Image description

দিনটি ছিল শুক্রবার। ২০২৪ সালের ১৯ জুলাই। রাস্তায় নেমেছিল স্বপ্নের মিছিল, হাতে পোস্টার, কপালে পতাকা, কণ্ঠে সমতার গান। রাষ্ট্র তার জবাব দেয় বারুদের গন্ধে, গুলির শব্দে। নগরীর মিন্টু কলেজ এলাকা রূপ নেয় রণক্ষেত্রে। একটি বুলেটের আঘাতে সেখানেই থেমে যায় ২৪ বছর বয়সী স্বপ্নচারী যুবক রেদোয়ান হাসান ওরফে সাগরের জীবন।

সেদিন বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে অংশ নিয়েছিলেন সাগর। সন্ধ্যা ৭টার দিকে উত্তাল মিছিল পৌঁছে মিন্টু কলেজ এলাকায়। সেই মিছিলের অগ্রভাগে ছিলেন তিনি। আওয়ামী লীগের কর্মী ও পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে রেদোয়ান হাসান সাগরসহ আহত হন অন্তত ৩৫ জন। গুলিবিদ্ধ সাগরকে নেওয়া হয় হাসপাতালে। ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের উপপরিচালক ডা. জাকিউল ইসলাম জানিয়েছিলেন, তাকে মৃত অবস্থায় হাসপাতালে আনা হয়েছিল।

রেদোয়ান হাসান সাগর ময়মনসিংহ নগরের আকুয়া চৌরঙ্গী মোড় এলাকার ব্যবসায়ী আসাদুজ্জামানের ছেলে। দুই ভাইবোনের মধ্যে রেদোয়ান বড় ছিলেন। তিনি ফুলবাড়িয়া ডিগ্রি কলেজে হিসাববিজ্ঞান বিভাগে অনার্স তৃতীয় বর্ষের পরীক্ষা শেষে চতুর্থ বর্ষে ভর্তির প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। পড়ালেখার পাশাপাশি ময়মনসিংহ নগরে এমএম কম্পিউটার নামে একটি প্রতিষ্ঠানে খণ্ডকালীন চাকরি করতেন। হিসাববিজ্ঞানে পড়লেও আইটিতে বেশ দক্ষ ছিলেন সাগর।

সাগরের মা রহিমা খাতুন ক্যান্সারে ভুগছেন ৯ বছর ধরে। মৃত্যুর প্রহর গুনছেন প্রতিমুহূর্তে। এ অবস্থাতেই একমাত্র ছেলের মৃত্যু দেখতে হয়েছে তাকে। আজও তার কান্না থামছে না। শহীদ রেদোয়ান হাসান সাগরের বাসায় গিয়ে দেখা যায়, একটি কক্ষে মোবাইলে ছেলের ছবি দেখছেন আর বিলাপ করে চলছেন মা রহিমা। বাসার যে কক্ষটিতে সাগর থাকতেন সেখানে বসে কথা হয় মায়ের সঙ্গে। খাটের পাশেই ঘুমিয়ে ছিল তার আদরের বিড়াল। খাটের পাশে ট্রাঙ্কের ওপর সারিবদ্ধভাবে সাজানো তার পড়ার বইগুলো।

রহিমা খাতুন বলেন, শুক্রবার জুমার নামাজের পর ভাত খেয়ে বলে যায় চড়পাড়া এলাকায় ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে যাচ্ছে সে। তার বন্ধু হাসপাতালে ভর্তি আছে। তাকে দেখতে যাবে। সেদিন বিক্ষোভে উত্তাল ছিল পুরো শহর। সন্ধ্যার পর সাগরের ফোনে কল দিলে অন্য একজন রিসিভ করে জানান সাগর আর এ দুনিয়াতে নেই। পুলিশের গুলিতে মারা গেছে।

এ সময় কথা হয় পাশে থাকা সাগরের বাবা আসাদুজ্জামানের সঙ্গে। কালবেলাকে তিনি বলেন, ‘আমার সব এলোমেলো হয়ে গেছে। ঘর করার সময় ভেবেছিলাম স্ত্রী মারা যাবে, কিন্তু সে রয়ে গেছে। যে মালিক সেই চলে গেছে। আমার কোনো ক্ষোভ নেই, দুঃখ নেই, আক্ষেপ নেই। তবে ভবিষ্যতে এমন পরিস্থিতিতে যেন কাউকে পড়তে না হয়। আর কোনো মায়ের বুক যেন খালি না হয়। আমার ছেলের রক্তের বদলে দেশে শান্তি ফিরে আসুক।’

মামলা কেন করেননি, এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘পুলিশ বলেছিল মামলা করার জন্য। কিন্তু আমাদের কোনো অভিযোগ নেই। ছেলের লাশ তুলে চিরাফাড়া করে পোস্টমর্টেম করতে হবে, এজন্য মামলা করিনি। আমি আল্লাহর কাছে বিচার চাই। দুনিয়ায় কারও কাছে বিচার চাই না।’