
বিএনপির দম ফুরিয়ে আসছে বলে মন্তব্য করেছেন সাবেক সংসদ সদস্য, রাজনীতিবিদ ও কলাম লেখক গোলাম মাওলা রনি। বিএনপির ঘন ঘন চীন সফর, এখানে-ওখানে ছোটাছুটিসহ বিভিন্ন সমস্যা বেড়েই চলেছে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
রনি বলেন, ‘চলমান রাজনীতিতে যে একটা মানসিক যুদ্ধ চলছে, সে যুদ্ধ বিএনপির সঙ্গে জামায়াতের, জামায়াতের সঙ্গে অন্যান্য রাজনৈতিক দলের। ড. ইউনূসের সঙ্গে সেনাপ্রধান, রাষ্ট্রপতির একটা মানসিক দূরত্ব আছে।
‘এদের মধ্যে রাজনৈতিক অঙ্গনে দৃশ্যত কোনো হানাহানি নেই। তবে এখানে নীরব চাঁদাবাজি, নীরব দখলবাজি, দুর্নীতি, অনিয়ম চলছে, যা আওয়ামী জমানার মতো প্রকাশ্য নয়। তবে তলে তলে নীরবে-নিভৃতে সব কিছু হচ্ছে অতীতের যেকোনো অপকর্মের চাইতে বেশি মাত্রায়।
‘এই কর্মের ফলে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন ড. মুহাম্মদ ইউনূস এবং তার সঙ্গী-সাথিরা। দ্বিতীয় ক্ষয়ক্ষতির শিকার হচ্ছে বিএনপি, তৃতীয় ক্ষয়ক্ষতির শিকার হচ্ছে জামায়াত। আমি জামায়াত এবং সরকার নিয়ে কোনো কিছুই বলব না। বিএনপি নিয়ে বলছি এই কারণে যে যেহেতু বিএনপির পক্ষ হয়ে আমি নির্বাচন করেছি, বিএনপির সঙ্গে সম্পৃক্ত রয়েছি।
‘আমি যেটা দেখলাম যে বিএনপি যখন সেই ২০২৪ সালের আগস্ট বিপ্লবের পরে প্রথমে কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে গেল। এ কী হলো, এর কারণ হলো যে তারা তো শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে এই ১৫-১৬ বছর ধরে লড়াই করেছে, সংগ্রাম করেছে এবং তারা সর্বস্ব রাজপথে বিসর্জন করেছে। কারাগারে বিসর্জন করেছে শেখ হাসিনাকে ক্ষমতাচ্যুত করার জন্য। কিন্তু বাস্তবতা হলো তারা ব্যর্থ হয়েছে।
‘দুই নম্বর হলো— বিএনপি এই জুলাই-আগস্ট বিপ্লবকে প্রথমে সমর্থন দিতে চায়নি। কিন্তু পরবর্তী সময়ে তারা নৈতিকভাবে সমর্থন দিয়েছে এবং শেষের সপ্তাহে— অর্থাৎ আগস্ট মাসের পাঁচ তারিখে পতন হলো, তার আগের সাত দিনে তারা সর্বশক্তি নিয়ে রাজপথে থাকার চেষ্টা করেছে। এর মধ্যেই অনেকগুলো ঘটনা ঘটে গেল। সরকার গঠন হয়ে গেল। তারপর শেষে সেই সমন্বয়কদের আবির্ভাব হলো। তরুণদের আবির্ভাব হলো। তারা খুব চুপচাপ রইল। পুরো আগস্ট মাসটা তারা চুপচাপ রইল।’
‘সেপ্টেম্বর মাস থেকে তারা দেখল যে তাদের জায়গা জামায়াত দখল করে ফেলেছে এবং জামায়াত সব জায়গায় প্রাধান্য বিস্তার করছে এবং বিএনপিকে সবাই মাইনাস করার জন্য, ছোট করার জন্য, হেয় করার জন্য তারা চেষ্টা করছে। তখন তারা ঘুরে দাঁড়াল, ঘুরে দাঁড়িয়ে তারা বলা শুরু করল যে আমরা এই আন্দোলন করেছি, আমরা টাকা দিয়েছি, আমরা সুসংগঠিত করেছি। আমরা পেছন থেকে এই লজিস্টিক সাপোর্ট দিয়েছি এবং তাদের এই কথা বলার জন্য তারা বিভিন্ন মাধ্যমে নিজেরা বলল এবং তাদের ভাড়া করা বিভিন্ন লোকের মাধ্যমে এ কথাগুলো বলানোর চেষ্টা করল। এবং যারা রাষ্ট্র পরিচালনা করল, তারা সংগত কারণে বিএনপির মতো একটা বড় দলের সঙ্গে ঝামেলায় জড়াতে চাইল না।’
‘এ কারণে সরকার বড়শি ফেলে বিএনপি নামধারী নেতাদের প্রলোভন দেখিয়ে বড়শিতে আটকে ফেলল। বিভিন্ন টেন্ডার, নিয়োগ, ইজারা, বিভিন্নভাবে আটকাল। তখন বিএনপির যারা শীর্ষ নেতৃত্ব তারা বুঝে গেল যে বড়শিতে তাদের লোকজন আটকে গেছে। এখন এই বড়শি থেকে এদের বাঁচানো সম্ভব নয়। এরপর ২০২৫ সালের মার্চ থেকে শুরু হলো টানাটানি। সেই সুতো টানাটানিতে একটি মাছও বের হতে পারেনি, বরং আরো বেশি করে গিলেছে। সেখানে দেখা গেল, রাষ্ট্রীয় যে সুযোগ-সুবিধাগুলো রয়েছে, শহর-জনপদের যে খাদ্যগুলো রয়েছে, সব কিছু নিজেদের হাতে নেওয়ার জন্য বিএনপির নেতৃত্ব চেষ্টা শুরু করে দিল মার্চ মাস থেকে।’
‘সেই চেষ্টা এখন পর্যন্ত অব্যাহত রয়েছে। কিন্তু কোনো সফলতা নেই। ফলে এখন ঘোরাফেরা হচ্ছে বিভিন্ন জায়গায়। যে আশ্বাস দিচ্ছে, যে যে কথা বলছে, তার পেছনেই ছুটছে। দেশে এত কাজ বাদ দিয়ে এখন বিএনপির নেতারা চীন দেশে গেছে। এরা যে কেন গেছে, কী জন্য গেছে, এটা আমি বুঝি না। সেখানে কোনো বেনিফিট আছে বলে আমার কাছে জানা নাই। কিছুই করতে পারবে না চীন। এখানে রাষ্ট্রক্ষমতায় আসতে হলে নিজের দম দিয়ে আসতে হবে, নিজের শক্তি দিয়ে আসতে হবে।’
‘এগুলো না করে, বিএনপির লোকদের টেকনাফে যেতে হবে, উখিয়া যেতে হবে, কক্সবাজারে যেতে হবে, চট্টগ্রামে যেতে হবে, সিলেটে যেতে হবে। ঢাকা শহরের কারওয়ান বাজারে, গাবতলীর হাটে যা কিছু আছে— এগুলো বন্ধ করতে হবে। সন্ধ্যার পরে গুলশানের কোন কোন অফিসের সামনে হাজার হাজার গাড়ি থামে এবং হাজার হাজার কোটি টাকা লেনদেন হয়, এগুলো বন্ধ করতে হবে। এ ছাড়া বেইজিংয়ে গিয়েই নির্বাচন করতে হবে। ঢাকাতে ইলেকশন করা লাগবে না। এবং এই যে তারা ঘন ঘন সেখানে যাচ্ছে, এতে করে স্পষ্টতই তাদের যে রাজনৈতিক যে দম, সেই দমটা যে কমে যাচ্ছে এটা স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে।’