Image description

সাভারের দক্ষিণ রাজাশনের ব্যবসায়ী মো. ইমরান হোসেন গোলদার। এক সময় বিএনপি’র রাজনীতি করতেন। ছিলেন ওয়ার্ড যুবদলের সহ-সভাপতি। নানা হুমকি ও মামলা -হামলার ভয়ে ২০১৩ সাল থেকে নিজেকে রাজনীতি থেকে দূরে রেখেছেন। তবুও নিস্তার মেলেনি। ২০২৩ সালে রাজনৈতিক হত্যার শিকার হন ইমরানের বড় ভাই জামাল গোলদার। পূর্ব-শত্রুতার জেরে বাসায় ডেকে নিয়ে হাতুড়ি দিয়ে পিটিয়ে হত্যা করেন প্রতিবেশী আওয়ামী লীগ নেতা ফোরকান হাকিম। তখন থেকে ভাই হত্যার বিচার চেয়ে আদালতের বারান্দায় বিরামহীন ঘুরছেন ইমরান গোলদার। তবে হত্যাকাণ্ডে জড়িতদের মামলা তুলে নেয়ার হুমকি-ধমকি থেমে নেই। মামলা তুলতে একাধিকবার মারধর করা হয় ইমরান গোলদারকে। এরমধ্যে ঘটে এক নজিরবিহীন ঘটনা! ভাই হত্যা মামলার সাক্ষ্য দিতে আদালতে গিয়ে নিজেই হত্যা মামলার আসামি হন ইমরান। আদালতে গিয়ে জানতে পারেন তার বিরুদ্ধেই ঢাকার পৃথক পাঁচটি থানায় জুলাই হত্যা মামলা হয়েছে। সরজমিন গিয়ে পরিবারের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, পরিবারের অভিযোগ ২০২৩ সালে বড় ভাই জামাল গোলদারকে হত্যার অভিযোগে যাদের বিরুদ্ধে মামলা করেছেন তারাই পরিকল্পিতভাবে এসব মামলায় ফাঁসিয়েছেন ইমরানকে। পুলিশ ইমরানকে ইতিমধ্যে এসব মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়েছে। অন্যদিকে তার পরিবারও নিয়মিত নানা ধরনের ভয়ভীতি পাচ্ছে। এ সব ঘটনায় পরিত্রাণ চেয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও সরকারের শীর্ষ মহলের দ্বারস্থ হয়েছেন ইমরানের স্ত্রী নাজমা আক্তার। 
সর্বশেষ ৫ই আগস্ট সরকার পতনের পর পরিকল্পিতভাবে ইমরান গোলদারকে ছাত্র-জনতা হত্যার মামলায় ফাঁসিয়ে দেয়। ইমরানের স্ত্রী নাজমা আক্তার বলেন, আমার ভাসুরের হত্যা মামলার আসামিরা নিয়মিত আমাদের পরিবারকে হুমকি-ধমকি দিচ্ছে। তারা আমাদের বাড়িতেও হামলা করেছে।

মামলার নথি থেকে জানা যায়, ৫ই আগস্ট সরকারের পতনের দিন দুপুর ১টায় রাজধানীর শনির আখড়ায় এক ব্যক্তিকে গুলি করে হত্যা করে আওয়ামী লীগ সন্ত্রাসীরা। এ ঘটনার প্রায় ৮ মাস পর গত ২২শে এপ্রিল কদমতলী থানায় পারভেজ হোসেন নামে এক ব্যক্তি ৪৮১ জনের নাম উল্লেখ করে একটি হত্যা মামলা করেন। মামলার এজাহারে উল্লেখ করা আসামিদের তালিকায় ইমরানের নাম ১২৮ নম্বরে রয়েছে। অন্যদিকে ৫ই আগস্ট দুপুর ২টায় আশুলিয়া থানার সামনে আন্দোলনরত অবস্থায় গুলিবিদ্ধ হন আলাউদ্দিন ইসলাম নামে এক আন্দোলনকারী। এ ঘটনায় তিনি বাদী হয়ে ৪৬৩ জনের নাম উল্লেখ করে সংশ্লিষ্ট মামলা করেন। এই মামলায়ও ৪৩০ নম্বর আসামি ইমরান। অর্থাৎ ৫ই আগস্ট এক ঘণ্টার ব্যবধানে শনির আখড়া ও আশুলিয়া থানার দু’টি ঘটনায় ইমরানকে আসামি করা হয়েছে। এছাড়া ১৯শে জুলাই আন্দোলন চলাকালে ইস্ট ওয়েস্ট ইউনিভার্সিটির সামনের একটি হত্যা মামলায়ও তার নাম রয়েছে। আর জুলাই আন্দোলনে হত্যাচেষ্টার অভিযোগ এনে ১০ই অক্টোবর আরেকটি মামলা হয় ইমরানের বিরুদ্ধে। এ মামলার বাদী আনিস ব্যাপারী নামে এক ব্যক্তি।

ইমরানের স্ত্রী নাজমা আক্তার অভিযোগ করে বলেন, মূলত ফোরকান হাকিমের ছোট ভাই ঢাকা জেলা উত্তর ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক রায়হান হামিদ এসব মামলার পেছনে কলকাঠি নাড়ছেন। তিনি বলেন, আমার ভাসুরকে হত্যার দায়ে মামলা করার পর থেকেই তারা আমাদের পরিবারকে নানা ধরনের হুমকি-ধমকির মধ্যে রেখেছে। পরিত্রাণ চেয়ে আমরা সাভার রেঞ্জের ডিআইজি, পুলিশ সুপার, অতিরিক্ত পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে বিভিন্ন সময়ে অভিযোগও করেছি। কিন্তু পুলিশ কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। এখন তারা আমার স্বামীকে মিথ্যা মামলা ফাঁসিয়েছে। 

এদিকে গত ৭ই নভেম্বর ২০২৩ এ জামাল গোলদারের ছেলে রিয়াদুল ইসলাম ঢাকা থেকে বাড়ি ফেরার পথে সাভার বাসস্ট্যান্ডে রায়হান হামিদ, ফোরকান হামিদসহ কয়েকজন তার গতি রোধ করে মারধর করে। পরে ছিনতাইকারী অভিযোগ এনে তার বিরুদ্ধে থানায় মামলা দিতে নিয়ে যায় তারা। কিন্তু ঘটনার সত্যতা জানতে পেরে পুলিশ মামলা নেয়নি এবং রিয়াদুলকে ছেড়ে দেয়। এ ঘটনায় রিয়াদুলের মা মশিউরা বেগম বাদী হয়ে সাভার থানায় একটি হত্যাচেষ্টার মামলা করেন।