
বিমানবন্দর ইমিগ্রেশন আটকে দেওয়ার এক দিনের মধ্যেই কোর্ট থেকে আদেশ নিলেন আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য সাবেক রাষ্ট্রদূত মোহাম্মদ জমিরের স্ত্রী নাসরীন জমির। বিগত সরকারের আমলে ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাকে নেদারল্যান্ডের লুক্সেমবার্গে অনারারি কনসালের দায়িত্ব দিয়েছিলেন। জানা গেছে, শেখ হাসিনার আজিমপুর গার্লস হাইস্কুলের বান্ধবী ছিলেন নাসরীন।
গত ৬ জুলাই লন্ডন যাওয়ার প্রাক্কালে নাসরীনকে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে আটকে দেয় ইমিগ্রেশন কর্তৃপক্ষ। পরদিন সোমবার তিনি বিদেশ যেতে না দেওয়ার বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টে একটি রিট পিটিশন দায়ের করেন।
রিট আবেদনে স্বরাষ্ট্র সচিব, ঢাকার ডিসি, পুলিশের আইজি, পাসপোর্ট ও ইমিগ্রেশনের মহাপরিচালক, বিমানবন্দর থানার ওসি ও পুলিশের বিশেষ শাখার ইমিগ্রেশন ইনচার্জকে পার্টি করা হয়।
অ্যাটর্নি জেনারেল অফিস সূত্র জানিয়েছে, ৭ জুলাই সকালে রিট পিটিশন দায়ের করা হয়। একইদিন এটি বিচারপতি মো. আকরাম হোসেন চৌধুরী ও বিচারপতি ফয়েজ আহমেদের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্টের ডিভিশন বেঞ্চে শুনানির জন্য রিটটি কার্যতালিকাভুক্ত হয় এবং একই দিনে শুনানি করে আদেশ প্রদান করা হয়। এটা একটা নজিরবিহীন ঘটনা বলে আইনজীবীরা জানান। পিটিশনারের পক্ষে শুনানি করেন অ্যাডভোকেট মো. আনিসুল হাসান। অপরদিকে স্বরাষ্ট্র সচিব ও আইজিপিসহ সরকারের ৬ জনের পক্ষে শুনানি করেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মো. মাহফুজুর রহমান (মিলন), ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল খান জিয়াউর রহমান, সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল আল-ফয়সাল সিদ্দিকী, সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল মো. এমদাদুল হানিফ, সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল কেএম রেজাউল ফিরোজ (রিন্টু) ও সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল আশরাফুল আলম।
শুনানি শেষে হাইকোর্ট তার আদেশে ‘কেন আবেদনকারীকে বিদেশে যাওয়া থেকে বিরত রাখা বেআইনি ঘোষণা করা হবে না’ মর্মে কারণ দর্শানোর জন্য রুল জারি করেন। এ রুল নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত রিটকারী নাসরীনকে বিদেশে যাওয়া ও দেশে ফিরে আসার বিষয়ে বাধা না দেওয়ার নির্দেশনাও দেন হাইকোর্ট। রিট আবেদনকারীর আইনজীবীকে বিশেষ বার্তাবাহকের মাধ্যমে নিজ খরচে এ নোটিস সরকারের উক্ত দপ্তরগুলোতে পৌঁছে দেওয়ারও নির্দেশ দেওয়া হয় হাইকোর্টের আদেশে।
বিমানবন্দর থেকে ফেরত দেওয়ার এক দিনের মধ্যে আবার বিদেশ যাওয়ার অনুমতি পাওয়ার বিষয়টিকে বিস্ময়কর বলছেন সুপ্রিমকোর্টের আইনজীবীরা। তাদের মতে, হাইকোর্টের যে কোনো বেঞ্চে একটি মামলা কার্যতালিকায় অন্তর্ভুক্ত করতে সিনিয়র আইনজীবীদের উত্থাপনের পরও বেশ কয়েকদিন অপেক্ষা করতে হয়। একজন জুনিয়র আইনীজীর একটি গুরুতর ও স্পর্শকাতর রিট আবেদন এক দিনে গ্রহণ, ওই দিনেই শুনানি আবার ওই একই দিনে আদেশ প্রদানের ঘটনা সচরাচর হয় না।
একই দিনে রিট দায়ের আবার একই দিনে শুনানি এবং আদেশ প্রদানের বিষয়ে সুপ্রিমকোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন আমার দেশকে বলেন, সাধারণত গুরুত্বপূর্ণ মামলা হলে অ্যাটর্নি জেনারেলের কার্যালয় গুরুত্বের সঙ্গে শুনানিতে অংশ নেয়। আওয়ামী লীগের সুবিধাভোগী নাসরীন জহিরের রিট পিটিশনটি অ্যাটর্নি জেনারেল অফিস কেন গুরুত্বের সঙ্গে নেয়নি, সেটি তারাই ভালো বলতে পারবেন। বিষয়টি সংশ্লিষ্ট আদালতের রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীদের সঙ্গে কথা বলতে চাইলে তারা কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।