Image description

পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (পবিপ্রবি) শাখা ছাত্রদলের এক নেতার হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে দেয়া নেতিবাচক নির্দেশনার একটি স্ক্রিনশট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। এ নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়জুড়ে তৈরি হয়েছে চাঞ্চল্য আর সমালোচনা। ওই নির্দেশনায় কর্মীদের ‘ফেক আইডি’ খুলে নিয়মিত পোস্ট করার নির্দেশনা দেন ওই নেতা। একইসাথে গড়ে তুলার চেষ্টা করেন নিজস্ব ‘বট বাহিনী’।

ছড়িয়ে পড়া ওই স্ক্রিনশটে দেখা যায়, ‘ছাত্রদল-পবিপ্রবি-অফিসিয়াল’ নামের একটি হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে শাখা ছাত্রদলের নেতা তানভীর আহমেদ লেখেন, ‘আগামীকালের মধ্যে সবাই একটা ফেক আইডি খুলবি। তারপর দিনে অন্তত ১০টা পোস্ট করবি। কী পোস্ট করবি, সেটা গ্রুপে বলে দিব। সবার আইডির লিঙ্ক দিতে হবে।’

ফেক আইডিগুলোর ব্যবস্থাপনায় ‘শ্যাডো গ্রুপ’ খোলার কথাও বার্তায় উল্লেখ রয়েছে। সেখানে সব সদস্যের বিকল্প আইডি সংরক্ষণের নির্দেশ দিয়ে তানভীর লেখেন, ‘এটা করতেই হবে মাস্ট। সপ্তাহ শেষে রিপোর্ট করব কে কত পোস্ট করেছে, কতটা রিচ পেয়েছে।’

এদিকে ফেক আইডিগুলো দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্য রাজনৈতিক সংগঠনের সমর্থকদের সাথে ‘মিউচুয়াল ফ্রেন্ড’ বাড়াতে এবং প্রোফাইলে বিশেষ কিছু ছবি রাখতে বলা হয়েছে। স্ক্রিনশটে আরো লেখা রয়েছে, ‘আইডিগুলো দিয়ে শিবির, ছাত্রলীগপন্থী ছেলেদের রিকোয়েস্ট পাঠাবি। প্রোফাইলে লাল কিছু বা স্বাধীনতা টাইপ ছবি থাকবে। এক সপ্তাহের মধ্যে আইডিতে ৫০০ প্লাস ফ্রেন্ড থাকতে হবে।’

এছাড়া পাবলিকিয়ান, ডেইলি ক্যাম্পাসসহ বিভিন্ন গ্রুপে সক্রিয় থাকতে বলা হয়েছে। তানভীর লেখেন, ‘এ অ্যাক্টিভিটিটুকু সবারই করতে হবে। এটা করা এখন ফরজ হয়ে গেছে।’

গ্রুপের একাধিক সদস্য জানিয়েছেন, শতাধিক সদস্যের এ গ্রুপটি ছাত্রদলের অভ্যন্তরীণ যোগাযোগের জন্য ব্যবহৃত হয়। কয়েকজন ওই স্ক্রিনশটের সত্যতাও নিশ্চিত করেছেন।

জানা গেছে, জুলাইয়ের ‘গণঅভ্যুত্থান’ পরবর্তী সময় এবং নতুন কমিটি ঘোষণার আগে এসব নির্দেশনা দিয়েছিলেন তানভীর।

তানভীর বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী। এছাড়া তিনি পবিপ্রবিতে ছাত্রদলের নবগঠিত কমিটির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পদপ্রত্যাশী ছিলেন বলে জানা গেছে।

এ বিষয়ে ছাত্রদল নেতা তানভীর আহমেদের সাথে যোগাযোগ করলে তিনি বলেন, ‘এ ম্যাসেজটি কখন করা হয়েছিল সেটা আমার মনে পড়ছে না। তাই এ মুহূর্তে কিছু বলতে পারছি না।’

এ বিষয়ে পবিপ্রবি ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক সোহেল রানা জণি বলেন, ‘এ নির্দেশনাটি সম্ভবত আমাদের কমিটি হওয়ার আগেই কেন্দ্রীয় নির্দেশনার জন্য খোলা গ্রুপে দেয়া হয়েছিল। তখন তানভীরও কমিটির পদ প্রত্যাশী ছিলেন। সম্ভবত কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দের মনোযোগ আকর্ষণ করতে অথবা তার অনুসারীদের উদ্দীপিত করতে তিনি এ ধরনের নির্দেশনা দিয়েছিলেন। তবে তানভীরের এমন বিতর্কিত কাজের দায়ভার পবিপ্রবি ছাত্রদল ‌নিবে না।’

এছাড়া তার বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেয়া হবে বলেও নিশ্চিত করেন তিনি।

এদিকে তানভীর আহমেদ এর আগেও একাধিক বিতর্কে জড়িয়েছেন। গত বছর শিক্ষার্থীদের স্বাক্ষর জাল করার অভিযোগ ওঠে তার বিরুদ্ধে। পরে সমালোচনার মুখে তিনি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ক্ষমা চান। এছাড়া বিভিন্ন সময় শিক্ষার্থীদের সাথে বাগ্বিতণ্ডার ঘটনাও রয়েছে তার বিরুদ্ধে।