
দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির ক্রমেই অবনতি হচ্ছে। এর মধ্যে তোলপাড় সৃষ্টি করেছে রাজধানীর মিটফোর্ডে ভাঙারি ব্যবসায়ী লাল চাঁদ ওরফে সোহাগকে নৃশংসভাবে হত্যার ঘটনা। মিটফোর্ড (স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ) হাসপাতালের সামনে গত বুধবার (৯ জুলাই) তাকে পিটিয়ে এবং পাথরের আঘাতে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়। ঘটনার দু’দিন পর নির্মম এই হত্যাকাণ্ডের ভিডিও প্রকাশ্যে আসে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। দেশের মানুষের মধ্যে দেখা দিয়েছে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া।
সোহাগ হত্যাকে ঘিরে রাজনৈতিক অঙ্গনেও চলছে নানা আলোচনা-সমালোচনা। নৃশংস এই হত্যার প্রতিবাদে ঢাকার ও ঢাকার বাইরে কর্মসূচিও দিয়েছে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও ছাত্র সংগঠন। এই হত্যার বিষয়ে গণমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদন বলছে, ঘটনার পেছনে ছিল ভাঙারি ব্যবসার নিয়ন্ত্রণ নিয়ে দ্বন্দ্ব। এই ঘটনায় রাজধানীর কোতোয়ালি থানায় বৃহস্পতিবার নিহতের বোন মামলা করেছেন। এতে ১৯ জনের নাম উল্লেখ করে এবং ১০-১৫ জনকে অজ্ঞাতনামা আসামি করা হয়। এই হত্যাকাণ্ডের অভিযোগে শনিবার (১২ জুলাই) সকাল পর্যন্ত পাঁচজনকে গ্রেপ্তারের তথ্য জানিয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।
নিহত সোহাগ বিএনপির সহযোগী সংগঠন যুবদলের কর্মী ছিলেন। এছাড়া এ হত্যাকাণ্ডে অভিযুক্তদের মধ্যে যুবদলের পাঁচজনকে আজীবনের জন্য বহিষ্কার করা হয়েছে। এ ঘটনায় বিএনপি ছাড়াও জামায়াত ইসলামী, গণসংহতি আন্দোলন, এনসিপি, বৈষম্যবিরোধী ছাত্রআন্দোলন প্রতিবাদ জানিয়েছে। দেশের বিভিন্ন স্থানে প্রতিবাদ ও বিক্ষোভ করেছে বিভিন্ন দল ও সংগঠন।
সোহাগ হত্যা ছাড়াও সম্প্রতি সারাদেশে বিভিন্ন সহিংস ঘটনা সংঘটিত হয়ে আসছে। শুক্রবার (১১ জুলাই) দুই শিশুসহ অন্তত চারজনকে হত্যার সংবাদ পাওয়া গেছে গণমাধ্যমে। এছাড়া বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত ১২টা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় সারাদেশে এক হাজার ৪১৮ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ সদর দপ্তর। গ্রেপ্তারদের মধ্যে ৯৯৮ জন পরোয়ানা ও ফৌজদারি মামলার আসামি। বাকিরা বিভিন্ন অপরাধে গ্রেপ্তার। দেশের বিভিন্ন স্থানে অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড সামাল দিতে হিমশিম খেতে হচ্ছে আইন শৃঙ্খলাবাহিনীকে।
সোহাগ হত্যার দুই দিন পর ঘটনার ভিডিও প্রকাশ হয়। এরপর এ নিয়ে তোলপাড় হলেও তার আগে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কোনো ভূমিকা না থাকাকেও রহস্যজনক মনে করা হচ্ছে। অনেকে প্রশ্ন করছেন, দু’দিন কী করেছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। এছাড়া রাজনৈতিক দলগুলো পাল্টাপাল্টি বক্তব্য দিচ্ছে।
ফ্যাসিবাদী দল আওয়ামী লীগের ক্ষমতাচ্যুতির পর গত বছরের ৮ আগস্ট দায়িত্ব গ্রহণ করে অন্তর্বর্তী সরকার। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরাও ব্যাপক সক্রিয়। রাজনৈতিক দলগুলোকে পরস্পরের বিরুদ্ধে উসকে দেওয়ার বিষয়ও উঠে আসছে বিভিন্ন মন্তব্যে। কেউ কেউ বলছেন, একদিকে সরকার আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি সামাল দিতে হিমশিম খাচ্ছে। অন্যদিকে বিভিন্ন ঘটনাকে পুঁজি করে রাজনৈতিক দলগুলোকেও পরস্পরের বিরুদ্ধে উসকে দিচ্ছে একটি মহল।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অনেকে বলছেন, মিটফোর্ডের ঘটনায় বিএনপির অঙ্গ সংগঠন যুবদলের সংশ্লিষ্টতা প্রকাশের পর যেভাবে বিভিন্ন প্রতিক্রিয়া ও কর্মসূচি শুরু হয়েছে, সেটি আরও আগে দেখা যায়নি। এদিকে পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) মো. বাহারুল আলম বলেছেন, পুলিশের এখনও মনোবল দুর্বল। ঠিক মতো কাজ করতে পারছে না। তিনি আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাজনৈতিক দলগুলোরও সহযোগিতা চেয়েছেন।
অনেকে মিটফোর্ডের ঘটনায় বিএনপির ওপর দায় চাপানোর চেষ্টা করছে। কিন্তু কেন? বিএনপি কি এখন ক্ষমতায় আছে? নেই। তাহলে কেন এমন বক্তব্য আসছে? এছাড়া বিভিন্ন ঘটনাকে পুঁজি করে কোনো পক্ষ দেশের রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে সহিংসতা ছড়িয়ে দেওয়ার আশঙ্কাও প্রকাশ করছেন কেউ কেউ। পরিস্থিতি যেমনই হোক, আইনশৃঙ্খলা রক্ষার দায়িত্ব সরকারের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর। এ থেকে সরকারের দায় এড়ানোর সুযোগ নেই। একইসঙ্গে কোনো সুবিধাবাদী পক্ষ যাতে সুযোগ দিতে না পারে সেদিকেও জনগণের সজাগ থাকা উচিত।
(শীর্ষনিউজ)