
ঢাকায় ব্যবসায়ী হত্যাকাণ্ডে সমালোচনার মুখে থাকা বিএনপি ষড়যন্ত্রের অভিযোগ তুলে বিক্ষোভ মিছিল করেছে, সেই মিছিলে আগে দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, নির্বাচন হওয়ার বিষয়টি ঠিক হওয়ার ‘ষড়যন্ত্রকারীদের মাথা বিগড়ে’ গেছে।
বিএনপি ও তার ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের বিরুদ্ধে ‘ভয়ংকর ষড়যন্ত্র’ চলছে বলেও দাবি করেছেন তিনি।
সোমবার বিকালে ঢাকার দলের বিক্ষোভ মিছিলপূর্ব সমাবেশে বিএনপি মহাসচিব বলেন, “যারা আজকে তারেক সাহেবের বিরুদ্ধে বলে, তারা গণতন্ত্রের শত্রু, যারা দেশের বিরুদ্ধে বলে তারা গণতন্ত্রের শত্রু, তারা এই দেশের মানুষের বিরুদ্ধে কথা বলে।”
গণতন্ত্রের প্রশ্নে বিএনপি কোনো আপস করবে, এমন প্রত্যয় ব্যক্ত করে খরুল বলেন, “আমি ধিক্কার জানাচ্ছি ওই সমস্ত তথাকথিত রাজনৈতিক নেতাদের, যারা তারেক রহমান সম্পর্কে অম্লীল-অশ্রাব্য কথা বলেছেন।”
পুরান ঢাকার মিটফোর্ড এলাকায় বুধবার প্রকাশ্যে লালচাঁদ ওরফে মো. সোহাগ নামে এক ভাঙারি ব্যবসায়ীকে মাথা থেঁতলে হত্যার ঘটনায় বিএনপি ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়ে। সন্ত্রাস, চাঁদাবাজির ঘটনায় বিএনপিকে জড়িয়ে জামায়াতে ইসলামী, জাতীয় নাগরিক পার্টি-এনসিপিসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দল সারা দেশে বিক্ষোভ করছে।
ব্যবসায়ী হত্যা ঘটনায় বিএনপি তার তিন সহযোগী ও অঙ্গ সংগঠনের ৫ জন নেতাকে বহিষ্কার করেছে। একই সঙ্গে সরকারের বিরুদ্ধে মূল খুনিকে গ্রেপ্তার না করার অভিযোগ তুলেছে।
সমাবেশে ব্যবসায়ী হত্যার ঘটনার নিন্দা জানিয়ে বিএনপি মহাসচিব বলেন, “আমরা পরিস্কার করে বলেছি, এই খুনের ঘটনার পুঙ্খানুপুঙ্খ তদন্ত হতে হবে, যারা দায়ী তাদের খুঁজে বের করতে হবে এবং দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে।
“এটা (হত্যাকাণ্ড) যারা করছে তারা বাংলাদেশকে ধবংস করার জন্য করছে।”
নয়া পল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে মহানগর বিএনপি উত্তর ও দক্ষিণ শাখার যৌথ উদ্যোগে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের বিরুদ্ধে মিথ্যাচার, অপপ্রচার ও মিটফোর্ড এলাকায় প্রকাশ্যে ব্যবসায়ী হত্যার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে এই বিক্ষোভ মিছিল হয়।
মিছিলটি বিজয় নগর দিয়ে প্রেসক্লাবে গিয়ে শেষ হয়।
‘ওদের ষড়যন্ত্রের ফাঁদে পা দেবেন না’
বিএনপি ও তারেক রহমানের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র চলছে দাবি করে সেই ফাঁদে পা না দিতে নেতাকর্মীদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন ফখরুল।
“তারা চেষ্টা করছে আমাদের উত্তেজিত করে তাদের পাতা ফাঁদে পা দেওয়ার জন্য, যাতে আমরা উত্তেজিত হয়ে যাই।”
বিএনপির লক্ষ্য ২০২৬ সালের ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন, এ কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, “আমাদের তারেক রহমান সাহেব প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে লন্ডনে আলাপ করে ঠিক করেছেন। এর কোনো ব্যতিক্রম হবে না।”
ফখরুল বলেন, “নির্বাচন ঠিক হওয়ার পরের থেকে ওদের মাথা বিগড়ে গেছে। যখন প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে তারেক রহমান সাহেব নিশ্চিত করে ফেলেছেন যে, এবার নির্বাচন হবে তখন থেকেই তাদের মাথা বিগড়ে গেছে।”
বিএনপি নির্বাচন চায় এবং যে সিদ্ধান্ত (লন্ডন বৈঠকে) হয়েছে সেই সময়টাতে নির্বাচন চায় তুলে ধরে দলটির মহাসচিব বলেন, “আমরা ভোটের অধিকার ফিরিয়ে দিতে চাই, আমরা জনগণের খাওয়া-পরার ব্যবস্থা করতে চাই, চাকুরি সংস্থান করতে চাই, নতুন এক বাংলাদেশ আমরা নির্মাণ করতে চাই আমাদের নেতা তারেক রহমানের নেতৃত্বে।”
‘ওদের চক্রান্ত ভয়াবহ’
ফখরুল বলেন, “ওদের পরিকল্পনাটা অত্যন্ত ভয়াবহ যে, বাংলাদেশে আবার একটা অস্থিতিশীলতা সৃষ্টি করা, অস্থিরতা সৃষ্টি করা, বিভাজনের সৃষ্টি করা, বাংলাদেশকে আবার একটা জায়গায় নিয়ে আসা যেখানে গণতন্ত্র আবার তিরোহিত হবে।”
তিনি বলেন, “আমরা পরিষ্কার করে বলতে চাই, কোনোদিন যেন ফ্যাসিজম এদেশে চালু হতে না পারে তার ব্যবস্থা আমরা করব। আপনাদের কাছে একটা অনুরোধ রাখব যে, ধৈর্য্য ধরে সমস্ত পরিস্থিতি মোকাবেলা করতে হবে।”
‘ষড়যন্ত্র করে লাভ হবে না’
বিএনপি জনপ্রিয় দল ও জনগণ দলটিকে ‘ভালোবাসে’, এ কথা মনে করিয়ে দিয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস বলেন, “এই দলকে সহজে জনগণের মন থেকে উঠিয়ে ফেলা যাবে না যত ষড়যন্ত্রই করেন।”
চরমোনাই পীরের প্রতি ইঙ্গিত করে তিনি বলেন, “একটি কথা না বললেই নয়, এক লোক, এক লোকের দল…আমি নামটা তার বলতে চাই না। ওই লোকটি এবং তার দল (ইসলামী আন্দোলন, বাংলাদেশ) যারা বলছে, স্লোগান দিচ্ছে- আওয়ামী লীগ গেছে যেই পথে বিএনপি যাবে সেই পথে।
“আরে বেটা এত সহজ নাকি এটা… এতই সহজ। আমাদের কোথাও যাওয়ার রাস্তা নাই। এই বাংলাদেশ আমাদের স্থায়ী ঠিকানা। এই লোকটি এবং তার দল-বল বিএনপিকে এখন সহ্য করতে পারছে না, কিন্তু আওয়ামী লীগকে ঠিক সহ্য করতেন।”
২০১৩ সালে শাপলা চত্বরে ঘটনার কথা স্মরণ করিয়ে দিয়ে আব্বাস বলেন, যখন হেফাজতে ইসলামের সমাবেশের ওপরে হামলা করা হয়েছিল এই চরমোনাইয়ের পীর সাহেব কোথায় ছিলেন? উনি কি মুসলমানদের পক্ষে দাঁড়িয়েছিলেন? দাঁড়ায় নাই। কে দাঁড়িয়েছে? বিএনপি দাঁড়িয়েছে।”
জামায়াতের প্রতি ইঙ্গিত করে তিনি বলেন, “আর একটি দল লম্বা লম্বা কথা ছাড়া সুকৌশলে চাঁদা নেওয়া ছাড়া, সুকৌশলে হাদিয়া নেওয়া ছাড়া কোনো কাজ নাই।…কোন কোন গ্রুপের কাছ থেকে টাকা খান আমাদের জানা আছে, সব কিছুর হিসাব হবে।
“গায়ের জোরে কথা বলেন। নিজের পায়ে জোর নাই। এরশাদের সময়ে এরশাদের কাঁধে ভর করেন, আওয়ামী লীগের সময়ে আওয়ামী লীগের কাঁধে ভর করেন, বিএনপির সময়ে বিএনপির কাঁধে ভর করেন।
এখন বিএনপি ওদের একমাত্র মাথা ব্যথা…বিএনপিকে যদি শেষ করে দেওয়া যায় তাহলে ওনারা রাজত্ব করতে পারবেন। তারা তারেক রহমানকে সহ্য করতে পারছে না। কোনো লাভ নাই তারেক রহমান তার সুযোগ্য নেতৃত্বে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাবে।”
জাতীয় নাগরিক পার্টি-এনসিপির প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, “আরেকটা আছে যে কী বলে বাংলাদেশ চিলড্রেন্স পার্টি… এই চিলড্রেন্স পার্টির অনেকে এখন তারেক রহমান সম্পর্কে কথা বলেন, জিয়াউর রহমান সম্পর্কে কথা বলেন।
“আরে ভাই তোমাদের দাদাও তো জিয়াউর রহমানকে চিনে… কী সমস্ত কথা বলে এরা। এখন এই সমস্ত লোকের কথা-বার্তা শুনে আমাদের বিভ্রান্ত হওয়ার কারণ নাই।”
ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির সভাপতি রফিকুল আলম মজনুর সভাপতিত্বে ও সদস্য সচিব তানভীর আহমেদ রবিনের সঞ্চালনায় সমাবেশে মহানগর উত্তরের আহ্বায়ক আমিনুল হকও বক্তব্য রাখেন।
মিছিলে ছিলেন বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব হাবিব-উন-নবী খান সোহেল, আবদুস সালাম আজাদ, স্বেচ্ছাসেবক বিষয়ক সম্পাদক মীর সরাফত আলী সপু, মহানগর উত্তরের সদস্য সচিব মোস্তফা জামান, যুব দলের সভাপতি এম মোনায়েম মুন্না।
ছাত্রদলের বিক্ষোভ মিছিল
বেলা ২টায় নয়া পল্টনের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে ছাত্রদলের কয়েক হাজার নেতা-কর্মী সমবেত হয়ে মিছিল শুরু করেন। এই মিছিলে ছিলেন ছাত্রদলের সভাপতি রাকিবুল ইসলাম রাকিব, সাধারণ সম্পাদক নাছির উদ্দীন নাছিরসহ বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ছাত্র-ছাত্রীরা।
‘রাজাকার আর স্বৈরাচার মিলে মিশে একাকার’ ‘দিল্লি গেছে স্বৈরাচার, পিন্ডি যাবে রাজাকার’, ‘তুমি কে আমি কে বাংলাদেশি, বাংলাদেশি’ ‘দিল্লি নয়, পিন্ডি নয়, সবার আগে বাংলাদেশ’, ‘এই লড়াই মুক্তির এই লড়াইয়ে জিততে হবে’, ‘বাংলাদেশ, গণতন্ত্র হয়নি শেষ, সজাগ থাকো বাংলাদেশ’ ইত্যাদি নানা স্লোগান দেয় ছাত্রদলের নেতা-কর্মীরা।
আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতির প্রতিবাদে ছাত্রদলের এই বিক্ষোভ মিছিল বিজয় নগর, জাতীয় প্রেস ক্লাব হয়ে শাহবাগে গিয়ে শেষ হয়।