
পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচন নিয়ে বিএনপিকে কড়া বার্তা দিলেন ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের আমির মুফতি সৈয়দ মুহাম্মদ রেজাউল করিম পীর সাহেব চরমোনাই।
তিনি বলেন, ‘বিএনপি যে কী কারণে পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচন চায় না তারাই ভালো বলতে পারবেন। তবে, আমরা দেখেছি, যদি তাদের ভোটের সংখ্যা বেশি থাকে তারাই বেশি আসন পাবে। বিএনপি হয়তো এককভাবে ক্ষমতায় যাওয়ার চিন্তা করছে বা স্বপ্ন লালন করছে। আর এ পদ্ধতিতে এককভাবে ক্ষমতায় যেতে পারবে না। এজন্য হয়তো তারা বিরোধিতা করছে।’
মঙ্গলবার (১ জুলাই) সন্ধ্যা ৭টার দিকে ‘আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচন- ইসলামপন্থিদের ঐক্য ভাবনা ওলামায়ে কেরাম ও তাওহিদি জনতার করণীয়’ শীর্ষক মতবিনিময় সভা শেষে এসব কথা বলেন তিনি।
জাতীয় ওলামা মাশায়েখ আইম্মা পরিষদ সিলেট জেলা ও মহানগরের উদ্যোগে এ সভা অনুষ্ঠিত হয়।
মুফতি সৈয়দ মুহাম্মদ রেজাউল করিম বলেন, বেশিরভাগ রাজনৈতিক দল, বেশিরভাগ বুদ্ধিজীবী, দেশপ্রেমিক সবাই পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচন চাচ্ছে। আর এটাই যৌক্তিক। তামাম দুনিয়ায় প্রায় ৯০/৯১টি দেশে এ পদ্ধতিতে নির্বাচন হচ্ছে। এ পদ্ধতিতে তুলনামূলক অবস্থা ভালো।
বিএনপিকে ইঙ্গিত করে তিনি বলেন, চাঁদাবাজি দেশের জনগণ দেখছে। যারা চাঁদাবাজির সঙ্গে জড়িত তারা যেন বাংলাদেশের রাষ্ট্রক্ষমতায় আসতে না পারে সে জন্য জনগণকে সজাগ থাকার জন্য উদাত্ত আহ্বান জানাই।
এর আগে দরগাহ গেইটস্থ সিলেট নগরীর কেন্দ্রীয় মুসলিম সাহিত্য সংসদ সুলেমান হলে প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন সৈয়দ মুহাম্মদ রেজাউল করিম।
তিনি বলেন, আমরা আওয়ামী লীগ দেখেছি, আমরা বিএনপির শাসনামল দেখেছি, আমরা জাতীয় পার্টিসহ আরও যারা দেশ পরিচালনা করেছিলেন তাদেরও দেখেছি। এখন এসব দল নতুনভাবে ক্ষমতায় গিয়ে আমাদের কী মধু নতুনভাবে দেবে! সেটাও বাংলাদেশের মানুষের কাছে নতুনভাবে পৌঁছানোর কোনো প্রয়োজন নেই। ইতোমধ্যে দেশের মানুষ সেসব সিগন্যালও পেয়ে গেছে। ক্ষমতায় যাবার আগেই তারা সন্ত্রাসী কার্যকলাপ ও চাঁদাবাজি করতে গিয়ে নিজেরা নিজেরা মারামারি করে একশর বেশি মারা গেছে।
তিনি আরও বলেন, ১৯৮৭ সালে প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর থেকে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ একটি আসনেও দলীয় ব্যানারে সংসদ নির্বাচনের জন্য এগিয়ে যায়নি। তার মানে কি আমাদের সুযোগ ছিল না? অবশ্যই সুযোগ ছিল, কিন্তু আমরা চাঁদাবাজদের সহযোগিতা নিয়ে কিংবা তাদের সহায়তা করতে নির্বাচনে যাইনি।
চরমোনাই পীর বলেন, আমরা কিছুদিন আগে দেখেছি, সাবেক ভূমিমন্ত্রী শুধু লন্ডনেই সাড়ে তিনশরও বেশি বাড়ি বানিয়েছেন। সব মিলিয়ে বিভিন্ন জায়গায় ৬০০-এর বেশি বাড়ি বানিয়েছেন। দেশের টাকা বিদেশে পাচার করেছেন। মায়ের বুক খালি করে মাকে ছেলেহারা করবে, হাজার হাজার মানুষকে হয়রানি করার নামে মিথ্যা মামলায় জড়াবে, আমাদের আগামী প্রজন্মকে খুনি-সন্ত্রাসী বানাবে, নাস্তিক বানাবে- এই কাজে ইসলামী আন্দোলন কখনোই সহযোগিতা করেনি। আর করবেও না। আল্লাহর রহমতে এই ইসলামী আন্দোলন কখনোই চাঁদাবাজদের সহযোগী হয়নি, আর কখনো হবেও না।
তিনি বলেন, আর এই প্রেক্ষাপট থেকে গত ৫ আগস্টের পর থেকে বাংলাদেশের ইসলামপন্থিদের একটি বাক্স করার ক্ষেত্র তৈরির পরিকল্পনা গ্রহণ ও বাস্তবায়নে কাজ করছি। আলহামদুলিল্লাহ আমরা ইতোমধ্যে এক বাক্স দেওয়ার ব্যাপারে একমত হয়েছি। মাঝখানে কে বা কারা কী বলছে সেটা আমাদের বুঝে আসছে না। কিন্তু আগামী নির্বাচনে ইসলামপন্থিদের একটাই বাক্স থাকবে ইনশাআল্লাহ।
মুফতি রেজাউল করিম বলেন, আনুপাতিক প্রতিনিধিত্ব (পিআর) পদ্ধতিতে নির্বাচনের জন্য দেশের অধিকাংশ রাজনৈতিক দল একমত হয়েছেন। একদিকে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা অন্যদিকে অন্তর্ভুক্তিমূলক প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করবে। পিআর পদ্ধতিতে দলগুলো ভোটের অনুপাতে সংসদীয় আসন পায়, ফলে কোনো দল এককভাবে ক্ষমতা দখল করতে পারে না এবং সংসদে ছোট দলগুলোর প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত হয়। এতে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে পারস্পরিক আলোচনা আপস এবং যৌথ সিদ্ধান্ত গ্রহণের পরিবেশ তৈরি হয়। এ পদ্ধতি চালু হলে দলগুলো বাধ্য হবে। সম্মিলিত সিদ্ধান্ত গ্রহণ যার ফলে একনায়কতান্ত্রিক প্রবণতা প্রতিহত করা সম্ভব হবে। পিআর পদ্ধতির নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতা বিকেন্দ্রীকরণ সম্ভব হয়। কারণ এতে বড় দলগুলোর একচ্ছত্র আধিপত্য কমে আসে তখন ছোট দলগুলোর অংশগ্রহণ বাড়ে। রাজনৈতিক বৈচিত্র্যকে সম্মান করতে এবং আইন প্রণয়ন প্রক্রিয়াকে অধিকতর প্রতিনিধিত্বমূলক ও জবাবদিহিতামূলক করতে আনুপাতিক প্রতিনিধিত্বভিত্তিক নির্বাচন পদ্ধতির পথেই আমাদের চলতে হবে। এটাই সর্বোত্তম পদ্ধতি।
জাতীয় ওলামা-মাশায়েখ আইম্মা পরিষদ সিলেট জেলা সভাপতি হজরত মাওলানা রেদওয়ানুল হক চৌধুরী রাজুর সভাপতিত্বে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন- শায়খ মাওলানা নুরুল ইসলাম, জাতীয় উলামা মাশায়েখ আইম্মা পরিষদের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক মাওলানা মুফতি রেজাউল করিম আবরার, জামেয়া গলমুকাপন মাদ্রাসার শাইখুল হাদিস শায়খ মাওলানা রুহুল আমিন, জাতীয় উলামা মাশায়েখ আইম্মা পরিষদের সিলেট বিভাগীয় কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মাওলানা মুফতি মাঈনুদ্দীন খান তানভীর, জাতীয় উলামা মাশায়েখ আইম্মা পরিষদ সিলেট মহানগরের সভাপতি আসআদ উদ্দিন, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস সিলেট মহানগরীর সভাপতি মাওলানা গাজী রহমতুল্লাহ, ইসলামী আন্দোলনের সিলেট জেলা শাখার সভাপতি মাওলানা মুফতি সাইদ আহমদ প্রমুখ।