
পাবনার ঈশ্বরদী উপজেলার সাঁড়াঘাট এলাকা এবং পার্শ্ববর্তী নাটোরের লালপুরে পদ্মার চরে অভিযান চালিয়েছে সেনাবাহিনী। এ সময় স্থানীয় সন্ত্রাসী ও আওয়ামী লীগ নেতা কাকন বাহিনীর আস্তানা থেকে তিনজনকে আটক করা হয়েছে।
বৃহস্পতিবার ভোর থেকে দুপুর পর্যন্ত ঈশ্বরদীর সাঁড়াঘাট, লালপুরের দিয়ার বাহাদুরপুর এলাকায় এ অভিযান চলে। এতে অংশ নেন সেনাবাহিনীর পাবনা ও নাটোর ক্যাম্পের সদস্যরা।
আটককৃতরা হলেন- কুষ্টিয়ার ভেড়ামারার সাতবাড়িয়ার দক্ষিণ ভবানীপুরের মৃত আজিজুল হকের ছেলে ও আওয়ামী লীগ নেতা কাকনের ভায়রা মেহেফুজ সোহাগ, ঈশ্বরদীর আরমবাড়িয়ার মঞ্জুরুল ইসলামের ছেলে আশরাফুল ইসলাম বাপ্পি এবং লালপুরের কাইগি মারিরচর এলাকার ভাষানের স্ত্রী রোকেয়া খাতুন। তারা আওয়ামী লীগ নেতা কাকনের লোক বলে জানা গেছে।
আটককৃতদের দেওয়া তথ্য এবং উদ্ধার হওয়া তালিকায় দেখা গেছে, লক্ষ্মীকুণ্ডা নৌ পুলিশকে মাসে চার লাখ টাকা, নাটোরের ডিসিকে মাসে এক লাখ টাকা, সার্কেল এএসপিকে ৫০ হাজার টাকা ও বাগাতিপাড়া থানার ওসিকে ২৫ হাজার টাকা, নাটোরের এখন টেলিভিশনের সাংবাদিককে ২৫ হাজার টাকা এবং এশিয়ান টেলিভিশনের পায়েল হোসেন রিন্টুকে সপ্তাহে পাঁচ হাজার করে দেওয়া হয়।
অভিযানে কাকন বাহিনীর আস্তানায় তল্লাশি চালিয়ে তিনটি বিদেশি আগ্নেয়াস্ত্র, দেশি রামদা, চাইনিজ কুড়াল, নির্যাতনের বিভিন্ন সরঞ্জাম, গোলাবারুদ, ফেনসিডিল, ইয়াবা, গাজার গাছ, মোবাইল ফোন, সিমকার্ড, মাথার খুলি, ১২ লাখ ৩৬ হাজার টাকা পাওয়া যায়। এ ছাড়া নাটোরে ডিসি, সার্কেল এএসপি, নৌ পুলিশ, থানার ওসি, টহল পুলিশ ও স্থানীয় রাজনৈতিক নেতারা মাসোহারার টাকা প্রতিদিন, সপ্তাহ ও মাসে কে কত শতাংশ পান সেসবের দুটি ভলিউম বইও উদ্ধার করা হয়।
বালু ব্যবসায়ী ও স্থানীয়সূত্রে জানা গেছে, পাবনার ঈশ্বরদী, কুষ্টিয়ার ভেড়ামারা ও দৌলতপুর এবং নাটোরের লালপুরসহ বিভিন্ন এলাকার বালুমহালের নিয়ন্ত্রণ করছে লালপুরের সন্ত্রাসী বাহিনীখ্যাত ‘কাকন বাহিনী’। অধিকাংশ ঘাট নিয়ন্ত্রণে নিলেও সাঁড়াঘাটের বৈধ ইজারাদার থাকায় ওই ঘাট নিয়ন্ত্রণে নিতে ব্যর্থ হয়। ওই ঘাটে গত ৫ জুন ফিল্মি স্টাইলে গুলি চালায় কাকন বাহিনী, যা ভাইরাল হয়। গণমাধ্যমে ওই বিষয়ে সংবাদ প্রকাশের পর কয়েকদিন তাদের কর্মকাণ্ড থেমেছিল। ওই ঘটনার রেশ কাটতে না কাটতেই গত শনিবার সকালে আবারও ফিল্মি স্টাইলে গুলি চালায় কাকন বাহিনী। স্পিডবোট ও নৌকার মাধ্যমে এসে এলোপাতাড়ি গুলি চালায়। এ সময় ঘাস কাটতে গিয়ে গরুর রাখাল সোহান হোসেন গুলিবিদ্ধ হন। বিষয়টি গণমাধ্যমে উঠে এলে সেনাবাহিনী গতকাল বড় ধরনের অভিযান পরিচালনা করে।
আটক মেহেফুজ সোহাগ ও বাপ্পি বলেন, আমরা এখানে নৌকা চালাই ও ক্যাশিয়ারের কাজ করি। কাকন বাহিনী এ অঞ্চলে সন্ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেছে। এখানে রাতে মাদক সেবন ও বিক্রি, অস্ত্র কারবারি ও নারীদের এনে আনন্দ-ফুর্তি করা হয়। কাকন বাহিনীর লোকজনের বাড়ি থেকে বিদেশি অস্ত্র, দেশি অস্ত্র, মাদকদ্রব্য, টাকাসহ বিপুল পরিমাণ সরঞ্জাম পেয়েছে। এগুলো দিয়ে কাকন বাহিনী সন্ত্রাসী কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছিল।
রাজশাহীর বাঘার বালুমহালের বৈধ ইজারাদার মিজানুর রহমান সরকার বলেন, আমরা সরকারের কাছ থেকে ইজারা নিয়ে বৈধভাবে বালুর ব্যবসা করে আসছি। কয়েক বছর ধরেই কাকন বাহিনী সন্ত্রাসী কার্যক্রম ও প্রতিটি নৌকা থেকে জোরপূর্বক চাঁদা আদায় করে আসছে। টাকা দিতে না চাইলে নৌকা যেতে দেয় না। সেনাবাহিনীর অভিযান ঐতিহাসিক অভিযান বলে মনে করছি।
নাটোরের লালপুর থানার ওসি মমিনুজ্জামান বলেন, গ্রেপ্তার ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে লক্ষ্মীকুণ্ডা নৌ পুলিশ এজাহার দিলে মামলার মাধ্যমে গ্রেপ্তার দেখিয়ে কারাগারে পাঠানো হবে।
রাজশাহী বিভাগীয় কমিশনার (অতিরিক্ত সচিব) খন্দকার আজিম হোসেন বলেন, এ বিষয়ে আমি কিছুই জানি না। খোঁজ নেওয়া হবে বলে ফোন কেটে দেন।
নাটোরের পুলিশ সুপার আমজাদ হোসাইন বলেন, আপনার থেকেই প্রথম শুনলাম। আমার সার্কেল অফিসার ও দুই ওসির ব্যাপারে যেটি বললেন, ডকুমেন্টসগুলো দেন। এখনই প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিচ্ছি।