
উচ্চ ইউরিক অ্যাসিড শরীরের জন্য বিপজ্জনক হতে পারে। এর ফলে শরীরে ইউরেট ক্রিস্টাল জমতে শুরু করে, যা বিভিন্ন অঙ্গে ব্যথা ও জটিলতা তৈরি করে। সবচেয়ে পরিচিত সমস্যা হলো গাউট, যা এক ধরনের প্রদাহজনিত বাত এবং সাধারণত পায়ের বুড়ো আঙুলে তীব্র ব্যথার মাধ্যমে প্রকাশ পায়। শুধু গাউটই নয়, দীর্ঘমেয়াদে ইউরিক অ্যাসিডের মাত্রা বেশি থাকলে কিডনির ক্ষতি, ইউরিক অ্যাসিডের পাথর তৈরি হওয়া এবং ধীরে ধীরে কিডনির কার্যক্ষমতা নষ্ট হওয়ার আশঙ্কা বাড়ে।
তবে সুসংবাদ হলো, ওষুধ ছাড়াও কিছু সহজ অভ্যাসের মাধ্যমে আপনি প্রাকৃতিক উপায়ে ইউরিক অ্যাসিড কমাতে পারেন। চলুন জেনে নিই, কীভাবে মাত্র এক মাসেই এই বিপজ্জনক মাত্রা নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব।
১. বেশি পানি পান করুন
প্রচুর পানি পান করলে মূত্রের মাধ্যমে শরীর থেকে অতিরিক্ত ইউরিক অ্যাসিড বের হয়ে যায়। প্রতিদিন অন্তত ৮ থেকে ১৬ কাপ পানি পান করার চেষ্টা করুন, আবহাওয়া ও দৈহিক পরিশ্রমের মাত্রা অনুযায়ী। চাইলে সঙ্গে লেবু পানি, ভেষজ চা কিংবা চিনি ছাড়া ফলের রসও খেতে পারেন। এগুলো শরীরকে ক্ষারীয় করে তোলে এবং ইউরিক অ্যাসিড নির্গমনে সহায়তা করে।
২. ভিটামিন সি গ্রহণ বাড়ান
ভিটামিন সি ইউরিক অ্যাসিড ভেঙে শরীর থেকে বের করে দিতে সাহায্য করে। প্রতিদিনের খাবারে রাখুন কমলা, লেবু, স্ট্রবেরি, কিউই, বেল পেপার, টমেটো ও ব্রোকলির মতো ভিটামিন সি সমৃদ্ধ ফল ও সবজি। প্রয়োজনে চিকিৎসকের পরামর্শে সাপ্লিমেন্টও নেওয়া যেতে পারে।
৩. চেরি ও বেরি খান
চেরি এবং বিভিন্ন ধরনের বেরিতে থাকা অ্যান্থোসায়ানিন নামক অ্যান্টি-ইনফ্ল্যামেটরি উপাদান ইউরিক অ্যাসিড কমাতে কার্যকর। এগুলো প্রদাহ প্রশমনে সাহায্য করে এবং গাউটের ব্যথা কমায়। আপনি ফ্রেশ বা ফ্রোজেন চেরি খেতে পারেন, অথবা চিনি ছাড়া চেরির রস পান করতে পারেন।
৪. পিউরিনসমৃদ্ধ খাবার এড়িয়ে চলুন
পিউরিন নামক যৌগ শরীরে ভেঙে ইউরিক অ্যাসিড তৈরি করে। এজন্য গরু-খাসির মাংস, সামুদ্রিক মাছ, ঝিনুক, ডাল ও মটরজাতীয় খাবার কম খাওয়া উচিত। পাশাপাশি অ্যালকোহল, বিশেষ করে বিয়ার এবং চিনিযুক্ত খাবার ও পানীয় এড়িয়ে চলা উচিত। এর বদলে খাবারে রাখুন ফল, সবজি, লো-ফ্যাট দুগ্ধজাত খাবার ও হোল গ্রেইন জাতীয় কম পিউরিনযুক্ত খাদ্য।
৫. ওজন কমান (যদি অতিরিক্ত ওজন থাকে)
অতিরিক্ত ওজন শরীরে ইউরিক অ্যাসিডের উৎপাদন বাড়ায় এবং নির্গমন বাধাগ্রস্ত করে। সামান্য ওজন কমালেও ইউরিক অ্যাসিডের মাত্রা উল্লেখযোগ্যভাবে কমে যেতে পারে। প্রতিদিন হাঁটা, সাঁতার কিংবা সাইকেল চালানোর মতো হালকা-মধ্যম শারীরিক ব্যায়াম অভ্যাস করুন, যা শরীরকে অ্যাসিড বাড়ার ঝুঁকি না বাড়িয়েই সক্রিয় রাখে। ওজন কমানো ইনসুলিন রেজিস্ট্যান্সও কমায়, ফলে ইউরিক অ্যাসিড নিয়ন্ত্রণে থাকে।
৬. প্রাকৃতিক প্রতিকার ব্যবহার করুন
অ্যাপেল সাইডার ভিনেগার এবং লেবু পানি শরীরকে ক্ষারীয় করে তোলে ও ইউরিক অ্যাসিড নিঃসরণে সাহায্য করে। আদা ও হলুদের মতো অ্যান্টি-ইনফ্ল্যামেটরি উপাদান খেতে পারেন রান্নায় কিংবা চা হিসেবে। এছাড়া গুলঞ্চ (গিলয়), ত্রিফলা এবং গুগ্গুলুর মতো ভেষজ সাপ্লিমেন্টও উপকারে আসতে পারে।
৭. অ্যালকোহল কমান
অ্যালকোহল, বিশেষত বিয়ার, উচ্চমাত্রায় পিউরিন বহন করে এবং ইউরিক অ্যাসিড বাড়ায়। পাশাপাশি ফ্রুক্টোজসমৃদ্ধ চিনি ও পানীয়ও ইউরিক অ্যাসিডের মাত্রা বৃদ্ধি করে। এর পরিবর্তে দিনে ২ কাপের বেশি না হয়ে থাকে এমন মাত্রায় কফি, হালকা ভেষজ চা বা পানি খাওয়ার অভ্যাস গড়ে তুলুন।
ইউরিক অ্যাসিডের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখলে গাউট ও কিডনি সমস্যা এড়ানো সম্ভব। ওষুধের পাশাপাশি এই প্রাকৃতিক অভ্যাসগুলো রপ্ত করতে পারলে এক মাসেই আপনার শরীর পেতে পারে উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন। তাই আজ থেকেই শুরু করুন ইউরিক অ্যাসিড নিয়ন্ত্রণের যাত্রা। ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন।