Image description
 

ঢাকার উপকণ্ঠে অবস্থিত কেরানীগঞ্জ, এক সময়ের শান্ত ও ছিমছাম উপজেলা, বর্তমানে যানজটের বিভীষিকাময় শহরে রূপ নিয়েছে। প্রতিদিন সকাল থেকে রাত পর্যন্ত চরম যানজটে নাকাল হয়ে পড়ছে স্থানীয় বাসিন্দা, শিক্ষার্থী, কর্মজীবী মানুষ ও রোগীরা। অথচ এই সমস্যা সমাধানে স্থানীয় প্রশাসনের কার্যকর কোনো উদ্যোগ নেই বলেই অভিযোগ ভুক্তভোগীদের।

যানজটের মূল কারণগুলো:

1. অব্যবস্থাপনায় গার্মেন্টস ও শিল্পকারখানাগুলো
কেরানীগঞ্জের জিনজিরা, আগানগর, কালিন্দী ও শুভাড্যা এলাকাজুড়ে রয়েছে শত শত গার্মেন্টস ও ছোট-বড় শিল্পকারখানা। প্রতিদিন ভোর থেকে এসব প্রতিষ্ঠানে শ্রমিকদের আনাগোনা শুরু হয়, যাদের বহনে ব্যবহৃত হয় শত শত বাস ও লেগুনা। রাস্তাগুলোর প্রস্থ কম হওয়ায় দ্রুতই জট সৃষ্টি হয়।

 

2.ফুটপাত দখল করে দোকানপাট
ফুটপাত কিংবা রাস্তার উভয় পাশ দখল করে গড়ে উঠেছে ভ্রাম্যমাণ দোকান, ফলের ঠেলা, গার্মেন্টসের পাইকারি দোকানসহ নানাবিধ অবৈধ স্থাপনা। এতে করে পথচারীরা রাস্তায় নেমে হাঁটতে বাধ্য হন, এবং গাড়ি চলাচলে ব্যাঘাত ঘটে।

 

3.কোনো ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা নেই
কেরানীগঞ্জের বেশিরভাগ গুরুত্বপূর্ণ মোড়, যেমন কালিন্দী মোড়, রুহিতপুর মোড়, আরসিএল গেইট এলাকায় ট্রাফিক পুলিশের কোনো উপস্থিতি নেই বললেই চলে। এমনকি যান চলাচলের জন্য নেই কোনো সিগন্যাল বা দিকনির্দেশনা।

4. দুইটি সেতুতেই চাপ, নেই বিকল্প রুট
বুড়িগঙ্গা সেতু-১ এবং ২-এর উপরই মূলত ঢাকা-কেরানীগঞ্জ চলাচলের চাপ। অথচ বিকল্প রুট না থাকায় একটু দুর্ঘটনাতেই যান চলাচল স্থবির হয়ে পড়ে।

5. প্রশাসনের দায় এড়ানোর সুযোগ নেই
বিভিন্ন সময় স্থানীয় জনগণ প্রশাসনের কাছে বারবার অভিযোগ করলেও, কেবল আশ্বাস ছাড়া তেমন কোনো দৃশ্যমান পরিবর্তন দেখা যায়নি। মোবাইল কোর্ট, উচ্ছেদ অভিযান বা যানবাহন নিয়ন্ত্রণে কোনো নিয়মিত উদ্যোগ নেই।

একজন ক্ষুব্ধ বাসিন্দা বলেন, “এখানে যদি প্রশাসন একটু আন্তরিক হতো, প্রতিদিন অফিস সময়ে ট্রাফিক মোতায়েন করতো, তাহলে এত ভোগান্তি হতো না।”

আরেক দোকানদার বলেন, “অভিযান নামে শুধু ছবি তোলার জন্য। পরে আবার আগের অবস্থায় চলে আসে।”

কেরানীগঞ্জের এই যানজট শুধু একটি ট্রাফিক সমস্যা নয়, এটি এখন জনস্বাস্থ্য, অর্থনীতি এবং সামাজিক জীবনের ওপর মারাত্মক প্রভাব ফেলছে। এই অবস্থায় প্রশাসনের উচিত হবে দায়িত্ব এড়িয়ে না গিয়ে, জনগণের কষ্ট লাঘবে অবিলম্বে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া।