Image description

সাম্প্রতিক সময়ে দেশের বিভিন্ন স্থানে ‘মব সন্ত্রাস’ ও মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করে বিবৃতি দিয়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) আওয়ামী লীগের সমর্থক শিক্ষকদের প্ল্যাটফর্ম নীল দলের ৭১ জন শিক্ষক। যদিও ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক’ ব্যানারে এই বিবৃতি দেওয়া হয়েছে। এতে তারা মব সন্ত্রাস নিরসনে দ্রুত কার্যকর ও দৃশ্যমান পদক্ষেপ গ্রহণের দাবি জানিয়েছেন।

বিবৃতিতে বলা হয়, বিগত কয়েক মাস থেকে দেশের বিভিন্ন স্থানে ‘মব সন্ত্রাস’ থাবা বিস্তার করেছে এবং ক্রমশ তা উদ্বেগজনক হারে বেড়েই চলেছে। এতে দেশের মানুষের জান-মালের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির পাশাপাশি আন্তর্জাতিক পরিসরে দেশের মর্যাদা ও ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হচ্ছে। মবাক্রান্ত মানুষেরা শুধু যে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত ও অপদস্থ হচ্ছেন তাই নয়, বরং গণপিটুনির শিকার হয়ে অনেকেই ইতোমধ্যে মারা গেছেন, নারীরা তাদের সম্ভ্রম হারিয়েছেন; এমনকি মবের শিকার হয়ে অনেক অবুঝ শিশুর ভবিষ্যৎ জীবনও বিপর্যস্ত হয়েছে। 

বিবৃতিতে অভিযোগ করা হয়, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, আইন-আদালত, গণমাধ্যম, ব্যবসা-কেন্দ্র, আবাসিক ভবন, ঐতিহাসিক স্থাপনা, ভাষা আন্দোলন ও মহান মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিচিহ্ন থেকে শুরু করে সামাজিক অনুষ্ঠানাদি পর্যন্ত মব সন্ত্রাসের কালো থাবা থেকে রেহাই পাচ্ছে না। দেশি-বিদেশি সংবাদপত্র, টেলিভিশন ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও এ বিষয়ে বিস্তারিত খবর ও প্রতিবেদন প্রকাশিত হচ্ছে। আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী 'মব' নিরসনে কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণের কথা বললেও বাস্তবে কোনো কার্যকর ব্যবস্থা দৃশ্যমান হচ্ছে না এবং আগ্রাসী মবকে নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না।

‘‘উপরন্তু, কোনো কোনো দায়িত্বশীল মহল কর্তৃক ‘মব’কে ‘প্রেসার গ্রুপ’ বলে সংজ্ঞায়িত করায় পর্যায়ক্রমে ‘মব সন্ত্রাস’ অনাকাঙিক্ষতভাবে মব সংস্কৃতির রূপ পরিগ্রহ করছে এবং মব সন্ত্রাসীরা আরো বেপরোয়া ও বেসামাল হচ্ছে। দেশের মুক্তবুদ্ধি চর্চার সূতিকাগার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হিসেবে আমরা মানবাধিকারের চরম লঙ্ঘনের এসব অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনায় খুবই উদ্বিগ্ন, ক্ষুব্ধ ও বেদনাহত।’’

বিবৃতিতে তারা বলেন,কোনো ব্যক্তির বিরুদ্ধে অভিযোগ থাকলে তা দেশের প্রচলিত আইনে বিচার হওয়া কাম্য। কিন্তু কোনোভাবেই আইন নিজের হাতে তুলে নিয়ে দেশটাকে ‘মবের মুল্লুক’-এ পরিণত করা কোনো স্থিতিশীল ও অন্তর্ভুক্তিমূলক সমাজ ও রাষ্ট্র বিনির্মাণের সাথে সংগতিপূর্ণ হতে পারে না। তাই, রাষ্ট্রের আইন প্রয়োগকারী সংস্থাসহ সংশ্লিষ্ট সকল মহলের কাছে আমাদের উদাত্ত আহ্বান, সার্বিকভাবে আইনের সঠিক প্রয়োগ, সামাজিক ন্যায়বিচার ও নাগরিক সমাজের জন্য যথাযথ নিরাপত্তা ও সুশাসন নিশ্চিত করুন এবং দেশের গণমানুষের সামগ্রিক স্বার্থে অবিলম্বে এই ‘মব সন্ত্রাস' নিরসনে কার্যকর ও দৃশ্যমান ব্যবস্থা গ্রহণ করুন।

বিবৃতিতে স্বাক্ষর করেছেন, অধ্যাপক ড. রফিকুল ইসলাম (রফিক শাহরিয়ার), অধ্যাপক ড. তৌহিদা রশীদ, অধ্যাপক ড. জামিলা এ চৌধুরী, শবনম আযীম, অধ্যাপক ড. আবু সারা শামসুর রউফ, অধ্যাপক ড. সমীর কুমার শীল, অধ্যাপক ড. ফিরোজ আহমেদ, অধ্যাপক ড. মো. আব্দুল মুহিত, অধ্যাপক ড. মো. কামাল উদ্দিন, অধ্যাপক ড. ময়না তালুকদার, অধ্যাপক ড. আকসাদুল আলম, অধ্যাপক ড. সঞ্চিতা গুহ, অধ্যাপক ড. সুরাইয়া আক্তার, অধ্যাপক ড. জাভীদ ইকবাল বাঙালী, অধ্যাপক ড. মিজানুর রহমান, অধ্যাপক ড. জেড এম পারভেজ সাজ্জাদ, অধ্যাপক ড. আবদুল্লাহ আল মাহমুদ, অধ্যাপক ড. বিল্লাল হোসেন, অধ্যাপক ড. সীতেশ চন্দ্র বাছার, অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ আজমল হোসেন ভূঁইয়া, অধ্যাপক ড. হুমায়ুন কবির, অধ্যাপক ড. মামুন আল মোস্তফা, অধ্যাপক ড. মোস্তাফিজুর রহমান, অধ্যাপক ড. সুব্রত সাহা, ড. নীলিমা আকতার, অধ্যাপক ড. লিটন কুমার সাহা, অধ্যাপক আবু হোসেন মুহাম্মদ আহসান, অধ্যাপক ড. জি এম গোলজার হোসেন, অধ্যাপক ড. মো. আব্দুর রহিম, অধ্যাপক ড. আবুল কালাম আজাদ, অধ্যাপক ড. রাফিউল ইসলাম, অধ্যাপক ড. মো. আকরাম হোসেন, অধ্যাপক ড. এ. টি. এম. সামছুজ্জোহা, অধ্যাপক ড. রেজাউল করিম, অধ্যাপক ড. মো. আসাদুজ্জামান, অধ্যাপক ড. কে এম সালাহ উদ্দীন, অধ্যাপক ড. মুশফিক মান্নান চৌধুরী, অধ্যাপক ড. এ.কে.এম খাদেমুল হক, ড. কায়সার আহমেদ রকী ড. নাইমা নিগার ও সামশাদ নওরীন।

বিবৃতিতে আরও স্বাক্ষর করেছেন, ড. এম এল পলাশ, ড. মুহাম্মদ মাইনউদ্দিন মোল্লা, মো. রাকিবুল হাসান, ড. ইসরাত জাহান, ড. মো. হাসান ফারুক, ড. মো. নাসির উদ্দিন, ড. মোহাম্মদ মনিরুজ্জামান খান, ড. মোহাম্মদ বাহাউদ্দিন, মো. কামরুল হাসান, ড. সিদ্ধার্থ দে, মাহমুদুর রহমান, ড. মো. মাহফুজুর রহমান খান, ড. মো. রায়হান সরকার, তৌহিদ হোসেন, ড. মোহাম্মদ ইউসুফ, ড. আবদুল্লাহ আল মারুফ, ড. মো. জহিরুল ইসলাম, মো. ইব্রাহীম মিয়া, ড. আরশাদুল হাসান, ড. মো. বেলাল হোসেন, ড. আব্দুল কাদের মহিউদ্দিন, ড. মির শরিফুল ইসলাম, আহমাদ হাসান চৌধুরী, ড. মোহাইমিনুল আদীব, মো. ইমরান হোসেন, মোহাম্মদ সোহেল রানা, মো. নাইমুল ইসলাম, ড. মো. মতিয়ার রহমান, মাহমুদুল হাসান ও অধ্যাপক ড. এ কে এম মাহবুব হাসান।