
গতকালের পোস্টে বলেছিলাম, “একটা জিনিস প্রমাণ হচ্ছে - কোন দেশের যদি উন্নত মানের পর্যাপ্ত পরিমাণ ফাইটার জেট না থাকে, তাহলে তাদের উন্নতমানের মিসাইল আর এয়ারডিফেন্স সিস্টেম থাকাটা নিজেদের সারভাইবালের জন্য অত্যন্ত জরুরি।”
আজকে তুর্কি প্রেসিডেন্ট এরদোয়ান আঙ্কারায় ক্যাবিনেট বৈঠকের পর টেলিভিশনে দেওয়া ভাষণে এই কথাগুলোই বলেছেন:
“আমরা এখন মাঝারি ও দূরপাল্লার মিসাইল উৎপাদনের পরিকল্পনা করছি, যাতে আমাদের মজুদ একটি বিশ্বাসযোগ্য প্রতিরোধক স্তরে পৌঁছায়। শিগগিরই আমরা এমন প্রতিরক্ষা ক্ষমতায় পৌঁছাবো যা কেউ চ্যালেঞ্জ করার সাহস করবে না। রাজনৈতিক, সামাজিক, অর্থনৈতিক ও সামরিকভাবে শক্তিশালী না হলে প্রতিরোধ ক্ষমতা থাকে না—আর তখন দেশটি ঝুঁকিতে থাকে। জাতি হিসেবে আমরা লজ্জায় বেচে থাকার চাইতে মরতে পছন্দ করি। মাটির নিচে সম্মানের সাথে বিশ্রাম করা মাটির উপরে অসম্মানে বেঁচে থাকার চেয়ে ভালো।”
ওয়ার্ল্ড পলিটিক্স, আন্তর্জাতিক দ্বন্দ, আর যুদ্ধ যেই বুঝে সেই গতকাল এই উপলব্ধিটা করতে পেরেছে। ইরান-ইজরায়েলের এই যুদ্ধ আমাদের তা বুঝিয়ে দিয়েছে।
এই উপলব্ধিটা কিন্তু বাংলাদেশের জন্য অত্যন্ত জরুরি। যখন আপনি আপনার অধিকারের জন্য অন্য দেশের পথের কাটা হয়ে দাঁড়াবেন, নিজ মাটিকে অন্যের ফ্রী রাস্তা হতে দিতে বাধা দিবেন, নিজের ন্যায্য পানি দাবি করবেন, সীমান্তে শান্তি চাইবেন, তখন চেতনা দিয়ে আপনি কিছু করতে পারবেন না। রবীন্দ্র সংগীত গেয়ে আপনি শত্রু হটাতে পারবেন না। যতই আপনি সেক্যুলার হন, আর প্রগতিশীল হন, আপনার অধিকার আপনাকে আদায় করে নিতে হবে। আপনার যত হার্ড পাওয়ার থাকবে, আপনি তত সুরক্ষিত থাকবেন।
আমাদের প্রতিবেশী অত্যন্ত পাওয়ারফুল এবং হস্টাইল। আমাদের দেশের রন্ধ্রে রন্ধ্রে বিজাতীয় গুপ্তচর র ঢুকে বসে আছে। দেশটা এখন কলাবরেটরে ঠাসা। ইসরায়েল যেমন ইরানকে পেনিট্রেট করেছে, ভারতও তেমন আমাদের পেনিট্রেট করে বসে আছে। ইরানের ডেডিকেটেডি রেজিম আছে। তাদের দেশের শাহবাগিগুলো আমাদের দেশের গুলোর মতোই। আমি এসব ক্ষেত্রে দুই দেশের মধ্যে অনেক মিল দেখতে পাই।
কাল যদি ভারত “হিন্দুদের রাইট টু এক্সিস্ট ইন বাংলাদেশ” কার্ড খুব হার্ডকোর ভাবে খেলা শুরু করে বিশ্ব তাকিয়েও দেখবে না। যদিও আমাদের দেশে মাইনোরিটিদের উপর কোনও ডিসক্রিমিনেশন নেই, তারাও ইকুয়াল ধর্মীয় -সামাজিক-রাষ্ট্রীয় অধিকার ভোগ করে। কিন্তু ভারত সেই কার্ড খেলতে চাইলেই খেলবে, রিয়েলিটি ম্যাটার করবে না। সেই ক্ষেত্রে আমাদের স্বাধীন এক্সিস্টেন্স বা স্বাধীনভাবে টিকে থাকা প্রশ্নবোধক হয়ে উঠবে। এটা এখন ফাঁকা কথা নয়, রিয়েলিটি। রাশিয়া ইউক্রেন কে নিজেদের সেইফটির কথাবলে আক্রমণ করেছে, আর ইজরায়েলের গুলো বর্তমানে চোখের সামনেই ঘটছে।
আমাদের কোনও পাওয়ারফুল ডেডিকেটেডে বন্ধু রাষ্ট্র নাই, যারা আমাদের বিপদে আমাদের গোপনে অস্ত্র সাপ্লাই দিবে, মিসাইল তো দূর কি বাত। অথচ, আমাদের বাচ্চা বাচ্চা দের এখন বোঝা উচিত যে দেশের প্রতিরক্ষা খাতকে এক্সেলারেটেড ভাবে এগিয়ে নিতে না পারলে আমরা ধ্বংসের দোরগোড়ায় বসে যাচ্ছি।
এই যুগে, শান্তি ও স্থিতিশীলতা রক্ষায় শক্তিশালী সামরিক সক্ষমতা অপরিহার্য। কাউকে আক্রমণ করার জন্য নয়, নিজেদের প্রতিরক্ষা করার জন্য। উন্নত প্রযুক্তি, প্রশিক্ষিত বাহিনী, এবং কৌশলগত প্রস্তুতি আমাদের সার্বভৌমত্বের অন্যতম প্রধান ঢাল।
সাবিনা আহমেদ