
রাজধানীর খিলগাঁও তালতলা সিটি করপোরেশন সুপার মার্কেটের সামনের ফুটপাথের নতুন মালিক এসেছে। গত সপ্তাহে তাদের হস্তক্ষেপে খালি করে দেয়া হয়েছে ফুটপাথের সামনের অংশ, এখন কোনো দোকান নেই সেখানে। বর্তমানে এখানে কেউ মার্কেট করতে আসলে কোনো ভিড় ছাড়াই স্বচ্ছন্দ্যে কেনাকাটা করে চলে যেতে পারছেন। আপাত দৃষ্টিতে খুবই ভালো কাজ হলেও খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ফুটপাথ খালি করে দেয়া হয়েছে চাঁদা ওঠানোর উদ্দেশ্যে। ফুটপাথের প্রতিটি ছোট দোকানিকে চাঁদা আদায়কারী নতুন মালিকদের এককালীন এক লাখ টাকা করে দিতে হবে। এরপর অতিরিক্ত হিসেবে প্রতি মাসে দোকানদারকে নতুন মালিকদের নির্দিষ্ট হারে চাঁদা দিয়েই দোকান চালাতে হবে। চাঁদার দাবিতে গত এক সপ্তাহ থেকে ফুটপাথের দোকানদারদের আর বসতে দেয়া হচ্ছে না সেখানে।
জানা গেছে, শতাধিক দোকান বসত খিলগাঁও তালতলা সিটি করপোরেশন মার্কেটের ফুটপাথে। ফুটপাথের এই দোকানগুলো সারাদিনই বেশ সরগরম থাকত বেচাকেনায়। তবে ফুটপাথের এই দোকানদারদের চাঁদা দেয়া ছাড়া আগেও বসতে দেয়া হয়নি। শেখ হাসিনার পালিয়ে যাওয়ার পর ফুটপাথের আগের মালিকরাও পালিয়ে গেছে। ফুটপাথের পুরনো নিয়ন্ত্রণকারী বিদায় নিলে নতুন নিয়ন্ত্রণকারীরা এসেছে। তারা যে ফুটপাথে আর দোকান বসতে দেবে না সে রকম নয়, তারা এক লাখ টাকার বিনিময়ে প্রতিটি দোকান বসাবে বলে ঘোষণা দিয়েছে। বাড়তি হিসেবে মাসিক চাঁদা তো আছেই- সেটাও দিতে হবে।
নতুন ঘোষণার পর ফুটপাথের দোকানদারা বিপদে পড়েছে। অনেক দোকানদার কিছুদিন আগেই এক লাখ টাকা দিয়ে দোকান নিয়েছে। এক বছরও যায়নি তাদের দোকান উচ্ছেদ করে দিয়েছে। দোকান থেকে মুনাফা ওঠানোর আগেই নতুন করে আবার এক লাখ টাকা দেয়ার ঘোষণা এসেছে।
তালতলা থেকে ব্যাটারির রিকসায় চড়ে এমন দুই দোকানদার যাচ্ছিলেন বনশ্রীর দিকে। এই প্রতিবেদকও সেই ব্যাটারি রিকসায় ছিলেন। এক দোকানদার আরেক দোকানদারকে তার দোকান হারানোর কাহিনী বলছিলেন। একজন আক্ষেপ করে বললেন, দোকানের জন্য নতুন করে এক লাখ টাকা দিলেও তারা মার্কেটের সামনে স্থায়ীভাবে বসতে পারবেন এমন গ্যারান্টি দিচ্ছে না নিয়ন্ত্রণকারীরা। তারা বলছেন, এটা সামনের নির্বাচন পর্যন্ত। নির্বাচনের হার-জিতের ওপর নির্ভর করবে দোকান নিয়ন্ত্রণকারীদের ভাগ্য। দোকানদার বলছিলেন, কাকুতি-মিনতিতেও কাজ হয়নি। সাফ বলে দেয়া হয়েছে, এক লাখ টাকা না দিলে দোকান বসানো যাবে না। দেরি করলে দোকান না পাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। আগে আসলে আগে পাবেন এই ভিত্তিতে দোকান বরাদ্দ দেয়া হচ্ছে।
কারা তালতলা মার্কেটের ফুটপাথের দোকান নিয়ন্ত্রণ করতে জানতে চাইলে এক দোকানদার বললেন, এটা না বোঝার তো কিছু নেই কারা এখন ফুটপাথ নিয়ন্ত্রণ করতে পারে। দোকানদার বললেন, নাম উচ্চারণ করার তো প্রয়োজন নেই, সহজেই বোঝা যায় কারা চাঁদা চাচ্ছে। দোকানদাররা শেষপর্যন্ত আর নিয়ন্ত্রণকারী অথবা তাদের গ্রুপের নাম উচ্চারণ করেননি।