Image description

বিএনপির এখন যে স্ট্রাকচার তাতে বিএনপির টপ ব্রাস চাইলেও দলটির দেশব্যাপী থাকা নেতাকর্মীদের অপকর্ম (সব নেতাকর্মী না, যারা অপকর্ম করতে চায়) বন্ধ করতে পারবে না।


ইন ফ্যাক্ট, ৫ আগস্টের পর তারেক রহমান দলীয় কর্মী/নেতাদের অপকর্মের ব্যাপারে অত্যন্ত কঠোরতা প্রদর্শন করে আসছেন এবং যখনই কারো বিরুদ্ধে ক্রেডিবল অভিযোগ উঠেছে তার দল দ্রুত ওই ব্যক্তিকে বহিষ্কার করে অন্যদের বার্তা দেয়ার চেষ্টা করেছেন।


কিন্তু এতে আসলে কোনই লাভ হচ্ছে না। অপকর্ম কমছে না। এবং দুর্ভাগ্যজনক হলেও এটি কমবে না। আরও বাড়বেই। দলের পদ থেকে বহিষ্কার ওইসব মানুষের জন্য বাস্তবে কোনো প্রতিবন্ধকতা তৈরি করতে পারে না। 


আগামী ৬ বছর মোটামুটি এভাবেই প্রতিদিন বা প্রতি সপ্তাহে নানান অপকর্মের ভাইরাল ভিডিও বা অডিও মোকাবেলা করতেই হবে। 
কিন্তু এটা বিএনপির জন্য খারাপ তো বটেই, অন্য রাজনৈতিক দলগুলোর জন্যেও খারাপ এবং বাংলাদেশর জন্যও খারাপ।
বিএনপিকে তার দলের প্রভাব বিস্তার করে অপকর্ম করার প্রবণতা অনেক অনেক কমিয়ে আনতেই হবে, যদিও বন্ধ করতে না পারে।
এটা কিভাবে সম্ভব? কেউ জানে না।


যদিও আমার কিছু চিন্তা আছে এই ক্ষেত্রে।


১. বিএনপি চেয়ারপার্সনের একটি বিশেষায়িত টিম থাকা দরকার যেটি কয়েকজন পেশাদার এবং দক্ষ ইনভেস্টিগেটর দিয়ে তৈরি। এই টিম নিয়মিতভাবে তার দলের গুরুত্বপূর্ণ নেতাদের কার্যক্রম মনিটর করবে এবং কারো বিরুদ্ধে কোন ধরনের অপকর্মের অভিযোগ উঠলে চেয়ারপার্সন এবং বা দলের টপ ফোরামকে নিয়মিত ভিত্তিতে অবগত করবে। কোন বড় অপকর্ম দলের কেউ ঘটালে এই টিম পেশাদারভাবে ইনভেস্টিগেট করে তথ্য প্রমাণসহ দলের সামনে প্রকৃত ঘটনা হাজির করবে এবং বিএনিপর কোন নেতার বিরুদ্ধে অপকর্মের প্রমাণ মিললে বিএনপি দল হিসেবেই তা জনগণের সামনে প্রকাশ করে দ্রুত ওই নেতার বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নিতে সরকারকে চাপ দেবে।


এইটা রেডিকাল মনে হইতে পারে। কিন্তু বিএনপিকে তার রুট লেভেলের সম্ভাব্য অপকর্মকারীদেরকে নিয়ন্ত্রণ করতে হলে এরকম কিছু রেডিকাল উদাহরণ তৈরি করা দরকার। এখন আর আগের 'বহিষ্কার' প্রথা কাজে আসছে না। এন্টিবায়োটিকের ডোজ বাড়াইতে হবে।
এরকম দশটা ঘটনায় বিএনপি তার দলের অপকর্মকারী লোকজনের বিরুদ্ধে শক্ত অবস্থান নিলে অনেকে সোজা হয়ে যাবে। তারেক রহমান বা দলের টপ লিডারশিপ যে অপকর্ম কমাতে আসলেই সিরিয়াস এই বার্তা পৌঁছে যাবে। এবং সাধারণ মানুষও এতে আশ্বস্ত হবে।


এই মুহূর্তে দেশ এবং সবার মঙ্গলার্থেই বিএনপির প্রতি মানুষের আস্থা ফেরানো খুব দরকার। সেই জন্য রেডিকাল মুভ দরকার। বিএনপি ফেইল করলে জামাত/এনিসিপি বা অন্যদের সেই সক্ষমতা নাই যে, তারা অভ্যুত্থানে পতিত শক্তিকে মোকাবেলা করে দেশকে পরিচালনা করতে পারবে।


২. আগামী নির্বাচনে দলীয় এমপি মনোনয়ন দেয়ার ক্ষেত্রে বিএনপির উচিত অর্ধেকের বেশি আসনে তরুণদেরকে প্রার্থী করা। তরুণ মানে তরুণ। ৩৫ এর আশপাশে যাদের বয়স। যারা রাজনীতি করতে চায় এবং ৫/৭ বছর নিজেদের কর্মক্ষেত্রে এক্সিলেন্সের প্রমাণ দিয়েছে এমন সব তরুণ। যাদের ব্যক্তিগত ও পারিবারিক ব্যাকগ্রাউন্ডে সততা পরিচ্ছন্নতার রেকর্ড আছে। যাদের ভিশন আছে। যারা রাজনীতিকে পাড়ার থাগারি হিসেবে না দেখে সাউথ এশিয়ার জিওপলিটিকাল গেইম হিসেবে দেখার চোখ ও সক্ষমতা রাখে।


এজন্য এখন থেকেই বিএনপির টপ লিডারশিপ থেকে হেড হান্টিং শুরু করা উচিত। তরুণ ছাত্র নেতা, যুবনেতাদের কাছ থেকে পাবলিকলি এনাউন্সমেন্ট দিয়ে আইডিয়া চাওয়া উচিত। "এমপি হলে আপনার এলাকার জন্য, মানুষদের জন্য কী করবেন?" দলমত নির্বিশেষে বিএনপির এমপি টিকিট প্রত্যাশীরা নিজেদের নানান স্বপ্ন, আইডিয়া, ভিশন এগুলো জমা দিক। আগামী নির্বাচনকে বিএনপি তরুণদের স্বপ্ন বাস্তবায়নের উতসব বানিয়ে ফেলুক। বিশ্বের ১০টি দেশ থেকে ৪০ এর নিচের বয়সী তুখোড় ও জনদরদি ১০ জন রাজনৈতিক নেতাকে দাওয়াত দিয়ে নিয়ে এসে নিজের দলের তরুণ শিক্ষিত নেতাদের সাথে মতবিনিময়/আইডিয়া-অভিজ্ঞতা শেয়ারিংয়ের ইভেন্ট আয়োজন করতে পারে। তরুণ নেতারা শিখুক ওদের কাছ থেকে- কিভাবে মানুষের কল্যাণের রাজনীতি করতে হয়, কিভাবে মানুষের নানান সমস্যার সমাধানে তারা কাজ করে। 


তাহলে চাঁদাবাজ এবং থাগরা যারা প্রস্তুতি নিচ্ছে ৫ বছর দলের নাম বেচে লুটে খাওয়ার ওরা কিছুটা হলেও বার্তা পাবে যে, তাদের খাওয়া বেশিদিন নাই এবং আসলেই বিএনপি ভিশনারী তরুণদেরকে নির্বাচিত করে আনতে পারলে এলাকায় এলাকায় চাঁদা তুলে বিদেশ পাচার করা পুরনো ধাঁচের বাটপরদের দাপট কমবে।


৩. নির্বাচিত হওয়ার পর প্রথমেই ছাত্রদলকে আমূল সংস্কার করে একদম তরুণ এবং মেধাবী পোলাপানের হাতে ছেড়ে দিতে হবে। ২৫ বছরের উপরে কেউ ছাত্রদলের নেতা হতে পারবে না। ছাত্রদল নেতা মানে কিছু বিশেষ যোগ্যতা থাকতে হবে। এরা যাতে অন্য সাধারণ ছাত্রছাত্রীদের টানতে পারে। অমুক বিএনপি নেতার তল্পিবাহক ছাত্রদলের এই পদ পাবেন আর অমুক বিএনপি নেতার তল্পিবাহক তমুক পদ পাবেন-- এটা বন্ধ করতে হবে। 


এরকম কিছু রেডিকাল এবং নতুন চিন্তা বাস্তবায়ন করে বিএনপি তার তৃণমূলের দুবৃত্তায়ন নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করতে পারে। অবশ্যই হুট করে নিয়ন্ত্রণ করতে পারবে না। কিন্তু দীর্ঘমেয়াদে সময়ও পাবে না। নেক্সট সাড়ে ৫ থেকে ৬ বছরের মধ্যে যদি কিছু সত্যিকারের পরিবর্তন দেখাতে না পারে দলটি তাহলে পরের নির্বাচনে তাদের এবং তাদের সাথে দেশের কী অবস্থা হবে বলা মুশকিল।

কদরুদ্দিন শিশির