Image description

বিশিষ্ট রাজনৈতিক বিশ্লেষক এবং নির্বাচনবিষয়ক সংস্কার কমিশনের সদস্য ডা. জাহেদ উর রহমান বলেছেন, সরকারের একজন উপদেষ্টা, ছাত্র উপদেষ্টার একটা স্ট্যাটাস পড়ি- ‘প্রস্তর যুগে স্বাগতম, কেউ ইতিহাস থেকে শিক্ষা নেবেন না, ধন্যবাদ’। একটু আনন্দ আনন্দ ভাব, প্রস্তর যুগে স্বাগতম মানে দেশ প্রস্তর যুগে গেছে, বিকজ অফ পার্টি, অথচ এক বছর ধরে আপনি ক্ষমতায়। এই দেশ যদি প্রস্তর যুগে গিয়ে থাকে, তবে তা সত্যি সত্যি বিকজ অফ ইউ। এটুকু ভাবার বুদ্ধিও আমাদের এই উপদেষ্টার মাথায় নেই।

গতকাল রবিবার (১৩ জুলাই) রাতে একটি গণমাধ্যমের একটি টক শো অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেন।

জাহেদ উর রহমান বলেন, ‘বিএনপি চাঁদাবাজি করবে না, বিএনপি মারামারি করবে না, খুনাখুনি করবে না—এটা আপনি এক্সপেক্ট করতে পারেন। একটা স্টেট এবং একটা গভর্নমেন্ট এটা এক্সপেক্ট করবে না। ওর কতগুলো কোয়ারসিভ ফোর্স আছে—পুলিশ আছে, আদার বাহিনী আছে, তদন্ত আছে, বিচার আছে।

 
আমাদের উন্নয়ন বাজেট ২ লাখ কোটি টাকার মতো। সাড়ে ৫ লাখ কোটি টাকা হলো অপারেশনাল বাজেট। আমরা সরকার পুষতে সাড়ে ৫ লাখ কোটি টাকা খরচ করি। এর মধ্যে ঘুষটুস তো আছে, এটা সরিয়ে রাখি।
 
সাড়ে ৫ লাখ কোটি টাকা দিয়ে আপনি-আমি যখন সরকার পুষি, ওই সরকারকে তো এগুলো ঠেকাতে হবে। নইলে ওনারা ওখানে আছেন কেন? আমি আপনাকে পুষছি, আপনি এগুলো ঠেকাবেন, আপনি দীর্ঘদিন থেকে ঠেকাননি বলে আজকে এই জায়গায় ঠেকেছে। সরকার রিলাক্টেন্ট থাকতে চাইছে যে—একটা মওকা পাওয়া গেছে। আমরা এই ভদ্রলোককে তো প্রায়ই এনসিপি বলি, ওনারা খুব গোস্যা করেন, এই দুই ছাত্র উপদেষ্টা যে আদতে এনসিপির লোক।’

 

তিনি আরো বলেন, ‘তারা যেহেতু বিএনপির সঙ্গে রাজনীতিতে আছে, তারা এক ধরনের ফাইট করতে পারে যে—তুমি খারাপ তারপরও এটা এক্সট্রিম পর্যায়ে গেছে।

 
এটা একটা বীভৎস বি রাজনৈতিকীকরণের ব্যাপার। ওই উপদেষ্টা এত খুশি হলেন কেন? ওনাদের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে প্রায়ই দেখি বলতে—এই তুমি কি দিয়ে ভাত খাইছ? খুবই সহজ-সরল ভঙ্গি। সহজ মানুষও, হয়তো ভালো মানুষও। এইগুলো হচ্ছে ওনার কাজ এবং উনি আবার কৃষিমন্ত্রী। উনি এটা সামলাতে পারেন না, উনি একই সঙ্গে আরেকটা বিরাট মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে।

 

সরকার কি কোনো দিন চেষ্টা করেছে যে আমি পাল্টে দেখি। ডক্টর ইউনূস কি শেখ হাসিনা? শেখ হাসিনা কাউকে চেঞ্জ করতেন না। কারণ শেখ হাসিনা কোনো ভুল করেন না, ডিক্টেটর এ রকম হয়। এ জন্য উনি নানা সমস্যা হলেও কাউকে পরিবর্তন করতে চাইতেন না। ডক্টর ইউনূস তা নন। সরকারের এই দায়কে আমাদের সিরিয়াসলি প্রশ্ন করা দরকার। বিভিন্ন জায়গায় মব হয়েছে। এটা ঠিক মব না। এটা একদম ব্যক্তিগত একটা শত্রুতায় এসে এই ঘটনা ঘটিয়েছে।’

গণ-অভ্যুত্থানে আমরা যখন একত্র হয়ে যাই সেই সাইকোলজি আসলে সবসময় থাকে তা না উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘বাস্তবে আমরা যথেষ্ট সাহসী তো নই। আর দ্বিতীয় কথা সাহস হবেও বা কেন? যেখানে আপনার নিজের জীবন বিপন্ন হয়ে যেতে পারে। এবং আপনি আপনার জীবন বিপন্ন হলে আপনি স্টেটের সাহায্য ধরুন আপনি আহত হলেন। আপনার কি একটা ভালো চিকিৎসা পাওয়ার গ্যারান্টি আছে? বিচার-টিচার পরের কথা। আপনি চিকিৎসা করাতে গিয়ে ফতুর হয়ে যেতে পারেন। তো এসব ভয় ছিল, থাকবে মাঝখানে একটা ম্যাজিক্যাল মোমেন্ট এসেছিল। এটা হয় ৭১ সালে, আমরা একটা ম্যাজিক্যাল মুভমেন্টের মধ্যে গেলাম। তারপর মুক্তিযোদ্ধারা যখন নানা রকম অনিয়ম-দুর্নীতি করতে শুরু করেন, তখন ‘৭৩ সালে ‘আবার তোরা মানুষ হ’ সিনেমা বানাতে হয়েছে।

 

২০২৪-এ যারা রাস্তায় নেমেছেন, তাদের চাইতে হাজার-লক্ষ গুণ বেশি ঝুঁকি নিয়ে একটা প্রশিক্ষিত মিলিটারির বিরুদ্ধে নেমেছিলেন, সেই মুক্তিযোদ্ধারা লুটপাট-লুটতরাজ, নানা অনিয়ম-দুর্নীতি, নকল-টকল, টেবিলের ওপর অস্ত্র রেখে নকল করছে—এগুলো তো সিনেমায় আছে,‌ আমরা বানিয়েছি না? আসলে এটা রাতারাতি পাল্টে যায় না, এটা আরো থাকবে।’

বাংলাদেশের ইতিহাসে সম্ভবত এত বেশি সমর্থন নিয়ে কোনো সরকার তৈরি হয়নি জানিয়ে এই রাজনৈতিক বিশ্লেষক বলেন, ‘প্রত্যেকটা রাজনৈতিক দল গণ-অভ্যুত্থানের সময় যারা মাঠে ছিল, সাধারণ জনগণের মাঝেও ডক্টর ইউনূস আসায় আমি মনে করি, কোনো প্রশ্ন ওঠেনি। এবং একটা জায়গায় হি ওয়াজ ভেরি সাকসেসফুল। আমাদের এই শুরুর সময়টাতে বিশেষ করে ভারতের যে তীব্র চাপ তৈরি হতে পারত, শেখ হাসিনার পরবর্তী সময়, সেটা ওনার মতো একজন বিরাট ফিগার থাকায় হয়নি।

সরাসরি অভ্যুত্থানের সঙ্গে জড়িত না যেমন- বদিউল আলম মজুমদার। উনি ওই দিনগুলোতে মাঠে নামেননি হয়তো কিন্তু শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে তার দীর্ঘ সময়ের অ্যাক্টিভিজম আছে। তার বাড়িতে হামলা পর্যন্ত হয়েছে, দীর্ঘ সময়ের এক্টিভিজম আছে। আসিফ নজরুল ছিলেন, রিজয়ানা হাসান ছিলেন, শারমিন মুর্শিদ রাস্তায় ছিলেন, আবার কেউ কেউ আছেন কোনো লেখালেখির অ্যাক্টিভিজমে। এখন সমস্যা যেটা দাঁড়িয়েছে আমি রেদার মনে করি- গণ-অভ্যুত্থানের সরকার এটাকে আমি বলতে প্রস্তুত কিন্তু গণ-অভ্যুত্থানে কত এক্সপেক্টেশন আছে।’

 

তিনি বলেন, ‘বিপ্লব বিপ্লব করে আমরা আসলে এই গণ-ভুত্থানটার ১২টা বাজিয়েছি। এটা বিপ্লব না। বিপ্লব হতে প্রবলেম কোথায়? ধরুন বিপ্লব। ধরুন আপনি গণ-অভ্যুত্থান যখন হয়েছে একটা পতন হয়েছে, আমরা কিছু সংস্কার, কিছু পরিবর্তন করব, আমরা একটু পরিবর্তন করে এই দিকে হাঁটা শুরু করব। মুহূর্তেই আপনি শুনতে পেলেন- এই সংবিধান ফেলে দাও। কেন শপথ সে শহীদ মিনারে হয়নি, আগে হয়নি  তো কী হয়েছে! এখন গিয়ে হওয়াও। এই করতে করতে মাঠটাকে নষ্ট করে ফেলা হয়েছে। গণ-অভ্যুত্থানের সুফল পাওয়ার জন্য যা যা করা দরকার ছিল, এই জিনিসগুলোই আসলে এটার জন্য দায়ী। এই সরকার, এই জিনিসগুলো আসলে ঠিকমতো হ্যান্ডল করতে পারেনি।’