Image description

আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন ব্যাহত করতে পরিকল্পিতভাবে দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটানো হচ্ছে—এমন আশঙ্কা জানিয়েছে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপি। গতকাল বুধবার গুলশানে দলটির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সভায় এই উদ্বেগ জানিয়ে সরকারকে দ্রুত কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়ার আহ্বান জানানো হয়।

বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এই বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন দলের জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, ড. আব্দুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান, মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী, সালাহ উদ্দিন আহমেদ, সেলিমা রহমান, ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু, মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন আহমেদ (বীর বিক্রম) এবং অধ্যাপক ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেন।

বৈঠকে মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ৮ জুলাইয়ের পূর্ববর্তী স্থায়ী কমিটির সভায় গৃহীত সিদ্ধান্তগুলোর বাস্তবায়ন অগ্রগতি সম্পর্কে সদস্যদের অবহিত করেন।

বৈঠকে গোপালগঞ্জে জাতীয় নাগরিক পার্টির সভায় ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগের দুর্বৃত্ত ও সমর্থকদের হামলায় চারজন নিহত হওয়ার ঘটনায় তীব্র নিন্দা ও ক্ষোভ প্রকাশ করা হয়। বিএনপি মনে করে, গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া নস্যাৎ করতে এবং ফ্যাসিস্টবিরোধী আন্দোলনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখা জাতীয় নাগরিক পার্টির কার্যক্রম প্রতিহত করতেই পরিকল্পিত এই আক্রমণ চালানো হয়। এর ফলে সরকার ১৪৪ ধারা ও কারফিউ জারি করতে বাধ্য হয়, যা এই মুহূর্তে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াকে ব্যাহত করবার নীলনকশা বলে বিবেচিত। সভা মনে করে, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সরকারের ব্যর্থতা স্পষ্ট, এবং রাজনৈতিক দলগুলোর কর্মসূচি নির্ধারণে সর্বোচ্চ সতর্ক না হলে গণতন্ত্র বিরোধী শক্তিকে সুযোগ করে দেওয়া হবে।

জাতীয় ঐকমত্য কমিশন বিষয়ে সালাহ উদ্দিন আহমেদ সভায় সর্বশেষ অগ্রগতির বিবরণ দেন। সিদ্ধান্ত হয় আজ বৃহস্পতিবার রাত ৮টায় এ বিষয়ে আবারও আলোচনা হবে।

বৈঠকে উদ্বেগ প্রকাশ করে জানানো হয়, আগামী ফেব্রুয়ারিতে প্রতিশ্রুত জাতীয় সংসদ নির্বাচন ব্যাহত করতে একটি মহল পরিকল্পিতভাবে দেশে হত্যা, ছিনতাই, ডাকাতি, চাঁদাবাজিসহ নানা অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড বাড়িয়ে চলেছে। অথচ সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগগুলোর অযোগ্যতা ও নির্লিপ্ততায় পরিস্থিতি আরও অবনতির দিকে যাচ্ছে। দায়িত্বপ্রাপ্ত উপদেষ্টারা কেবল গণমাধ্যমে বক্তব্য দিচ্ছেন, কার্যকর কোনো পদক্ষেপ নিচ্ছেন না। সভা দ্রুত আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি উন্নয়নে সর্বাত্মক ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানায়।

বৈঠকে মিডফোর্ড হাসপাতালে সংঘটিত নৃশংস হত্যাকাণ্ডে বিএনপিকে জড়িয়ে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের “শিষ্টাচারবিবর্জিত” বক্তব্য ও অশ্লীল স্লোগানে জাতি স্তম্ভিত হয়েছে বলে জানানো হয়। সভা মনে করে, শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান, দেশনেত্রী খালেদা জিয়া এবং তরুণ জনপ্রিয় নেতা তারেক রহমান সম্পর্কে কুরুচিপূর্ণ মন্তব্য শুধু রাজনৈতিক পরিবেশকেই কলুষিত করবে না, বরং জাতীয় নির্বাচন ও গণতান্ত্রিক উত্তরণেও বাধা তৈরি করবে। সভা প্রত্যাশা করে, রাজনৈতিক দলগুলো পারস্পরিক সম্মান ও সৌহার্দ্য বজায় রেখে দায়িত্বশীল আচরণ করবে এবং অরাজনৈতিক কর্মকাণ্ড থেকে বিরত থাকবে।

সভা শেষে মিডফোর্ডসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে সংঘটিত হত্যাকাণ্ডের তীব্র নিন্দা জানিয়ে অপরাধীদের দ্রুত গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় আনার দাবি জানানো হয়। সভাপতি তারেক রহমান ধন্যবাদ জ্ঞাপনের মাধ্যমে সভা মুলতবি করেন।