Image description

আগামীতে হলফনামা দিয়ে নির্বাচনে অংশ নেওয়া প্রার্থীকেই সত্যায়ন করতে হবে যে, অঙ্গীকারনামায় দেওয়া তার তথ্যগুলো সত্য ও নির্ভুল। হলফনামাসংক্রান্ত নতুন এ বিধান যুক্ত করতে যাচ্ছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ (আরপিও) সংশোধনসহ পাঁচটি ইস্যুতে এএমএম নাসির উদ্দীনের কমিশন আজ বৃহস্পতিবার সভায় বসছে। বেলা ১১টায় অনুষ্ঠেয় এ সভায় হলফনামাসংক্রান্ত বিধানটি অনুমোদন পেলে প্রার্থী, প্রার্থীর পরিবার ও নির্বাচন পরিচালনার দায়িত্বপ্রাপ্ত সংশ্লিষ্ট রিটার্নিং কর্মকর্তার দায়বদ্ধতা বাড়বে। সেই সঙ্গে দায়বদ্ধতা বাড়বে প্রার্থীরও। নির্বাচন কমিশন সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।

সূত্র জানায়, আগে নির্বাচনি হলফনামার কারণে কারো প্রার্থিতা বাতিল হলে আদালতে গিয়ে সেটি আবার ফিরে পেয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার সুযোগ পেতেন প্রার্থী। কিন্তু নতুন এ বিধানে প্রার্থিতা ফিরে পাওয়া কঠিন হবে। কারণ, হলফনামার দায়-দায়িত্ব শুরু থেকেই প্রার্থী নিজের কাঁধেই নিয়েছেন। এ কারণে মিথ্যা হলফনামাই হতে পারে প্রার্থীদের গলার কাঁটা।

নির্বাচন কমিশন সূত্রে জানা গেছে, ইসি বিদ্যমান আটটি তথ্যের সঙ্গে আরো তিনটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় যুক্ত করে হলফনামার ছকে পরিবর্তন আনছে। নতুন বিষয় তিনটি হলোÑঅঙ্গীকারনামা দিয়ে প্রার্থী বলবেন তিনি পরিশুদ্ধ, সরকারের কাছে তিনি ঋণদার বা বকেয়াদার নন এবং পরিবারের সদস্যের মধ্যে কেউ দায়-দেনার জন্য রাষ্ট্রের কাছে দায়বদ্ধ নন। এ ছাড়া অতীতে হলফনামা উন্মুক্ত না করলেও আগামী ত্রয়োদশ সংসদ থেকে প্রার্থীদের হলফনামা ইসি নিজ উদ্যোগে প্রচারের ব্যবস্থা করতে পারে।

প্রাপ্ত তথ্যমতে, আদালতের নির্দেশনা অনুযায়ী ২০০৮ সালের নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচন থেকে প্রার্থীর হলফনামার তথ্য প্রকাশ করে আসছে নির্বাচন কমিশন। মূলত প্রার্থীদের মনোনয়নপত্র হাতে পাওয়ার পরপরই হলফনামা অভ্যন্তরীণ ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হয়। সংরক্ষিত নারী আসনের সদস্যদের জন্যও একই বিধান প্রযোজ্য। দশম সংসদের নারী আসনে নির্বাচনে মনোনয়নপত্র বাছাইয়ের সময় বিটিসিএলের টেলিফোন বিল খেলাপির অভিযোগে রিটার্নিং অফিসার আওয়ামী লীগের প্রার্থী সাবিহা নাহার বেগম (সাবিহা মুসা) ও জাতীয় পার্টির প্রার্থী খোরশেদ আরা হকের মনোনয়নপত্র বাতিল করেন।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ইসির দায়িত্বশীল এক কর্মকর্তা আমার দেশকে জানান, হাইকোর্টের নিদের্শনার আলোকে প্রার্থীদের হলফনামা দেওয়ার বিধান রয়েছে। সেখানে আটটি তথ্য দেওয়া বাধ্যতামূলক। নির্বাচনসংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের গাফিলতির কারণে অনেক সময় প্রার্থীরা মিথ্যা তথ্য দিয়েও পার পেয়ে যান। তাই বর্তমান কমিশন কিছু প্রয়োজনীয় সংশোধনী সংযুক্ত করার চিন্তা করছে। এর মধ্যে অঙ্গীকারনামা একটি। এটি প্রার্থীকেই সার্টিফাই করতে হবে। ওই কর্মকর্তা বলেন, হলফনামায় নতুন যুক্ত হতে যাওয়া দ্বিতীয় বিধানটি হলো সরকারের পাওনা। যেমনÑবিদ্যুৎ বিল, পানির বিল কিংবা সরকারি সম্পত্তির ট্যাক্স বা কর বকেয়া রাখা। তৃতীয়টি পরিবারের দায়-দেনা। পরিবার বলতে স্ত্রী-সন্তান, বাবা-মা এবং ক্ষেত্রবিশেষে ভাই-বোন।

ইসির ওই কর্মকর্তা জানান, হলফনামা রিটার্নিং অফিসারের যাচাইয়ের বিধান রয়েছে। হলফনামায় মিথ্যা তথ্য দেওয়ার কারণে মনোনয়নপত্র বাতিল হয়। সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেষ হাসিনা নবম সংসদে মিথ্যা তথ্য দিয়ে পার পেয়েছেন। হলফনামা ইসি থেকে প্রচার করার ব্যবস্থা থাকলে রিটার্নিং অফিসারের ভুল হলেও তা কারো কারো কাছে ধরা পড়ত। তাই ইসি এটা প্রচারের বিধানটি স্পষ্ট করতে পারে। এ ছাড়া কমিশন সভায় সংস্কার কমিশন আইনের বিষয়ে যতগুলো সুপারিশ করা হয়েছে, সবগুলো বিষয়ে আলোচনা হবে।

এদিকে, আগে নির্বাচনে অংশ নিতে হলে একজন প্রার্থীকে তার হলফনামায় আট ধরনের তথ্য দিতে হতো। এগুলো হলোÑপ্রার্থীর সর্বোচ্চ শিক্ষাগত যোগ্যতার সনদসহ উত্তীর্ণ পরীক্ষার নাম; প্রার্থীর বিরুদ্ধে কোনো ফৌজদারি মামলা আছে কি না, এ-সংক্রান্ত সঠিক তথ্য দেওয়া; অতীতে প্রার্থীর বিরুদ্ধে দায়ের হওয়া ফৌজদারি মামলার রেকর্ড আছে কি না, থাকলে তার রায় কী ছিল; পেশার বিস্তারিত বিবরণ; আয়ের উৎস বা উৎসসমূহ, আয়কর রিটার্ন ও মনোনয়নপত্রের সঙ্গে প্রদত্ত অনুরূপ তথ্যের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ হওয়া; প্রার্থীর নিজের ও অন্য নির্ভরশীলদের সম্পদ ও দায়-এর বিবরণী; জাতীয় সংসদের সদস্য ছিলেন কি না এবং থাকলে ভোটারদের প্রদত্ত প্রতিশ্রুতি এবং এর কী পরিমাণ অর্জন সম্ভব হয়েছিল ও কোনো ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে প্রার্থীর একক বা যৌথভাবে বা প্রার্থীর ওপর নির্ভরশীল সদস্য গৃহীত ঋণের পরিমাণ অথবা কোনো ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যান, ব্যবস্থাপনা পরিচালক বা পরিচালক হওয়ার সুবাদে ওই সব প্রতিষ্ঠান থেকে গৃহীত ঋণের পরিমাণসংক্রান্ত তথ্যও সঠিকভাবে দিতে হবে।