Image description
ঐকমত্য কমিশন

লন্ডনে প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর ড. ইউনূস ও বিএনপি’র ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের বৈঠক পরবর্তীতে যৌথ বিবৃতি নিয়ে মনঃক্ষুণ্ন জামায়াত। যার প্রতিক্রিয়ায় গতকাল জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের বৈঠক বয়কট করে দলটি। তবে দ্বিতীয় দিনের বৈঠকে জামায়াত অংশ নিবে বলে জানিয়েছে। জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে রাজনৈতিক দলগুলোর দ্বিতীয় পর্যায়ের অসমাপ্ত আলোচনার অংশ হিসেবে গতকাল রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে  এই বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বিএনপিসহ অন্য রাজনৈতিক দলগুলো বৈঠকে অংশ নিলেও অনুপস্থিত থাকে জামায়াতে ইসলামী।

এ প্রসঙ্গে জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল ড. এএইচএম হামিদুর রহমান আযাদ বলেন, লন্ডনে রাজনৈতিক শিষ্টাচার বহির্ভূতভাবে নির্দিষ্ট একটি রাজনৈতিক দলের সঙ্গে অন্তর্বর্তী সরকারের  যৌথ বিবৃতি এবং ব্রিফিংয়ের প্রতিবাদ হিসেবে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের প্রথম দিনের সংলাপ বয়কট করেছে জামায়াত। তিনি বলেন, লন্ডনের বৈঠকের বিষয়ে আমাদের আপত্তি নেই। তবে দেশের জাতীয় রাজনীতির যে কালচার তার ব্যত্যয় ঘটেছে বৈঠক পরবর্তী যৌথ বিবৃতিতে, আমাদের আপত্তিটা সেখানেই। কারণ কোনো দু’টি দেশ অথবা সরকার প্রধানের দ্বিপক্ষীয় বৈঠকের পরই যৌথ বিবৃতি হতে পারে। একটি রাজনৈতিক দলের সঙ্গে আলোচনা কিংবা মতবিনিময়ে যৌথ বিবৃতি হতে পারে না। এতে প্রধান উপদেষ্টার নিরপেক্ষতা ক্ষুণ্ন হয়েছে বলে মনে করে জামায়াত। 

একারণে লন্ডন বৈঠকের পর দিন ১৪ই জুন নির্বাহী পরিষদের বৈঠক ডাকে জামায়াতে ইসলামী। দলের আমীর ডা. শফিকুর রহমানের সভাপতিত্বে বৈঠকে এ বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়। ওই দিনই গণমাধ্যমে পাঠানো বিবৃতিতে বলা হয়- লন্ডন বৈঠক শেষে যৌথ বিবৃতির মাধ্যমে সরকার এবং বিএনপিকে সমশক্তি বোঝানো হয়েছে। অথচ জামায়াতই প্রথম বলেছে, রমজানের আগে নির্বাচন হওয়া উচিত। তাই নির্বাচনের যে নতুন সময়সীমা বলা হচ্ছে, এ নিয়ে আপত্তির কিছু নেই। কিন্তু সরকার যেভাবে শুধু বিএনপি’র সঙ্গে বৈঠক করে সময়সীমা নির্ধারণ করেছে, তা অগ্রহণযোগ্য। জামায়াতের মতে, লল্ডনে তারেক রহমানের সঙ্গে প্রধান উপদেষ্টার বৈঠক হয়েছে ঠিক আছে। কিন্তু আলোচনার পর ঢাকায় সর্বদলীয় বৈঠক করে রমজানের আগে ভোটের ঘোষণা দিলে সব দল এবং সরকারের জন্য ভালো হতো। 

এদিকে জামায়াতের অনুপস্থিতিতে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের গতকালের বৈঠকে বিএনপি, এনসিপি, ইসলামী আন্দোলন, নাগরিক ঐক্য, গণঅধিকার পরিষদ, গণসংহতি আন্দোলনসহ অন্য রাজনৈতিক দলগুলো অংশ নেয়। বৈঠকে সংবিধানের ৭০ অনুচ্ছেদ, সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি মনোনয়ন, নারী প্রতিনিধিত্বসহ বেশ কিছু বিষয় আলোচনা হয়। এ ছাড়া দ্বিকক্ষবিশিষ্ট সংসদ (নিম্নকক্ষ ও উচ্চকক্ষ), প্রধান বিচারপতি নিয়োগ প্রক্রিয়াসহ বেশ কিছু বিষয় আলোচনার স্থান পায়। ১৭, ১৮ ও ১৯শে জুন এই তিন দিন রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা করার কথা রয়েছে কমিশনের। জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের একটি সূত্র বলেছে, প্রথম তিন দিনের বৈঠকে জামায়াত থাকবে না এ বিষয়ে দলটির পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে। কারণ হিসেবে দলটি বলেছে, প্রধান উপদেষ্টার লন্ডন সফরে বিএনপি’র ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সঙ্গে বৈঠকের পর যৌথ ঘোষণার মাধ্যমে জামায়াতকে ‘ইগনোর’ করা হয়েছে। এর প্রতিবাদ হিসেবে তারা মঙ্গলবারের বৈঠকে যোগ দেবে না। অবশ্য কমিশনের পক্ষ থেকে দুই ঘণ্টা পরে হলেও জামায়াতকে বৈঠকে যোগ দিতে অনুরোধ করা হয় বলে জানা গেছে। 

এর আগে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে বৈঠকে জামায়াতের প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব দিয়ে আসছিলেন দলটির নায়েবে আমীর সৈয়দ আব্দুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের। ঈদের আগে ৩রা জুন অনুষ্ঠিত  বৈঠকে তার সঙ্গে ছিলেন দলটির সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা রফিকুল ইসলাম খান ও এএইচ এম হামিদুর রহমান আযাদ। গতকালের জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের বৈঠকে সহ-সভাপতি আলী রীয়াজ ছাড়াও উপস্থিত ছিলেন সদস্য আব্দুল মুয়ীদ চৌধুরী, সফর রাজ হোসেন, বদিউল আলম মজুমদার, ইফতেখারুজ্জামান ও প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মনির হায়দার।