
দুর্নীতির অভিযোগে বহুল আলোচিত ও বিতর্কিত শিল্পগোষ্ঠী ইউনাইটেড গ্রুপ তাদের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) শেখ মোহাম্মদ ফারুক হোসেনকে পদ থেকে সরিয়ে দিয়েছে। তার বিরুদ্ধে ৭০ কোটি টাকা আত্মসাৎ ও ক্ষমতার অপব্যবহারসহ একাধিক গুরুতর অভিযোগ উঠেছে। সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্র ঢাকাটাইমসকে এই তথ্য নিশ্চিত করেছে।
শেখ ফারুক হোসেন ঢাকার বিমানবন্দর সংলগ্ন ইউনাইটেড গ্রুপের সহযোগী প্রতিষ্ঠান আইপিসিও (IPCO United Group) ডেভেলপমেন্ট লিমিটেডের বিশাল নির্মাণ প্রকল্প, রিয়েল এস্টেট এবং হোটেল বিভাগসহ একাধিক গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্পের দায়িত্বে ছিলেন।
অভিযোগ রয়েছে, এসব প্রকল্প থেকেই তিনি কোটি কোটি টাকা তছরুপ করেন। দীর্ঘদিন ধরেই তার বিরুদ্ধে অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ থাকলেও মালিকপক্ষের আস্থাভাজন হওয়ার সুবাদে তার বিরুদ্ধে কেউ মুখ খুলতে সাহস করত না।
তবে সম্প্রতি গ্রুপের শীর্ষপর্যায়ে এসব অভিযোগ নিয়ে বিস্তারিত তথ্য উপস্থাপিত হলে তাৎক্ষণিকভাবে তার চাকরিচ্যুতির সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
ক্ষমতার দাপটে কোণঠাসা হয়েছিলেন পুরোনো কর্মকর্তারা
ইউনাইটেড গ্রুপের একাধিক অভিজ্ঞ কর্মকর্তা অভিযোগ করেন, শেখ মোহাম্মদ ফারুক ছিলেন ‘উড়ে এসে জুড়ে বসা’এক আধিপত্যবাদী চরিত্র। তিনি নিজস্ব বলয় গড়ে তুলে দীর্ঘদিন ধরে গ্রুপে ক্ষমতার একচ্ছত্র নিয়ন্ত্রণ বজায় রেখেছিলেন।
তিনি ছিলেন এমন এক ব্যক্তি, যার নির্দেশনা না মানলে চাকরিতে টিকে থাকা ছিল দুরূহ। কর্মীদের অতিরিক্ত কাজ করানো, ওভারটাইম না দেওয়া এবং ভারতীয় নাগরিকদের উচ্চ বেতনে গুরুত্বপূর্ণ পদে বসানো— এসব নিয়ে দীর্ঘদিন ধরেই গ্রুপের ভেতরে অসন্তোষ বিরাজ করছিল।
বিশৃঙ্খলা ছড়াতে ‘হেলমেট বাহিনী’ ব্যবহার
গোলাপবাগে অবস্থিত ইউনাইটেড গ্রুপের ‘সেন্টার পয়েন্ট’ নামক ভবনে শেখ মোহাম্মদ ফারুকের একটি ‘হেলমেট বাহিনী’র অফিস ছিল বলে অভিযোগ রয়েছে।
এই বাহিনীটি হকিস্টিক, বুলেটপ্রুফ জ্যাকেট ও অবৈধ অস্ত্র নিয়ে বিভিন্ন সময়ে তুচ্ছ ঘটনায় সহিংসতায় জড়িয়েছে।
সাম্প্রতিক এক ঘটনায় ইউনাইটেড গ্রুপের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট এসএস বিল্ডার্সের নিরাপত্তাকর্মীদের ওপর হামলার অভিযোগ রয়েছে এই বাহিনীর বিরুদ্ধে।
আহতদের মধ্যে মোহাম্মদ জনি নামের একজন এখন মরণাপন্ন অবস্থায় হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।
সুপার শপ ইউনিমার্টেও দুর্নীতি
শেখ মোহাম্মদ ফারুক ইউনাইটেড গ্রুপের মালিকানাধীন সুপার শপ ‘ইউনিমার্ট-এরও দেখভাল করতেন।
সেখানেও তার বিরুদ্ধে রয়েছে অর্থ নয়ছয়, অনৈতিক লেনদেন এবং কর্মীদের শোষণের অভিযোগ।
নিরাপত্তা, পণ্য সংগ্রহ এবং হিসাবরক্ষণের নানা পর্যায়ে অস্বচ্ছ লেনদেনের অভিযোগ উত্থাপিত হয়েছে তার বিরুদ্ধে।
রাজনৈতিক যোগসূত্র ও বিতর্কিত অতীত
শেখ মোহাম্মদ ফারুকের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগের পেছনে তার রাজনৈতিক প্রভাব খাটানোর অভিযোগও রয়েছে।
তিনি আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও সাবেক হুইপ মির্জা আজমের ঘনিষ্ঠ বন্ধু হিসেবে পরিচিত।
এ ছাড়া তিনি ছিলেন বিতর্কিত এইচএসবিসি ব্যাংকের সাবেক কর্মকর্তা, যেই ব্যাংকটি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে অর্থপাচারের অভিযোগে ২ বিলিয়ন ডলার জরিমানার মুখে পড়েছিল।
ফারুকের ব্যাংকিং ক্যারিয়ার ঘিরেও ছিল নানা প্রশ্নবিদ্ধ ইতিহাস।
পরিচালনা পর্ষদে বিভাজনের পেছনেও তার হাত?
ইউনাইটেড গ্রুপের অভ্যন্তরীণ সূত্র দাবি করেছে, শেখ মোহাম্মদ ফারুক হোসেন গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা পরিচালকদের মধ্যে বিশ্বাসভঙ্গ ও বিভক্তি সৃষ্টির নেপথ্য কারিগর।
গ্রুপের বর্তমান প্রধান উপদেষ্টা ও চেয়ারম্যানের কান ভারী করে তিনি ভবিষ্যতে নিজের অবস্থান পাকাপোক্ত করতে পরিচালনা পর্ষদে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করেন বলে দাবি সংশ্লিষ্টদের।
একাধিক মামলা
শেখ ফারুক হোসেনের বিরুদ্ধে গুলশান থানায় হত্যাচেষ্টার অভিযোগে মামলা আছে। গুলশানের ‘সেন্টার পয়েন্ট’ একটি ফ্লোর নিয়ে বিরোধে ফারুক তার ক্যাডার বাহিনী দিয়ে এসএস বিল্ডার্সের কয়েকজন নিরাপত্তারক্ষীকে বেদম প্রহর করে। এই ঘটনায় গুলশান থানায় শেখ ফারুক হোসেনের বিরুদ্ধে মামলা হয়। এছাড়া তার বিরুদ্ধে আরও মামলা রয়েছে।
অভিযোগ বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে শেখ ফারুক হোসেন ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘এখন আমি ইউনাইটেড গ্রুপে নেই এ কারণে আর্থিক অনিয়মসহ এত সব অভিযোগ আনা হচ্ছে। এসব তথ্য সঠিক নয়।’
(ঢাকাটাইমস