Image description
১০ বছরে বাইক বেড়েছে অনন্ত চার গুণ সড়ক দুর্ঘটনায় নিহতের ৪১ শতাংশ বাইকে

রাজধানীসহ দেশজুড়ে কয়েক বছরে একস্থান থেকে অন্যস্থানে ভাড়ায় কিংবা নিজস্ব চলাচলে বাইকের ব্যবহার বিপুল জনপ্রিয়তা পেয়েছে। এতে গত ১০ বছরের ব্যবধানে বাইক বেড়েছে অন্তত চার গুণ, যা দেশের মোট মোটরযানের প্রায় ৭১ শতাংশ। কিন্তু অসাবধানতাসহ নানা কারণে এ বাহনে অহরহ ঝরছে তাজা প্রাণ। পরিসংখ্যান বলছে, চলতি বছরের গত সাড়ে পাঁচ মাসে বাইক দুর্ঘটনায় এক হাজার ৩৭৪ জন প্রাণ হারিয়েছেন, যা মোট সড়ক দুর্ঘটনায় নিহতের প্রায় ৪১ শতাংশ।

দুর্ঘটনা বিষয়ক গবেষণা প্রতিষ্ঠান রোড সেফটি ফাউন্ডেশন ও বাংলাদেশ যাত্রীকল্যাণ সমিতির পরিসংখ্যান থেকে এসব তথ্য জানা গেছে।

পরিসংখ্যান বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, চলতি বছর জানুয়ারিতে ৬২১টি সড়ক দুর্ঘটনায় ৬০৮ জন প্রাণ হারিয়েছে। এর মধ্যে ২৬৪ জন প্রাণ হারায় বাইক দুর্ঘটনায়, যা মোট নিহতের ৪৩.৪২ শতাংশ। ফেব্রুয়ারি মাসে সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণ হারায় ৫৭৮ জন।

এর মধ্যে বাইক দুর্ঘটনায় প্রাণ হারায় ২২৭ জন, যা মোট নিহতের ৩৯.২৭ শতাংশ। এরপর মার্চ মাসে সড়ক দুর্ঘটনায় ৬১২ জন প্রাণ হারায়। এর মধ্যে বাইক দুর্ঘটনায় প্রাণ হারায় ২৫১ জন, যা নিহতের ৪১.১ শতাংশ। এপ্রিলে সড়কে ঝরেছে ৫৮৮ প্রাণ।
 
এর মধ্যে বাইক দুর্ঘটনায় মারা যায় ২২৯ জন। আর মে মাসে সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণ হারায় ৬১৪ জন। এর মধ্যে বাইক দুর্ঘটনায় প্রাণ হারায় ২৫৬ জন। সর্বশেষ চলতি মাসের প্রথম ১৫ দিনে সড়ক দুর্ঘটনায় ৩৯০ জন প্রাণ হারায়। এর মধ্যে ১৪৭ জন প্রাণ হারায় বাইক দুর্ঘটনায়, যা মোট নিহতের প্রায় ৩৮ শতাংশ।

বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির তথ্য বলছে, ২০১৫ সালে দেশে নিবন্ধিত মোটরবাইকের সংখ্যা ছিল ১২ লাখ। ২০২৫ সালে এসে সেটি দাঁড়িয়েছে ৬০ লাখে। অর্থাৎ গত ১০ বছরে বাইক বৃদ্ধি পেয়েছে চার গুণ। এর বাইরে অনিবন্ধিত বাইকের সংখ্যাও কম নয়। যে হারে বাড়ছে মোটরবাইক, সে হারে দুর্ঘটনাও বাড়ছে বলে জানিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি। এসব দুর্ঘটনার জন্য বেশির ভাগ ক্ষেত্রে দায়ী বাইকের বেপরোয়া গতি, সড়কে শৃঙ্খলার অভাব ও দুর্বল ব্যবস্থাপনা।

জানা গেছে, অধিকাংশ ক্ষেত্রে বাইক দুর্ঘটনা ঘটে বেপরোয়া গতি, পাশ কাটানোর চেষ্টা, বারবার লেন পরিবর্তন, ট্রাফিক আইন না মানা এবং চলন্ত অবস্থায় মুঠোফোনে কথা বলার কারণে। হেলমেট ব্যবহার না করা এবং নিম্নমানের হেলমেটের কারণেও দুর্ঘটনায় প্রাণহানি ঘটছে।

বিশ্লেষকরা বলছেন, বাইকে যাতায়াত এবং যাত্রী পরিবহন দিন দিন ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠছে। এই ঝুঁকি কমাতে হলে ব্যক্তিগত সচেতনতা ও সরকারি—উভয় ক্ষেত্রে কিছু দায়িত্ব সম্পর্কে সচেতন হতে হবে। এর জন্য বাইকচালকদের ট্রাফিক আইন মেনে চলা নিশ্চিত করতে ট্রাফিক পুলিশকে তৎপর হতে হবে। লাইসেন্সহীন ও ত্রুটিপূর্ণ বাইক চালানো সম্পূর্ণ বন্ধ করতে হবে। 

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দেশের সড়কের অবকাঠামো মোটেও স্বস্তির নয়। বিশেষ করে বাইক চালানোর জন্য আলাদা লেন নেই। আবার বাইক চালানোর সময় চালকরা সেফটি গার্ড পরেন না। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, হেলমেটের গুণগতমান যদি ঠিক থাকে, তাহলে দুর্ঘটনায় নিহত হওয়ার ঝুঁকি ৫০ শতাংশ এবং আহত হওয়ার ঝুঁকি ৭০ শতাংশ কমবে।

এদিকে রোড সেফটি ফাউন্ডেশের জরিপ বলছে, গুণগত মানের হেলমেট ব্যবহার করলে ৪৮ শতাংশ দুর্ঘটনা রোধ করা সম্ভব।

বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিব মোজাম্মেল হক চৌধুরী কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘এসব দুর্ঘটনা থেকে বেরিয়ে আসতে চাইলে উন্নত দেশগুলোর মতো বিকল্প সুযোগ-সুবিধা দিয়ে গণপরিহনকে প্রধান্য দিতে হবে এবং ছোট ছোট যানবাহন চলাচলকে নিরুৎসাহিত করতে হবে। অনেক দেশে মোটরবাইক কমিয়ে দুর্ঘটনাও অনেকাংশে কমিয়ে আনা হয়েছে। আমাদের দেশে মোটরবাইক দুর্ঘটনায় নিহতের সংখ্যা মোটামুটি গণমাধ্যমে এলেও আহতের প্রকৃত চিত্র আসে না। এ সংখ্যা উদ্বেগজনক হারে বাড়ছে।’

সড়কে দুর্ঘটনা বাড়ার কারণ হিসেবে রোড সেফটি ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক সাইদুর রহমান কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘মোটরবাইকের বড় একটি অংশ চলে গেছে কিশোরদের (১৪-১৭ বছর) হাতে। তারা বেশির ভাগ সময় নিয়মনীতি না মেনে হেলমেট ছাড়া তিন থেকে চারজন উঠে বেপোরোয়া গতিতে বাইক চালাচ্ছে। এরা কোনো ধরনের ট্রাফিক আইন মানে না। এ ছাড়া অন্যান্য যান যেমন—বাস, ট্রাক, লরি ও পিকআপের বেপোরোয়া গতি, চালকদের বেখেয়ালিপনা এবং সড়কের অব্যবস্থাপনার কারণেও বাইক দুর্ঘটনা বাড়ছে।