক সমর্থন পাচ্ছি।