Image description

ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে ঢাকায় বিশাল জনসমাগম ও শোডাউন করতে চায় বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী। সেই লক্ষ্যে আগামী ১৯ জুলাই ‘ঢাকা চলো কর্মসূচি’র মাধ্যমে রাজধানীতে বিশাল জমায়েত করার পরিকল্পনা রয়েছে দলটির। ওইদিন সাত দফা দাবিতে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে জাতীয় সমাবেশ ডেকেছে জামায়াতে ইসলামী।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, চব্বিশের ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের পর ছোটখাটো দু-একটি সমাবেশ হলেও ১৯ জুলাই ঢাকায় জামায়াতের এটিই সবচেয়ে বড় সমাবেশ হতে যাচ্ছে। দলটির দায়িত্বশীল নেতারা জানান, সমাবেশে বিএনপি, হেফাজতে ইসলামসহ ফ্যাসিবাদবিরোধী সব রাজনৈতিক দলকে আমন্ত্রণ জানানো হবে। সারা দেশের নেতাকর্মী, সাধারণ মানুষসহ ১৪ থেকে ১৫ লাখ লোক সমাগম করার টার্গেট নিয়ে ব্যাপক প্রস্তুতি নিচ্ছে দলটি। উল্লেখ্য, এ সমাবেশ গত ২১ জুন হওয়ার কথা ছিল।

ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগের সরকার পতনের মাত্র চার দিন আগে নির্বাহী আদেশে ‘সন্ত্রাসী সত্তা’ হিসেবে জামায়াতে ইসলামীকে নিষিদ্ধ করা হয়। তবে রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর থেকে রাজনৈতিক, সামাজিক, কূটনৈতিক ও সাংগঠনিকসহ চতুর্মুখী তৎপরতায় ব্যস্ত সময় পার করছে জামায়াত। নানারকম কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে অনেকটাই ঘুরে দাঁড়িয়েছে দেশের রাজনীতিতে দীর্ঘদিন কোণঠাসা থাকা দলটি। এরই মধ্যে দলীয় প্রতীক দাঁড়িপাল্লাসহ নির্বাচন কমিশনে নিবন্ধনও ফিরে পেয়েছে জামায়াত। সর্বশেষ গত শুক্রবার রংপুরে জনসভা করেছে দলটি। সেখানে আগামী নির্বাচনে রংপুর বিভাগে জামায়াতের সম্ভাব্য সংসদ সদস্য প্রার্থীদের মঞ্চে তুলে পরিচয় করিয়ে দেওয়া হয়।

জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল অ্যাডভোকেট এহসানুল মাহবুব জুবায়ের গতকাল সোমবার কালবেলাকে বলেন, ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচনের আগে ১৯ জুলাই ঢাকার ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের জাতীয় সমাবেশ হবে সবচেয়ে বড় গণজমায়েত। কমপক্ষে ১৪ থেকে ১৫ লাখ লোকসমাগমের টার্গেট রয়েছে। কেননা, ৫ আগস্ট অভ্যুত্থান পরবর্তী সময়ে এটিই সবচেয়ে বড় সমাবেশ। যেখানে সারা দেশের নেতাকর্মী অংশগ্রহণ করবেন। একই সঙ্গে বিএনপি, হেফাজতে ইসলাম, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশসহ ফ্যাসিবাদী বিরোধী সব রাজনৈতিক দলকে সমাবেশে আমন্ত্রণ জানানো হবে।

জানা গেছে, ১৯ জুলাইয়ের সমাবেশে সাত দফা দাবি তুলে ধরবে জামায়াত। দাবিগুলো হচ্ছে—সব গণহত্যার বিচার, প্রয়োজনীয় মৌলিক সংস্কার, জুলাই সনদ ও ঘোষণাপত্র বাস্তবায়ন, জুলাই অভ্যুত্থানের শহীদ ও আহতদের পরিবারের পুনর্বাসন, সংখ্যানুপাতিক (পিআর) পদ্ধতিতে জাতীয় নির্বাচন, প্রবাসীদের ভোট প্রদানের ব্যবস্থা এবং জাতীয় নির্বাচনের আগে সমতাভিত্তিক রাজনৈতিক পরিবেশ (লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড) নিশ্চিত করা।

জাতীয় সমাবেশ সফলের লক্ষ্যে গতকাল দুপুরে সোহরাওয়ার্দী উদ্যান পরিদর্শন করেছে জামায়াতের সমাবেশ বাস্তবায়ন কমিটির নেতারা। পরিদর্শনকালে তারা উদ্যানের বিভিন্ন অংশ ঘুরে ঘুরে দেখেন এবং সমাবেশ সুষ্ঠুভাবে বাস্তবায়নে প্রয়োজনীয় দিকনির্দেশনা প্রদান করেন। এ সময় উপস্থিত ছিলেন জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা আবদুল হালিম, মোয়াযযম হোসাইন হেলাল ও এহসানুল মাহবুব জুবায়ের, প্রচার ও মিডিয়া বিভাগের সেক্রেটারি মতিউর রহমান আকন্দ, ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের আমির নূরুল ইসলাম বুলবুল, সেক্রেটারি ড. শফিকুল ইসলাম মাসুদ, ঢাকা মহানগরী উত্তরের সেক্রেটারি ড. রেজাউল করিম, সহকারী সেক্রেটারি ডা. ফখরুদ্দিন মানিক ও মো. ইয়াসিন আরাফাত, মহানগরী দক্ষিণের সহকারী সেক্রেটারি কামাল হোসাইন, বাংলাদেশ শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশনের জেনারেল সেক্রেটারি আতিকুর রহমান ও ইসলামী ছাত্রশিবিরের সেক্রেটারি জেনারেল নূরুল ইসলাম সাদ্দাম প্রমুখ।

সভাস্থল পরিদর্শন শেষে জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমরা এরই মধ্যে জাতীয় সমাবেশের সব বিষয়ে প্রস্তুতি নিচ্ছি। প্রস্তুতির অংশ হিসেবে সোহরাওয়ার্দী উদ্যান পরিদর্শন করেছি এবং মাঠের অবস্থা, মঞ্চ, নিরাপত্তা, পানি, স্যানিটেশন, মেডিকেল, নানা বিভাগের লোকেশনসহ অন্যান্য প্রস্তুতি পর্যবেক্ষণ করা হয়েছে।’

তিনি বলেন, লাখ লাখ নেতাকর্মীসহ সাধারণ মানুষ সমাবেশে আসবেন। তাদের জন্য ওজু-নামাজের ব্যবস্থা এবং টয়লেট স্থাপন করা হবে। প্রাথমিক চিকিৎসা নিশ্চিত করতে থাকবে মেডিকেল টিম। ঢাকা মহানগরী ও জেলা এবং পার্শ্ববর্তী জেলাগুলোর প্রতিনিধিরা জাতীয় সমাবেশে যোগদান করবেন। এতসব মানুষের আসা, তাদের গাড়ি পার্কিং, সভাস্থলে প্রবেশ করা ও বসে বক্তব্য শোনার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা থাকবে। এ জন্য কয়েক হাজার নেতাকর্মী স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে বিভিন্ন বিভাগে নিয়োজিত থাকবেন।

সমাবেশ সফল করতে সরকার, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, ঢাকা মহানগরীর জনসাধারণসহ সবার সহযোগিতা কামনা করেন জামায়াতের সেক্রেটারি।