
মানবাধিকার সংগঠন অধিকারের এক প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, শেখ হাসিনার গত সরকারের আমলে গুম করে নির্যাতন,কারাগারে নির্যাতনের ঘটনার ব্যাপক বৃদ্ধি ঘটে। এই সময় র্যাব, পুলিশ এবং বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থাকে ব্যবহার করে নির্যাতন, গুম এবং বিচারবহির্ভূত হত্যার ঘটনাও ঘটে। ২০০৯ সালের জানুয়ারি থেকে ২০২৪ সালের ৫ অগস্ট পর্যন্ত ১৮২ ব্যক্তি নির্যাতনের কারণে মৃত্যুবরণ করেন। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের আমলে ২০২৪ এর ৯ অগাস্ট থেকে ২০২৫ সালের ২০ জুন পর্যন্ত ১০ ব্যক্তি নির্যাতনে মৃত্যুবরণ করেন।
২৬ জুন জাতিসংঘ ঘোষিত নির্যাতিতদের সমর্থনে আন্তর্জাতিক সংহতি দিবস উপলক্ষে অধিকারের এক প্রতিবেদনে এসব তথ্য উল্লেখ করা হয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, নির্যাতনের বিষয়ে দীর্ঘদিন ধরে দায়মুক্তির সংস্কৃতি চালু থাকা এবং এটি বন্ধে নির্যাতন ও হেফাজতে মৃত্যু (নিবারণ) আইনের বাস্তবায়ন না হওয়ার কারণেই বিভিন্ন আইন প্রয়োগকারী সংস্থা ও গোয়েন্দা সংস্থার হেফাজতে নির্যাতন ও অমানবিক আচরণের ঘটনাগুলো অব্যাহতভাবে ঘটছে। রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ এবং ফৌজদারি বিচার ব্যবস্থার দুর্বলতা একে প্রকট করে তুলেছে।
রিমান্ডে নিয়ে তথ্য বা স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি আদায়ের জন্য, মিথ্যা বক্তব্য নেয়া এবং ভিন্নমতাবলম্বী ব্যক্তিদের শায়েস্তা করার জন্য নির্যাতন চালানো হয়ে থাকে। কর্তৃত্ববাদী হাসিনা সরকারের আমলে বিরোধীদলের নেতা-কর্মী ও ভিন্নমতাবলম্বীদের ওপর ব্যাপক নির্যাতন চালানো হয়েছিল। বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের সময়ে নির্যাতন কমে আসলেও তা অব্যাহত আছে।
বাংলাদেশে থানা, ডিটেনশন সেন্টার, গোপন বন্দিশালা ও কারা হেফাজতে মানুষ বিভিন্ন ধরনের নির্যাতন, নিষ্ঠুর ও অমানবিক আচরণের শিকার হয়ে থাকেন। ফলে আটক ব্যক্তিদের সম্মান ও মর্যাদাহানি ঘটে এবং তাঁরা নানাভাবে হেয় প্রতিপন্ন হন। আন্তর্জাতিক সনদ অনুযায়ী কোনো ডিটেনশন সেন্টার, কারাগার বা হেফাজতে কোন অজুহাতেই কাউকে নির্যাতন অথবা নিষ্ঠুর, অমানবিক অথবা মর্যাদাহানিকর আচরণ করা বা শান্তি দেয়া যাবে না।
নির্যাতন মানবাধিকার এবং আইনের শাসন প্রতিষ্ঠায় একটি বড় বাধা। অধিকার বাংলাদেশকে একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র হিসেবে প্রতিষ্ঠা করা এবং সেখানে মানবাধিকার ও আইনের শাসন বাস্তবায়নের লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছে। মানবাধিকারের দৃষ্টিকোণ থেকে অধিকার অবিলম্বে নির্যাতন বিরোধী আইনের বাস্তবায়নসহ বাংলাদেশ কর্তৃক অনুস্বাক্ষরিত নির্যাতনের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক কনভেনশনের পূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়ন এবং সেই সঙ্গে কনভেনশন এগেইনস্ট টর্চার এর অপশনাল প্রোটোকল অনুমোদনের দাবি সরকারের প্রতি ছয় দফা সুপারিশ পেশ করে
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশ সরকারকে অপশোনাল প্রটোকল অব কনভেনশন অ্যাগেইনস্ট টর্চার অনুস্বাক্ষর করতে হবে। দেশে একটি জাতীয় প্রতিরোধ এবং প্রতিকারমূলক ব্যবস্থা তৈরিসহ নির্যাতন বিরোধী আন্তর্জাতিক সনদে অনুস্বাক্ষরকারী রাষ্ট্র হিসেবে নির্যাতন বন্ধের ব্যাপারে বাধ্যবাধকতা মানতে হবে। দোষীদের বিচারের সম্মুখীন করতে হবে। বিচারিক প্রক্রিয়ায় রাজনৈতিক প্রভাব বিস্তার এবং হস্তক্ষেপ বন্ধ করতে হবে। নির্যাতন প্রতিরোধে সচেতনতা সৃষ্টির লক্ষ্যে মানবাধিকার রক্ষাকর্মীদের কর্মকাণ্ডে কোনোভাবেই বাধা দেয়া চলবে না।